রাষ্ট্র যেভাবে ‘বিরোধীদের’ বিদেশ থেকে আটক করে
ফ্রিডম হাউস বলছে, বিরোধীদের বিদেশ থেকে ধরে নানাভাবে শায়েস্তা করে বিভিন্ন দেশের সরকার৷ কোনো কোনো দেশ গোপনে গোয়েন্দা অভিযান চালায় অন্য দেশে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অপহরণ, এমনকি হত্যাও করে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত
২০২০ সালে নিখোঁজ হন ওরহান ইনান্দি৷ কিরগিস্তানের রাজধানী বিশেকে তুর্কি-কিরগিজ এই শিক্ষাবিদের গাড়ির দরজা ছিল খোলা৷ হঠাৎ উধাও হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছিল ইনান্দিকে হয়ত অপহরণ করা হয়েছে৷ সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়েছেন, গুলেনপন্থি হিসেবে পরিচিত ইনান্দিকে তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি আটক করেছে৷ পরে ইনান্দির স্ত্রী জানান, তার স্বামীর ডান হাতের তিনটি অংশ পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে৷
বিদেশে ‘বিরোধী’ নির্যাতনে ৩১ দেশ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ফ্রিডম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের মোট ৩১টি দেশ বিদেশে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বী নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচক নাগরিকদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি হত্যাও করা হয়েছে৷
তালিকার শীর্ষে যারা
অপহরণ, আটক, গোয়েন্দা সংস্থার অভিযান পরিচালনা, হত্যা, সহিংস হামলা, প্রত্যর্পণ, দমন-নিপীড়ন এবং গুম- বিদেশে অবস্থানরত ‘বিরোধীদের’ বিরুদ্ধে এসবের যে-কোনো একটি করেছে, এমন ৩১টি দেশের নামের তালিকা দিয়েছে ফ্রিডম হাউস৷ সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন, উজবেকিস্তান, রুয়ান্ডা, রাশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, মিশর, সৌদি আরব, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, ইথিওপিয়া এবং লিবিয়া৷
বিদেশ থেকে বিরোধীদের ধরা সহজ!
ফ্রিডম হাউসের বিশেষজ্ঞ ইসাবেল লিনৎসার বলেন, কাউকে বিদেশ থেকে ধরে আনা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ নজরদারি করে, গোয়েন্দাদের কাজে লাগিয়ে বিদেশের মাটিতে কারো ওপর হামলা চালানো বা তাকে ধরে এনে নির্যাতন চালানো এখন আর অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়৷
সাত বছরে ৬০৭ জন
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬০৭ জন মানুষ নিজের দেশের বাইরে খুন,অপহরণ অথবা অন্য ধরনের হামলার শিকার হয়েছেন৷ তবে লিনৎসার মনে করেন প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি৷
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে সবচেয়ে পটু তিন দেশ
অন্য দেশে ঢুকে নিজেদের নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলা চালায় চীন, তুরস্ক এবং মিশর৷ তবে এর বাইরেও অনেক দেশই যে এমনটি করে, তা মনে করাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনেছে ফ্রিডম হাউস৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওয়ার অন টেরর’-এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রও বেশ কয়েকবার এমনটি করেছে৷ উদাহরন হিসেবে খালেদ আল মাসরিকে অপহরণ করে সিআইএ-র নির্যাতন এবং জুলিয়ান আসাঞ্জকে হত্যার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
চীনের উইগুর-দমন কৌশল
বিদেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলায় সবচেয়ে সক্রিয় চীন৷ সাম্প্রতিক সময়ে চীন উইগুরদের ওপরই এমন হামলা সবচেয়ে বেশি চালিয়েছে৷ এ কাজে চীন সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের সহায়তা নিয়ে থাকে৷ সেই ব্যক্তি কোন দেশে আছে তা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানার পর তাকে ধরতে সেই দেশের সহায়তা চাওয়া হয়৷ থাইল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নেয়৷ তারপর তাকে ফিরিয়ে দেয় চীনে৷
বিদেশ থেকে অপহরণে এগিয়ে তুরস্ক
ইসাবেল লিনৎসার জানান, ফ্রিডম হাউসের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ থেকে ভিন্নমতাবলম্বীদের সবচেয়ে বেশি অপহরণ করেছে তুরস্ক৷ তুরস্কের পরই রয়েছে মিশর৷ তিনি আরো জানান, তুরস্ক সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটির মাধ্যমে গোপনে, অবৈধভাবেই কাজটি সম্পন্ন করে৷ জাতিসংঘের তদন্তকারীরা ইতিমধ্যে তুরস্ককে বিদেশে এমন গোপন অভিযান পরিচালনা বন্ধ করতে বলেছে৷