1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যেভাবে তরুণদের আশাভঙ্গ করেছেন সুচি

২ জুন ২০১৯

পাঁচ দশকের সামরিক শাসনের পর বেসামরিক সরকার গঠন করছেন অং সান সুচি, গণতন্ত্রে ফেরার জন্য ব্যাপক আশার সঞ্চার হলো তরুণদের মধ্যে৷ কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি হয়েছে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে৷

https://p.dw.com/p/3JZlO
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Amarasinghe

সামরিক বাহিনী এখনো ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় বেশি কিছু করারও থাকছে না সুচি সরকারের৷ আগের মতোই সরকারের সমালোচকদের জেলে ভরা কিংবা নির্যাতন চলছে মিয়ানমারে৷

২০১৫ সালের নির্বাচনে সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)-এর পক্ষে সরগরম প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন মাউং সাউং খা৷ কিন্তু বিগত চার বছরে সরকারের কর্মকাণ্ডে এমন গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন দলের এই একনিষ্ঠ কর্মী৷

‘‘নির্বাচনের পর আমরা অনেক ভালো কিছু আশা করেছিলাম৷ কিন্তু নির্বাচিত সরকার দেখে মনে হচ্ছে, তারা বুঝতে চাইছে না মতপ্রকাশের স্বাধীনতাটা আসলে কী,'' ডয়চে ভেলেকে বলেছেন সাউং খা৷ 

২০১৫ সালে নির্বাচনের আগে জনসমক্ষে সুচির বিরুদ্ধে কথা তেমন শোনা যেতো না৷ কিন্তু তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার চার বছরের মাথায় সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে অনেকটা

জনগণ মনে করছে, বেসামরিক সরকারও মানুষকে রক্ষায় কিছু করছে না৷ পাঁচ দশক ক্ষমতায় থাকা সেনাবাহিনী এখনো ক্ষমতার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে৷

বেসামরিক সরকারও যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি, সেটা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি সাউং খা-এর৷ যিনি এখন ইয়াংগনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘আথান'-এর পরিচালক৷ এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মানহানি করার অভিযোগে ২০১৫ থেকে ২০১৬ সময়ে ছয় মাস জেল খেটেছেন তিনি৷

নিজের মোহভঙ্গের বর্ণনা দিয়ে সাউং খা বলেন, ‘‘আমি আশা করেছিলাম, বেসামরিক সরকার জনগণকে আগের মতো অযথা বিচারের মুখোমুখি করবে না৷ কিন্তু তারা সেটাই করলো৷ হতে পারে, তাদের কাছে মতপকাশের স্বাধীনতার ভিন্ন সংজ্ঞা আছে৷ আর আমি মনে করি, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার জনগণের আছে৷''

রম্য নাটকের জন্য জেল

গত এপ্রিলে রাজধানী ইয়াংগনে একটি নাটক পরিবেশনার আয়োজন করে রাজনৈতিক রম্যের দল ‘পিকক জেনারেশন'৷ সেখানে মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী রম্য ‘থাংইয়াত'  পরিবেশন করে দলটি৷

ওই নাটকে মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ, বিতর্কিত সংবিধান এবং রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ নিয়ে ব্যঙ্গ পরিবেশন করেন নাট্যকর্মীরা৷ জনগণ সেই পরিবেশনা উপভোগ করলেও সেনাবাহিনী সেটা মেনে নেয়নি৷ ওই নাটকের কারণে সাত নাট্যকর্মীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয় এবং তাঁদেরকে ইয়াংগনের কুখ্যাত ইনসেইন কারাগারে বন্দি করা হয়৷

সেই নাট্যদলের কর্মী শার ইয়ামোন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যখন পরিবেশনাটি করি, তখন মানুষের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছিলাম৷ আমরা মানুষেরই কথা প্রকাশ করছিলাম৷ বলতে চেয়েছিলাম, মিয়ানমারে আসলে কী হচ্ছে৷ বর্তমানে বহু অ্যাক্টিভিস্টের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর মামলা রয়েছে৷ এর বিপরীতে এনএলডি তাদের ইশতাহার অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে৷''

মিয়ানমারের জাতীয় সংসদের ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর দখলে৷ পুলিশ বাহিনীর ওপরও পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের৷ দেশটিতে বর্তমান সশস্ত্র বিরোধ নিয়ে হতাশ অ্যাক্টিভিস্টরা৷ তাঁরা বলছেন, নিজের ভোটারদেরকে দেখভাল করতে ব্যর্থ হয়েছেন সুচি৷ 

‘‘আমার মনে করতে পারি, নির্বাচনের আগে সুচি জনগণকে উচ্চকণ্ঠ হতে বলেছিলেন৷ কিন্তু এখন সরকার বধির, কিছুই শুনছে না,'' বলেছেন শার ইয়ামোন৷

তরুণদের মনে গণতন্ত্র নিয়ে ভয়

গত দুই বছর সেনাবাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিক্ষোভ হয়েছে ইয়াংগনের রাজপথে৷ সে সময় বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে৷ মানবাধিকার সংগঠন আথান বলছে, কয়েক ডজন অ্যাক্টিভিস্ট এখনো কারাগারে আছেন৷

সংগঠনটির হিসাবে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিতর্কিত টেলিযোগাযোগ আইনে ১৮৫টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে অনেকগুলোতে করা হয়েছে সামরিক বাহিনীতে মানহানির অভিযোগ৷

২০১৫ সালে সুন্দর ভবিষ্যতের আশা নিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সুচিকে ক্ষমতায় আনলেও এখন সেই গণতন্ত্র নিয়েই ভয় ধরেছে তরুণদের মনে৷

‘‘আমি জানি, আমার বাবা-মা সুচির কাছ থেকে অনেক পরিবর্তন আশা করেছিলেন৷ কিন্তু আমরা যেটা আশা করেছিলাম, এখন সেখান থেকে বহুদূরে অবস্থান করছি,'' বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘সুচি আমাদেরকে বহু আশা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ, বিশেষ করে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীরা কিছুই পায়নি৷ তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ কিন্তু এখন ভাবি, আসলে তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য কিনা৷''

মিয়ানমারে আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ সুচিকে নিয়ে দেশবাসীর মোহভঙ্গ হলেও এখনো তিনি তাঁদের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প৷ তবে অতীতে তাঁর প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জনগণ দিয়ে থাকলেও এখন সেই আস্থা আর নেই৷

আতে হোয়েক্সট্রা/এমবি/