রক্ষণশীলদের জয়, বামপন্থিদের হার?
১৩ জানুয়ারি ২০১৮প্রায় টানা একদিন দর কষাকষির পর শেষ পর্যন্ত শুক্রবার জার্মানির দুই বড় দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসপিডি) ঘোষণা দেয়, যে আলোচনা অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে৷
এতে করে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট সরকার গঠনের পথে আলোচনার পথ খুলল৷ সব পরিকল্পনা মতো এগুলে শিগগিরই নতুন মহাজোট সরকার দেখতে পাবেন জার্মানরা৷
সবদিক থেকে দেখলে ম্যারাথন এ আলোচনার পর মুখের হাসি সবচেয়ে চওড়া হয়েছে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের৷ কারণ, তাঁর হাতে অন্য যে দু'টি উপায় ছিল সেগুলো হলো, হয় পার্লামেন্টে সংখ্যালঘুদের নিয়ে এক নড়বড়ে সরকার গঠন করা, নয়তো আবারো নির্বাচন করা৷
এসপিডির বামপন্থিদের পরাজয়
দীর্ঘ এই আলোচনার ফলাফল ২৮ পৃষ্ঠার একটি সম্মতিপত্র, যেখানে দুই শিবিরের নেতারা যেসব পলিসিতে একমত হয়েছেন তার তালিকা আছে৷
এখন তাদের দলের নেতৃবৃন্দের সামনে এগুলোর যথার্থতা তুলে ধরতে হবে৷
আর এ কাজটা যতটা না কঠিন সিডিইউর বাভেরিয়ান সহযোগী, যাকে সিডিইউর ডানপন্থি অংশও বলা হয়, সেই সিএসইউ'র নেতা হর্স্ট সেহোফারের জন্য, তারচেয়ে অনেক বেশি কঠিন এসপিডি নেতা মার্টিন শুলৎসের জন্য৷ ২১ জানুয়ারি এক বিশেষ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে দলটি৷
এসপিডির বামপন্থি অংশটির এমনিতেই এই মহাজোটে যোগ দেয়ার ব্যাপারে আপত্তি ছিল৷ তাদের বেশ কিছু দাবি ছিল৷ যেমন, উচ্চ আয়ের মানুষদের আয়কর বাড়ানো, শরণার্থীদের পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হবার সুযোগ দেয়া এবং স্বাস্থ্য বীমার একটি নতুন পলিসি করা৷ এই দাবিগুলো প্রাক-প্রাথমিক এই আলোচনায় অনেকটাই অগ্রাহ্য করা হয়েছে৷
প্রাথমিক আলোচনায় যেসব সিদ্ধান্ত
পারিবারিক পুনর্মিলন: সিডিইউ-এসপিডি মহাজোটের বর্তমান সরকার শরণার্থীদের খুবই ‘সীমিত শর্তে' পরিবারের সদস্যদের জার্মানিতে আনার সুযোগ দেয়া হয়৷ আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাসে ১,০০০ জনের বেশি এই সুযোগ পাবেন না৷ এছাড়া আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি হতে পারবে না৷
আয়কর: আয়কর না বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে সিডিইউ ও এসপিডি, যদিও এসপিডির দাবি ছিল সর্বোচ্চ আয়কর ৪২ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ ভাগ করা৷
সলিডারিটি ট্যাক্স: দুই জার্মানি একত্রিত হবার সময় সাবেক পূর্ব জার্মানদের উন্নয়নের জন্য এই কর ধার্য করা হয়েছিল ১৯৯০ সালে৷ এখন তা আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলার ব্যাপারে একমত হয়েছে দুই দল৷ গেল ক'বছর ধরে এ নিয়েও বিতর্ক চলছে৷
স্বাস্থ্য বীমা: এসপিডির উদারপন্থিদের দাবি ছিল, একটা সাধরণ সিটিজেন ইনস্যুরেন্স করা, যার আওতায় সরকারি ও বেসরকারি সব স্বাস্থ্য সেবাই থাকবে৷ কিন্তু তা বাদ দিয়ে দুই দল চাকরিদাতা ও চাকরিজীবী দুই পক্ষের জন্য একই স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে চাইছে৷
এছাড়া, ভবন তৈরির হার বাড়ানো, ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল এবং গ্লাইফোসেট কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হওয়া গেছে এই আলোচনায়৷
এখন দেখার বিষয়, সিডিইউ, সিএসইউ ও এসপিডি দলের কর্মীরাকিভাবে এই সিদ্ধান্তগুলোকে নেন কিংবা নেতারা কিভাবে তাদের দলের লোককে বোঝাতে পারেন৷ তার ওপরেই নির্ভর করছে মহাজোট সরকার৷
বেন নাইট (জেডএ)