1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতি না সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা?

১২ জানুয়ারি ২০১৮

ড্যুসেলডর্ফের গবেষকরা জরিপ করে দেখেছেন যে, আজকাল রাজনীতিতেও সুন্দর মুখের জয়৷ ‘সুশ্রী' প্রার্থীরা নাকি অপেক্ষাকৃত ‘কুশ্রী' প্রার্থীদের চেয়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পাবার আশা করতে পারেন৷

https://p.dw.com/p/2qjcV
Sarah Wagenknecht, Christian Lindner, Alice Weidel

অধ্যাপক উলরিশ রোজার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ২০০২ সালে৷ ড্যুসেলডর্ফের সমাজতত্ত্ববিদরা সেই গবেষণাই আরো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দেখেছেন যে, জার্মানিতে গত সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের ‘সুশ্রীতা' বা ‘কুশ্রীতা' ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে৷ বলতে কি, এর আগের কোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের ‘চেহারা' এই পরিমাণ গুরুত্ব পায়নি৷

প্রার্থীর দলগত আনুগত্য বা নীতি আজও ভোট পাওয়া-না-পাওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলেও, গবেষকরা তাঁদের জরিপে ওই দু'টি উপাদান বাদ দিয়েছেন৷

গবেষক দলের লেনা মার্শের বিবৃতি অনুযায়ী, মুখ্য রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রথম দশজনের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বিরোধী বামদলের সাহরা ভাগেনক্নেশ্ট৷ 

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ভোট অনুযায়ী, বিশিষ্ট রাজনীতিকদের মধ্যে চিত্তগ্রাহীতায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার, যিনি গত নভেম্বর মাসে তথাকথিত জামাইকা জোট সৃষ্টির পথে বাদ সাধেন৷

তৃতীয় স্থানে রয়েছেন উগ্র দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের আলিস ভাইডেল৷ সামাজিক গণতন্ত্রী মার্টিন শুলৎস ও রক্ষণশীল চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রয়েছেন যথাক্রমে অষ্টম ও নবম স্থানে – এই দু'টি দল আপাতত জোট সরকার গঠনের জন্য আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে৷

সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে যে দু'জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন, তাঁরা ফেডারাল পর্যায়ে বিশেষ পরিচিত নন৷ তাঁরা হলেন হেসে রাজ্যের ভাল্ডেক থেকে আগত এএফডি প্রার্থী ইয়ান রাল্ফ নল্টে ও ডর্টমুন্ড শহরের একটি নির্বাচনি এলাকায় বামদলের প্রার্থী সেলিনে এর্লেনহোফার৷

সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় বিশেষ হেরফের নেই

ড্যুসেলডর্ফের গবেষকরা বলেছেন যে, জরিপে সংশ্লিষ্ট ১২ জন মহিলা ও ১২ জন পুরুষের মধ্যে সুশ্রীতা বা কুশ্রীতার মাপকাঠি সম্পর্কে বিশেষ পার্থক্য নেই৷ ২৪শে সেপ্টেম্বর জার্মান বুন্ডেস্টাগের নির্বাচনের ১,৭৮৬ জন প্রার্থীর ছবি দেখিয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বাছাই করতে বলা হয়েছিল, কে বা কাদের তাঁরা সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মনে করেন৷ সমাজতত্ত্ববিদ মার্শ বলেছেন, যেসব প্রার্থী আগে থেকেই সুপরিচিত ছিলেন, তাঁরা এই জরিপে কিছুটা সুবিধা পেয়ে থাকতে পারেন৷ অপরদিকে শিক্ষার মান, অভিবাসনের পটভূমি, অথবা নারী কিংবা পুরুষ, এ সবের কোনো কিছুই আকর্ষণীয়তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়নি৷

গতবছর প্রফেসর রোজার কোলনের ‘রুন্ডশাউ' পত্রিকাকে বলেন যে, মানুষ ‘খুবই অনুরূপ' প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে থাকেন ও আকর্ষণীয়তার ক্ষেত্রে একই ধরণের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সন্ধান করেন, ‘‘যেমন, আমরা সবাই জুলিয়া রবার্টসকে খুবই আকর্ষণীয় মনে করি৷''

Lena Masch, wiss. Mitarbeiterin der Heinrich Heine Universität Düsseldorf
লেনা মার্শছবি: privat

‘‘অন্য সব উপাদান সমান হলে, একজন বিশেষভাবে আকর্ষণীয় প্রার্থী একজন বিশেষভাবে অনাকর্ষণীয় প্রার্থীর চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি সরাসরি ভোট প্রত্যাশা করতে পারেন'' – একজন স্থানীয় প্রার্থী ও দলীয় তালিকার এক প্রার্থীর দৃষ্টান্ত দিয়ে মার্শ মন্তব্য করেন৷

যেসব দলীয় তালিকার প্রার্থীরা বিশেষ আকর্ষণীয় বলে গণ্য হন, সেইসব তালিকা তিন শতাংশ অবধি বেশি ভোট পেয়ে থাকে বলে মার্শ জানান৷

অবচেতন যখন ভোট দিতে যায়...

যেসব নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থীরা বেশি আকর্ষণীয় বলে গণ্য হন, সেখানে দৃশ্যত অনেক বেশি ভোটার ভোট দিতে যান৷ এই প্রসঙ্গে চাক্ষুষ প্রতীক অধ্যুষিত মাল্টিমিডিয়ার দুনিয়ায় অবচেতন যে তার ছাপ রেখে যেতে বাধ্য, মার্শ সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন৷

‘‘যখন কোনো প্রার্থীকে স্বাস্থ্যবান, আকর্ষণীয় ও শারীরিকভাবে পটু বলে মনে হয়, তখন ভোটাররা তাকে সরকারি কাজকর্মের জন্য যোগ্যতর বলে গণ্য করেন৷ কোনো প্রার্থী অগোছালো বা কুশ্রী হলে, ভোটাররা তাকে কম দক্ষ বলে মনে করেন,'' মার্শ জানান৷

প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আকর্ষণীয়তা-অনাকর্ষণীয়তা অধিকতর গুরুত্ব পাওয়ার আরেকটি কারণ সম্ভবত এই যে, রাজনৈতিক দলগুলি আর কোনো বাঁধা নীতির সঙ্গে যুক্ত নয় – যেমন প্রকৃতি সংরক্ষণ আর জার্মানির সবুজদের পেটোয়া নয়৷ কাজেই:

‘‘আমরা এমন একটা যুগে বাস করছি, যখন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা ব্যক্তিগত চেহারা নিতে চলেছে৷''

এসি/এসিবি (ডিপিএ)