1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রক্ষাকারী উল্টো পুলিশি হয়রানির শিকার হন’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ জুন ২০১৯

বরগুনার রিফাত হত্যার পর আবারও আলোচনায় একটি প্রশ্ন৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ কেউ ঘটনার ভিডিও ধারণ করলেও আক্রান্তকে রক্ষায় এগিয়ে যান না৷ এর কারণ কি শুধুই হামলাকারীর ভয়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা৷

https://p.dw.com/p/3LKf7
প্রত্যক্ষদর্শীরা কেন আক্রান্তকে রক্ষায় এগিয়ে যান না?ছবি: picture-alliance/E.Topcu

রিফাতকে বুধবার সকালে দৃর্বৃত্তরা তাঁর স্ত্রীর সামনেই প্রকাশ্যে আক্রমণ করে৷ স্ত্রী তাঁকে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন৷ এই ঘটনার ভিডিও মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেছেন কেউ একজন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হলে মুহূর্তের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়৷ মূলধারার সংবাদ মাধ্যমও গুরুত্বের সঙ্গে খবর পরিবেশন করে৷ পুলিশের টনক নড়ে, মন্ত্রীরা কথা বলেন৷ এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন

তবে রিফাতের স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি বলেছেন, ‘‘সেখানে অনেকে থাকলেও, বাঁচানোর আকুতি জানালেও কেউ এগিয়ে আসেননি৷''

একইভাবে ২০১৬ সালে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে প্রকাশ্যে কোপানো হয়৷ সেই ঘটনারও ভিডিও ধারণ করেছিলেন একজন৷ ভাইরাল ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ বদরুলকে গ্রেপ্তার করে৷ একইভাবে বিশ্বজিৎকে পুরনো ঢাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ ব্লগার অভিজিৎ রায়কেও প্রকাশ্যে কোপানো হয়৷ প্রকাশ্যেই কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় লেখক হুমায়ূন আজাদকেও৷

অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বুল বুল

এই সব ঘটনাতেই প্রতক্ষদর্শী অনেকে ছবি তুললেও কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে যাননি৷ কিন্তু কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম এজন্য দোষ দিচ্ছেন মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত আমাদের সমাজ থেকে মানবিকতা অনেক দূরে চলে গেছে৷ এখন শিক্ষায় কোনো মানবিক বা নৈতিক পাঠ নেই৷ অভিভাবকরাও তাঁদের সন্তানদের প্রতিবাদ করার পরিবর্তে নিজেকে রক্ষা বা বাঁচানোর কথা বলেন৷ আর এটা হয়েছে নিরাপত্তা ও বিচারহীনতার কারণে৷ এখানে এখন প্রতিবাদ করলে, কোনো বিপদগ্রস্তকে উদ্ধার করলে উল্টো নিজে বিপদে পড়তে হয়৷''

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বুল বুল বলেন, ‘‘কেউ যদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বা বিপদে পড়েন তখন যারা তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে যান, তাঁদের শতকরা ৯৯ ভাগ উল্টো পুলিশি হয়রানির শিকার হন৷ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হরে দরে আটক করে৷ কে অপরাধী আর কে উদ্ধারকারী তা দেখেনা৷ এরপর শুরু হয় বাণিজ্য৷ অপরাধীরা অনেক ক্ষমতাবান৷ কেউ এগিয়ে গেলে তাকেও শেষ করে দিতে পারে তারা৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘এই যখন পরিস্থিতি, তখন দূরে থেকে ঘটনার ভিডিও করাও একটা সাহসের কাজ৷ এর মাধ্যমে অন্তত অপরাধী চিহ্নিত হয়৷ বিচার পাওয়া যায়৷ রিফাতের ঘটনার ভিডিও যদি না থাকতো, তাহলে এটা ধামাচাপা পড়ে যেত৷'''

ড. জিয়া রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করেন, ‘‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে- এই আদর্শ নগর সভ্যতায় আর নেই৷ এটা থাকা সম্ভবও নয়৷ এখানে রাষ্ট্র ও সরকারকে ভূমিকা পালন করতে হবে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলে ৯১১-এ ফোন করে দিতো, সাথে সাথে পুলিশ এসে পড়তো৷ আমাদের এখানে ৯৯৯ আছে কিন্তু সাধারণ মানুষ তত জানেনা৷ যদি রিফাতকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে যেতেন, তিনিও হত্যার শিকার হতে পারতেন৷ আবার যারা অপরাধী তারাও গণপিটুনিতে নিহত হতে পারত৷ তখন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রশ্ন উঠতো৷ এখন মানুষ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি ভাবে৷ সে নিজে নিরাপদ থাকতে চায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘ভিডিও করার ঘটনা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের উন্নত দেশেও ঘটে৷ নিজে নিরাপদ থেকে ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরার এই প্রবণতা খারাপ নয়, বরং আমি এটাকে ভালো মনে করি৷ এর মাধ্যমে অপরাধীদের চিাহ্নত করা যায়৷ এর ফলেই আমরা রাজিব ও রাকিব হত্যার বিচার অনেক দ্রুত হতে দেখেছি৷''

বাংলাদেশে আলাদাভাবে সাক্ষী সুরক্ষা আইন নেই৷ বিভিন্ন আইনের মধ্যে যেটুকু সুরক্ষা আছে তার সুবিধাও সাক্ষীরা পান না৷ মামলায় ভিডিও সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের সুযোগ আছে৷ তবে অডিও গ্রহণ করা হয়না বলে আইনজীবীরা জানান৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য