‘‘মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে বিপদ’’
৩ জানুয়ারি ২০১৪সংযুক্ত প্রগতিশীল আঁতাত বা ইউপিএ-২ নামে কংগ্রেস জোট সরকারের গত পাঁচ বছরের কার্যকালের ইতিবাচক এক খতিয়ান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং পূর্ণাঙ্গ সংবাদ সম্মেলনে আত্মপক্ষ সমর্থনে যেসব যুক্তি খাড়া করেন, মিডিয়া, সাধারণ মানুষ এবং বিশেষজ্ঞ মহলের কাছে সেগুলি খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি৷
তাদের মতে, ঐ সব যুক্তির বেশির ভাগই দুর্বল৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ছিল বেশ কিছু বিতর্কিত প্রসঙ্গ৷ যেমন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী প্রসঙ্গে ড. সিং বলেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তা হবে দেশের পক্ষে বিপদের কারণ৷ প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ২০০২ সালে গুজরাট গণহত্যার পুরোহিত ছিলেন মোদী৷
স্বভাবতই বিজেপি এর কড়া প্রতিবাদ করে বলেছে, ইউপিএ সরকারের দুর্নীতি ও সর্বস্তরে ব্যর্থতা ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে টার্গেট করেছেন৷ অথচ দুটি বিচারবিভাগীয় তদন্তে মোদী নিরপরাধ বলে সাব্যস্ত হন৷
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা: এ বছরের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের পর তাঁর দল ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন না৷ বরং নবীন প্রজন্মের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দিতে চান তিনি৷ আর সেই দায়িত্ব পালনের সব থেকে যোগ্য হলেন কংগ্রেসের উপ-সভাপতি রাহুল গান্ধী৷
বলা বাহুল্য, কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে অনেকদিন ধরেই রাহুলের নাম শোনা যাচ্ছিল৷ এবার মনমোহন সিং-এর কথাবার্তায় সেই সম্ভাবনা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল৷ এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি৷ আর সেটা হবে ১৭ই জানুয়ারি দলের শীর্ষ বৈঠকে৷
দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সন্দেহের ঊর্ধে রাখেন৷ দুর্নীতি রোধে তথ্য জানার অধিকার আইন এনেছে তাঁর সরকার, যার সাহায্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হবে, বলেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রীর জন্য সরকারের ‘ইমেজ' খারাপ হয়েছে, এই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মূল্যায়ন করবে ভবিষ্যত৷
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ড. সিং বা তাঁর পরিবারের দিকে কেউ দুর্নীতির আঙুল তোলেনি৷ প্রশ্ন সেটা নয়, প্রশ্ন হলো যে সরকারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ থাকে, তাহলে তার দায় যে সরকারের প্রধান, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়, সেটা কী অস্বীকার করা যায়? যেমন কয়লা ব্লক বণ্টনের কেলেঙ্কারি, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং যখন কয়লা মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত৷ কিংবা টু-জি স্পেকট্রাম নিলাম না করে বণ্টন করা৷ এছাড়া মুদ্রাস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাফাই, অভ্যন্তরীণ মেকানিজিমে যতটা সম্ভব মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু বৈশ্বিক কারণে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না৷ অর্থাৎ দোষটা চাপানো হয় বিশ্বের ঘাড়ে৷
নিজের এক দশকের কার্যকালে কোন কাজকে সব থেকে কৃতিত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি৷ আর পাকিস্তান সফরে তখনই যাওয়া সম্ভব, যখন অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে৷ বিশ্লেষকদের মতে, ড. সিং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও তা হয়নি৷
মনমোহন সিং-এর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে শক্তির ভরকেন্দ্র তৈরি হয় দুটি৷ একটি সোনিয়া গান্ধী, অপরটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর – এই প্রশ্নের উত্তরে ড. সিং-এর জবাব, গত ১০ বছরে এতে কোনো সমস্যা হয়নি৷ দলের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে সরকারের নীতিতে৷ দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় কাঙ্খিত৷ বিধানসভা ভোটে দলের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী সংসদীয় নির্বাচনে সেটা কাজে লাগানো হবে, বলেন তিনি৷
উল্লেখ্য, এ সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও, অনেক বিতর্কিত প্রশ্নের উত্তর কিন্তু সযত্নে এড়িয়ে যান প্রধানমন্ত্রী৷