1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনৈতিক দলের প্রবাস শাখার কাজ কী?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ ডিসেম্বর ২০১৯

নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো  রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা বা অফিস থাকতে পারবে না৷ তারপরও আওয়ামী লীগ ও বিনএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের বিদেশ শাখা আছে৷ তাদের কাজ কী?

https://p.dw.com/p/3V7yT
ছবি: bdnews24.com

রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রেও বিদেশ শাখা বলতে কিছু নেই৷ ফলে এইসব শাখার মর্যাদা কী তা-ও স্পষ্ট নয়৷ যদিও বিদেশ শাখার নেতারা দাবি করেন, তারা জেলা কমিটির মর্যাদা পান৷ তাদের বিভাগীয় কমিটির মর্যাদা দেয়ার দাবিও তুলেছেন প্রবাসী কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা৷

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা সবচেয়ে প্রাচীন এবং শক্তিশালী৷আর বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করায় তাকে কেন্দ্র করে সেখানকার বিএনপি খুবই তৎপর৷ তবে আওয়ামী লীগের তৎপরতাও কোনো অংশে কম নয়৷ যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সভাপতি এম এ মালেক দাবি করেন, ‘‘আমাদের এখানে আওয়ামী লীগকে আমরা কোণঠাসা করে রেখেছি৷'' তবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, যুক্তরাজ্যে তারা আসলে শক্তিশালী নয়৷

যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক তরুণ জানান, ‘‘আসলে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই সবচেয়ে বেশি তৎপর৷ আগে বিএনপি শেখ হাসিনার সফরের সময় প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করত৷ তবে এখন এই প্রবণতা কমেছে৷''

ইউরোপ ও অ্যামেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সৌদি আরবে প্রবাসীদের রাজনীতির প্রতি ঝোঁক বেশি৷

এম এ মালেক

প্রবাস রাজনীতির আসল উদ্দেশ্য কী?

আলহাজ্ব রহিমুদ্দিন এখন নোয়াখালীর সংসদ সদস্য৷ তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরব আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন৷  দেশে ফিরে গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে  ফেনী এলাকার সংসদ সদস্য হয়েছেন৷ এমন আরো অনেকে আছেন যারা প্রবাসে রাজনীতি করে পরে দেশে ফিরে সংসদ সদস্য বা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়েছেন৷ রহিমুদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা রেমিটেন্স পাঠাই৷ বিনিময়ে কিছু নিই না৷ তাই আমরা আমাদের অধিকারের জন্য রাজনীতি করি৷'' তিনি জানান, সৌদি আরবে রাজতন্ত্র থাকায় সেখানে রাজনীতি করা যায় না, তাই আওয়ামী পরিষদ নামে তারা কাজ করেন৷

তিনি আরো জানান, সৌদি আরবে দলের কোনো নেতা গেলে তাদের দেখভাল তারাই করেন৷ সংবর্ধনা দেন৷ তার দাবি, সৌদি আরবে আওয়ামী লীগকে তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ আগে বিএনপির প্রভাব ছিল৷ তাই পুরস্কার হিসেবে তাকে সংসদ সদস্য করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি৷

সৌদি আরব আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি কাজী গোলাম সালাহউদ্দিন নওফেল বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশিরা রাজনীতিপ্রিয়৷ তাই যেখানেই থাকি রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকতে চাই৷ আমাদের নেতারা আসেন, তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তা আমরা দেখি৷ আমরা দেশে গেলে তারাও ইজ্জত করেন৷''

যেবে তারা কাজ করে:

রাজনৈতিক দলের প্রবাসী শাখাগুলো মূলত বিভিন্ন দিবসে সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে৷ তারা বিজয়দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালন করে বেশ বড় করে৷ আর দলীয় নেতাদের নিয়েও নানা দিনের কর্মসূচি পালন করে৷ তাদের মূল টার্গেট থাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা৷

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের শাখা কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নাম দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ইনকর্পোরেশন৷ এই নামে আমরা রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছি৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে তুলে ধরি৷ দলের জন্য কাজ করি৷''

সিদ্দিকুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি ও জাসদসহ আরো কিছু রাজনৈতিক দলের শাখা আছে বলে জানান তিনি৷ তবে তিনি এ-ও জানান, বাংলাদেশের মতো ভারত, পাকিস্তান বা অন্য কোনো দেশের রাজনৈতিক দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখা নেই৷

যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘‘আমরা সভা-সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি নিই৷ এটা হলেই চলে৷ আর কোনো পারমিশন লাগে না৷ আমরা দেশে যে অন্যায়-অবিচার হয়, তা তুলে ধরি৷''

কোনো দলের বিদেশে শাখা বা অফিস করার বিধান না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আইন দিয়ে কি ভালোবাসা বন্ধ করা যায়? আমরা এখানে বিএনপি করলে কার কী করার আছে? মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফান্ড কালেকশন হয়েছে কোন আইনে?''

যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে শুধু মূল দল নয়, ওইসব দেশে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনেরও শাখা রয়ছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সেখানে গিয়ে রীতিমতো কাউন্সিল করে কমিটি গঠন করে দেন৷ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্টেটেও তাদের কমিটি আছে৷

তবে সমস্যা হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের এইসব প্রবাস শাখা মাঝে মাঝে সংঘর্ষ ও বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে৷ তাতে সেখানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়৷ বিএনপি'র সভাপতি এম এ মালেক অভিযোগ করেন, ‘‘আমাকে এখানে বারবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ ফ্রান্স, ইতালিতেও আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে৷ আমি পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছি৷''

তবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো সমস্যা হয় না৷ আমরা যার যার মতো কর্মসূচি পালন করি৷''

রাজনৈতিক দলের এই প্রবাস শাখা নিয়ে ঢাকায় রাজনৈতিক নেতারা বলেন, গঠনতন্ত্রে স্বীকৃতি না থাকলেও তারা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম।

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য