1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতিবিদদের হলফনামা থেকে কিছু অনুমান করা যায় না

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩

ভোট লড়লে হলফনামা দিতে হয় প্রার্থীদের। আর তাদের সেই হলফনামায় সম্পদ বেড়ে যাওয়ার হিসাব দেখে নানা প্রশ্ন ওঠে।

https://p.dw.com/p/4aDja
সিপিআইএম-এর সমাবেশ
সাংসদ বা বিধায়ক হলে অন্য কোনো জায়গা থেকে সরকারি অর্থ নেয়া যায় না, লিখেছেন গৌতম হোড়ছবি: Debajyoti Chakraborty/NurPhoto/picture alliance

ভারতে অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর বলে একটি অলাভজনক সংস্থা আছে। প্রতিটি লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে তারা নিয়ম করে দুইটি কাজ করে। সব প্রার্থীর হলফনামা খতিয়ে দেখে পাঁচ বছরে তাদের কার কত সম্পদ বেড়েছে তার হিসাব দেয় এবং কার বিরুদ্ধে কী ধরনের অপরাধের অভিযোগ আছে, সে ব্যাপারে রিপোর্ট দেয়।

এই যে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেল, তাতে এডিআরের রিপোর্ট ছিল, ১৯২ জন বিধায়ক আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মধ্যে ১৮০ জনের হলফনামা খতিয়ে দেখে তারা জানিয়েছে, তাদের সম্পদ এক শতাংশ থেকে এক হাজার ৯৮২ শতাংশ বেড়েছে। ১২ জন বিধায়কের সম্পদের পরিমাণ কমেছে। গড় করলে এই বিধায়কদের সম্পত্তির পরিমাণ ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে এই গড় বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে  বিজেপি প্রার্থী চেতন্য কাশ্য়পের সম্পদ বেড়েছে ৯১ কোটি ৪৫ লাখ, কংগ্রেসের সঞ্জু শর্মার বেড়েছে ৮১ কোটি ৫৫ লাখ, কংগ্রেসেরই সঞ্জয় শুক্লার বেড়েছে ৭৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

প্রথম দৃষ্টিতে এই সম্পদ বাড়ার পরিমাণ দেখলে চমকে উঠতে হয়। মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দেয়, এত টাকা পাঁচ বছরে একজন রাজনীতিবিদের কী করে বাড়তে পারে? কিন্তু এর ব্যাখ্যাটা একবার জেনে নিলে, অনেক ভুল ধারণাই কেটে যেতে পারে। যেমন, কোনো প্রার্থীর যদি কোনো বাড়ি বা জমি থাকে, তাহলে তার দাম বাড়ে।  দিল্লি শহরে পাঁচ বছর আগে একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের যা দাম ছিল, আজ তো তা থাকবে না। তার দাম অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। পাঁচ বছর আগে সোনার গয়নার যে দাম ছিল, এখন তা বেড়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। তার উপর এই সাংসদ বা বিধায়কদের অনেকেরই নিজের ব্যবসা আছে। অনেকে আইনজীবী, সিএ বা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। সাংসদ বা বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাদের সেসব ছাড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তারা ছাড়েনও না। তাছাড়া সাংসদ বা বিধায়ক হিসাবে তারা ভালো বেতন ও ভাতাও পান।

ফলে নিজেদের ব্যবসা, পেশা থেকে তারা যথেষ্ট রোজগার করেন। তাই তাদের সম্পদও বাড়ে। নিয়ম হলো সাংসদ বা বিধায়ক হলে অন্য কোনো জায়গা থেকে সরকারি অর্থ নেয়া যায় না। যেমন তৃণমূলের বিধায়ক মালা রায় রলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলার। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরেই তিনি হলফনামা দিয়ে জানিয়ে দেন, কাউন্সিলার হিসাবে কোনো অর্থ বা পার্কস তিনি নেবেন না। তৃণমূলের সাবেক সাংসদ অর্পিতা ঘোষ নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা। সংস্কৃতি মন্ত্রক এই নাট্যকর্মীদের বছরে ছয় হাজার টাকা দেয়। তিনিও জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন না।

কপিল সিবাল, অভিষেক মণু সিংভি, পি চিদম্বরম, মনীশ তিওয়ারিরা সকলেই কংগ্রেসের সাংসদ, কিন্তু তারা পুরোদমে আইনজীবী হিসাবে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। এই যে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল, তাতে আবেদনকারীর আইনজীবী হিসাবে লড়েছিলেোন কপিল সিবাল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে প্রায়ই সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়তে দেখা য়ায় অভিষেক সিংভিকে। গতবছর তো পি চিদম্বরম কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছিলেন, তারই দলের লোকসভার নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর করা একটা জনস্বার্থ মামলায় বিরুদ্ধ পক্ষের আইনজীবী হিসাবে। এই নিয়ে অধীর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও জানান। তবে এক্ষেত্রে আইনজীবী-রাজনীতিকদের একটা যুক্তি আছে। তাদের আইনি পেশাটাই এরকম। তারা মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিকে তার মধ্যে আনেন না। আগে বিজেপি-র রাজনীতিক-আইনজীবীদেরও এই বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল।

তবে মন্ত্রী হলে অবশ্য তারা কোনো পেশার সঙ্গে জড়িত থাকেন না। থাকলে স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে। চিদম্বরম, কপিল সিবাল, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজরা যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখন তাদের আদালতের ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি। অরুণ জেটলি তো রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হওয়ার পরই কোর্টে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

মন্ত্রী থাকা ও সাধারণভাবে সাংসদ বা বিধায়ক থাকার মধ্যে অনেক ফারাক। মন্ত্রী হলে তার পক্ষে সরাসরি ব্যবসা করা, শিল্পসংস্থায় থাকা, কোনো পেশায় থাকা সম্ভব নয়। তারা থাকেনও না। কিন্তু সাংসদ বা বিধায়ক হিসাবে থাকতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটা ভয়ংকর বিতর্ক ও তদন্তের মুখে পড়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ২০২১ সালে তাকে রাজ্য সরকার একটি খনি লিজে দেয়। আর সেখানে পরিবেশমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনই তার ছাড়পত্র দেন। বিষয়টি এখন নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখছে। সোরেনের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ইডি তদন্ত করে দেখছে।

সবচেয়ে বড় কথা, প্রার্থী হিসাবে যারা হলফনামা দেন, সম্পত্তির হিসাব দেয়ার পাশাপাশি তারা আয়কর রিটার্নও জমা দেন। সেখানে তাদের আয় ও ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণ থাকে। ফলে কোনোরকম অসঙ্গতি থাকলে আয়কর দপ্তর তাকে চেপে ধরবে।  রাজনীতিকরা হলফনামায় যে সম্পদ বাড়ার বিবরণ দেন, তা সকলের সামনে থাকে। আয়করের কাছেও থাকে। ফলে তাদের সম্পদ অনেকটাই বাড়তে পারে। কিন্তু কেন সম্পদ বেড়েছে, কোথা থেকে বেড়েছে, তার হিসাবও তারা দিয়ে দেন। ফলে এই হলফনামা থেকে রাজনীতিকদের সম্পদ নিয়ে খুব বেশি কিছু অনুমান করা সম্ভব নয়।

এরপরেও রাজনীতিকদের কাছ থেকে, সাংসদ, বিধায়ক, নেতা বা তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার হতে দেখা যায়।  এই তো দিনকয়েক আগেই ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেসের সাংসদ ধীরজ সাহুর বাড়ি থেকে ৩৫৩ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে টাকা গোনার জন্য আনা হয়েছিল ৪০টা মেশিন। আলমারি ও বাক্সে সাজানো ছিল সারি সারি নোট। কলকাতাতেও সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এক অভিনেত্রীর বাড়ি থেকেও থরে থরে নোট উদ্ধার করা হয়েছিল। এরকম ঘটনা মাঝেমধ্যেই সামনে আসে। তা এই সব টাকার হিসাব তো আর হলফনামায় পাওয়া যায় না। ফলে হলফনামায় সম্পত্তি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে খুব বেশি অবাক হওয়ার বা রাজনীতিকদের দুর্নীতি সম্পর্কে কোনো ধারণা করা সম্ভব নয়। তার জন্য অন্য মাপকাঠি আছে। হামেশাই অভিযোগ ওঠে, রাজনীতিকরা নিজেদের নামে কম সম্পত্তিই রাখেন, বেনামে অনেকে প্রচুর সম্পদ করেন। তবে সেসব যতক্ষণ তদন্তে প্রকাশ না পাচ্ছে, ততক্ষণ মানুষের সামনে আসে না।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য