1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন

সমীর কুমার দে ঢাকা
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে৷ তাঁকে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু এ সময়ে তাঁর এই গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷

https://p.dw.com/p/34RAL
ছবি: M. H. Chowdhury

বুধবার গভীর রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ৷

গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে চাঁদাবাজির মামলার কথা বলা হলেও যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংসদের এই অধিবেশনেই পাশ হতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন৷ এই আইনটি যেন মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থে না হয়ে জনগণের স্বার্থে হয়, সেই দাবিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি অনেকদিন ধরেই আন্দোলন করছে৷ আইনটি পাশ হওয়ার সময় যেন কোনো হৈ চৈ না হয়, সে ব্যাবস্থা করতেই মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে৷

মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দাদন ফকির ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, চাঁদাবাজির মামলায় নাম উল্লেখ থাকায় মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ মো. দুলাল নামের এক ব্যক্তি ৪ সেপ্টেম্বর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন৷ এই মামলার এজাহারে মোজাম্মেলের নাম রয়েছে৷ তাঁকে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ এখন তাঁকে চাঁদাবাজির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷

এজাহারের নীচে তার সই রয়েছে, কেন তাকে পাওয়া যাবে না?: ওসি

মামলার এজাহারে দুলাল দাবি করেছেন, মোজাম্মেল হক তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন৷ এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা তিনি নিয়েছেন৷'' এজাহারে দুলাল তাঁর পরিচয় হিসেবে মিরপুর রোড সড়ক শ্রমিক কমিটির সড়ক সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ তাঁর বাসার ঠিকানা হিসেবে মিরপুরের শাহআলীর ১৮ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ আছে৷ বৃহস্পতিবার ওই বাসায় গিয়েও দুলালকে পাওয়া যায়নি৷ এমনকি এজাহারের নীচে দুলালের যে ফোন নম্বরটির উল্লেখ আছে, সেই নম্বরে দিনভর চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি৷ ঢাকার কোনো সাংবাদিকই দুলালের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি৷

এ বিষয়ে মিরপুর থানার ওসি বলেন, ‘‘তিনি থানায় এসে এজাহার দিয়েছেন৷ এজাহারের নীচে তাঁর সই রয়েছে৷ কেন তাঁকে পাওয়া যাবে না? নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে৷ আমরা তো চেষ্টা করলে তাঁকে খুঁজে পাই, আপনারা পাবেন না কেন?'' তবে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, দুলাল নামে কাউকে তিনি চেনেন না৷ তিনি বলেন, ঢাকায় অনেক শ্রমিক নেতা আছেন, তাঁদের সবাইকে চেনা সম্ভব নয়৷ তবে এনায়েত উল্লাহ জানান, মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে একটি মামলার কথা তিনি শুনেছেন৷ কিন্তু মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তিনি জানেন না৷

এটা একটা সাজানো মামলা: সামসুদ্দিন চৌধুরী

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সামসুদ্দিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বুধবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার নিজ বাসা থেকে  মোজাম্মেলকে পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়া হয়৷ মিরপুর থানার পুলিশ প্রথমে মামলার কথা বলেনি৷ গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ বলেছে, উপরের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে থানায় নেওয়া হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হবে৷ থানায় নেওয়ার পর মোজাম্মেলকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়৷ মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে আগে কখনো কোনো থানায় জিডি পর্যন্ত হয়নি৷ এটা একটা সাজানো মামলা৷''

সরকার ভিন্নমত সহ্য করতে পারছে না: মজুমদার

সামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘‘আসলে গত দুই বছর ধরে আমরা সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আন্দোলন করছি৷ এই সংসদে এটা পাশ হবে৷ মোজাম্মেল সাহেব যাতে এটা নিয়ে কথা বলতে না পারেন, সে কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আসলে এই আইনটা সরকার পরিবহন মালিক--শ্রমিকদের স্বার্থে করছে, জনগনের স্বার্থে নয়৷ এ নিয়ে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর আমাদের কর্মসূচীও ছিল৷'' 

জানা গেছে, যাত্রী কল্যাণ সমিতি নিজেদের বর্ণনা করে ‘একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী, যাত্রীকল্যাণমূলক সামাজিক সংগঠন' হিসেবে৷ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাদের অফিস৷ পরিবহণে যাত্রীদের অধিকার এবং নিরাপত্তার সচেতনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে এই সংগঠন৷ দুই ঈদে এবং বার্ষিক ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ গত রোজার ঈদের পর সমিতির প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংগঠনটির বিরুদ্ধে ‘মনগড়া তথ্য' প্রকাশের অভিযোগ আনেন এবং সমিতির মহাসচিবের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলেন৷

এনায়েত উল্লাহ

গত ১০ জুলাই জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী বলেন, ‘‘একটা ভুয়া জনকল্যাণ সমিতি বাংলাদেশে আছে, যাদের কোনো রেজিষ্ট্রেশন নেই৷ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে এরকম একটি লোক ওই সংগঠনের  নেতৃত্ব দেয়৷ সময়ে সময়ে তাকে মতলবি মহল আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়৷ আমি দেখি, সমাজের অনেক বিশিষ্টজনও এই লোকটির সংবাদ সম্মেলনে এসে হাজির হয়৷''

সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন' সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার ভিন্নমত সহ্য করতে পারছে না৷ এ কারণেই মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেই আমরা মনে হয়৷ এখানে তো স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা যাচ্ছে না৷ এ নিয়ে কেউ কিছু বললে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য