1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খুনিদের ফাঁসি মকুব

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের তিন অপরাধীর ফাঁসি মকুব করে মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারকের এক বেঞ্চ৷ আসামিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন ঝুলেছিল এ যাবৎ৷

https://p.dw.com/p/1BB09
ছবি: picture-alliance/united archives

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের এ যেন পুনর্জন্ম৷ খুনের অপরাধে তিনজন আসামির ফাঁসির সাজা হয়৷ কিন্তু আসামিরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করে আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগে৷ কিন্তু সেই আবেদন অযৌক্তিকভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয় এতদিন৷ সিদ্ধান্ত নিতে অহেতুক এবং অত্যধিক বিলম্বের কারণে মঙ্গলবার ফাঁসির আদেশ রদ করে আসামিদের আজীবন কারাবাসের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পি. সদাশিবমের নেতৃত্বে গঠিত তিন বিচারকের এক বেঞ্চ৷ মার্জনার আবেদন বিবেচনায় অহেতুক বিলম্বের যুক্তি অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সওয়াল করা হয়, এমন অযৌক্তিক বিলম্ব করা হয়নি যাতে ফাঁসি রদ হয়ে যাবজ্জীবন হতে পারে৷

সরকারের দাবি, আসামিরা জেলের ভেতরে বহাল তবিয়তে ছিল৷ গঠনমূলক কাজেও তাদের যুক্ত রাখা হয়৷ এছাড়া, তাদের ওপর কোনোরকম শারিরীক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি৷ আসামি পক্ষের বর্ষিয়ান আইনজীবী রাম জেঠমালানি সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদ তুলে ধরে বলেন, এটা জীবনের অধিকারের পরিপন্থি৷ শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ কেন্দ্রের তরফে দেয়া আত্মপক্ষ সমর্থনের সব যুক্তি অবশ্য সরাসরি খারিজ করে দেয়৷

শুধু তাই নয়, বলা হয় যে এবার থেকে রাষ্ট্রপতিকে কেন্দ্র যেন সময় থাকতে পরামর্শ দেন এবং প্রাণভিক্ষার আবেদন অযথা প্রলম্বিত না করে একটা যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে যেন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় – এই মর্মেই নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷ মার্জনা আবেদনের সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু ও সমন্বিতভাবে এবং যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে নেবার একটা নির্দেশিকা তৈরি করার জন্যও কার্যনির্বাহীদের বলে শীর্ষ আদালত৷

Oberstes Gericht Delhi Indien
ফাঁসির আদেশ রদ করে আসামিদের আজীবন কারাবাসের রায় দেয়া হয়ছবি: picture-alliance/dpa

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২১শে জানুয়ারি এই অযৌক্তিক বিলম্বের কারণে ১৫ জন ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামির প্রাণদণ্ড মকুব করে যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ দেয়া হয়৷ শীর্ষ আদালত মনে করে, ফাঁসির আসামি দীর্ঘকাল জেলের নির্জন সেলে বন্দি থেকে মৃত্যুর জন্য প্রতিটি প্রহর গুণতে গুণতে মানসিক দিক থেকে বিধ্বস্ত হয়ে নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাতে থাকে৷ তাই তাদের ফাঁসি রদ করার সব আবেদন-নিবেদন ব্যর্থ হলে, তিলে তিলে মৃত্যুর চেয়ে যেন ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করা হয়৷

১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরাম্বুদুরে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গেলে আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন রাজীব গান্ধী৷ সন্ত্রাস ও অন্তর্ঘাত কার্যকলাপ সংক্রান্ত বিশেষ আদালত ‘টাডা' তিনজন অপরাধী সন্থান, মুরুগান ও পেরারিভালনের ফাঁসির আদেশ দেয় ১৯৯৮ সালে৷ এরপর সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রাখে ১৯৯৯ সালে৷

তামিলনাড়ুর সব রাজনৈতিক দল সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানায়৷ ডিএমকে দলের ‘সুপ্রিমো' করুণানিধি বলেন, আরো ভালো হয় যদি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার তাদের মুক্তি দেয়৷ ডিএমকে সরকারের আমলে কিছু ফাঁসির আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল৷ এই দল মনে করে, দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে তারা জেলবন্দি৷ যথেষ্ট শাস্তি তারা পেয়েছে৷ তাই এবার, সুপ্রিম কোর্টের রায় মাথায় রেখে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৩২ ধারায় তাদের মুক্তি দেয়া উচিত৷ কংগ্রেসের তরফে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি৷

ভারতে ফাঁসির বিধান সম্পূর্ণ তুলে দেয়া উচিত কিনা – তা নিয়ে বিতর্ক অবশ্য থামেনি৷ মানবাধিকারবাদীদের মতে, ফাঁসির ভয়ে সমাজ থেকে অপরাধ কমে যায়নি, যায় না৷ তাহলে এই শাস্তির যৌক্তিকতা কোথায়? আসামিদের নতুন করে বাঁচার সুযোগ দেয়া উচিত নয় কি? তাঁদের কথায়, ফাঁসি অমানবিক এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতা৷ তবে অন্যপক্ষ বলছেন, বিরলতম বিরল ক্ষেত্রেই ফাঁসির সাজা হয়৷ জঘন্যতম অপরাধিদের সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়া সমাজের পক্ষে অবিচার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য