1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোকার প্রস্তুতি চলছে, সেন্ট মার্টিন ছাড়লেন তিন হাজার মানুষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ মে ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় মোকা আঘাত হানলে সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ রোববার দুপুর নাগাদ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে মোকা৷

https://p.dw.com/p/4RHJM
Bangladesch | Zyklon Mocha
রোববার দুপুরে মোকা আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ছবি: Mohibbulla Mohib

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ১৫০-১৭৫ কি.মি গতিতে আঘাত করতে পারে মোকা৷

তবে মোকার সুপার সাইক্লোন হওয়ার আশঙ্কা কম বলে শুক্রবার সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান৷

তিনি জানান, মোকা সিডরের মতো আই ফরমেশন বা চোখাকৃতির দিকে এগোচ্ছে৷ রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল দিয়ে ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল দিয়ে মোকা অতিক্রম করতে পারে৷

সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ৷ সেন্ট মার্টিনসহ পুরো কক্সবাজার জেলা, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী ও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ আঘাত হানার পর বাংলাদেশে ছয় ঘণ্টা মোকার প্রভাব থাকতে পারে৷
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় অঞ্চলের কাছে দিয়ে যাওয়ার সময় পাঁচ থেকে সাত ফুট উঁচু ঢেউ আঘাত করতে পারে৷ সেন্ট মার্টিনে এই ঢেউয়ের উচ্চতা আরেকটু বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় পাঁচ থেকে সাত ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে৷ এখন চার নাম্বার সতর্ক সংকেত চলছে৷ এটা ১০ পর্যন্ত হতে পারে বলে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানিয়েছেন৷

সেন্ট মার্টিনে আতঙ্ক

স্থানীয় সূত্র জানায় সেন্ট মার্টিনের তিন হাজারের মতো বাসিন্দা নৌকা ও ট্রলার যোগে টেকনাফে এসে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে এখন সাগর উত্তাল হওয়ায় আর কেউ আসতে পারছেন না৷ সেখানে এখন আট হাজারের মতো স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন৷

শনিবার থেকে আমরা লোকজনকে সাইক্লোন সেন্টারে আনা শুরু করবো: আবু সুফিয়ান

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, ‘‘সাগর এখন উত্তাল রয়েছে৷ এখন জাহাজ চলাচল বন্ধ৷ যারা নিজেদের উদ্যোগে ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিন থেকে চলে এসেছেন তাদের বাইরে এখন আর কাউকে আনার সুযোগ নেই৷ আমরা এখন সাগরে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি৷ যারা এসেছেন তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি৷ আর এখন সেন্ট মার্টিনে যারা আছেন তাদের সঙ্গে পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা আছেন৷ সেখানে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও হোটেল, রিসোর্ট ও পাকা স্থাপনাগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তবে স্থানীয়দের আশ্রয় কেন্দ্রে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷’’

পুরো কক্সবাজার জেলায় সাইক্লোন সেন্টার আছে ৫৭৬টি৷ এছাড়া আরো যেসব স্কুল কলেজ ও হোটেল মোটেল রয়েছে সেগুলোও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান, ‘‘আমাদের সেন্টারগুলোতে ধারণ ক্ষমতা আছে পাঁচ লাখের কিছু বেশি৷ আমরা সাইক্লোন সেন্টারগুলো পরিদর্শন করে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার এবং নগদ টাকার প্রস্তুতি আছে৷ প্রস্তুত আছে মেডিকেল টিম৷ পরিস্থিতি দেখে শনিবার থেকে আমরা লোকজনকে সাইক্লোন সেন্টারে আনা শুরু করবো৷ এখন প্রচার চলছে৷ কেউ চাইলে এখনই আসতে পারেন৷’’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা

কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন৷ তারাও আছেন আতঙ্কে৷ তাদের জন্য কাজ করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়৷ এই কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন জানান, ‘‘ক্যাম্পগুলোতে যে কমন স্পেস আছে সেগুলো আমরা প্রস্তুত রেখেছি, যাতে ঝড় শুরু হলে রোহিঙ্গারা দ্রুত সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন৷ ওইসব কমন স্পেসে ক্লিনিক, লার্নিং সেন্টার, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার, অফিসসহ নানা স্থাপনা আছে৷ সেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবেন৷ আলাদা কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নেই৷ এছাড়া প্রয়োজনে তারা ক্যাম্পের আশপাশে হোস্ট কমিউনিটির স্কুল ভবনসহ অন্য কোনো ভবনে আশ্রয় নিতে পারবেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ঘরগুলো হালকা উপাদান দিয়ে তৈরি, তাই ঝড়ে উড়ে গেলে আমরা শেল্টার কিট প্রস্তুত রেখেছি- যা দিয়ে তারা তাঁবু খাটিয়ে সাময়িকভাবে থাকতে পারেন৷ পরে আমরা ঘর বানিয়ে দেব৷’’

রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি খাদ্য এবং জ্বালানি মজুত করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷

চট্টগ্রামে প্রস্তুতি

মোকা বাংলাদেশের উপকূলীয় প্রায় সব জেলায় তান্ডব চালানোর আশঙ্কা আছে৷ তবে সবচেয়ে আতঙ্কে আছেন চট্টগ্রাম জেলার মানুষ৷ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তারা পুরো জেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে এক হাজার ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছেন৷ এসব আশ্রয় কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা পাঁচ লাখের একটু বেশি৷ সব মিলিয়ে ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ নেভি ও কোস্টগার্ডের রেসকিউ বোট, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল এবং মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে৷

ক্যাম্পগুলোতে যে কমন স্পেস আছে সেগুলো আমরা প্রস্তুত রেখেছি: শামসুদ্দোজা নয়ন

এছাড়া দেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরগুনা, চাঁদপুরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে৷ সব জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে৷

কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সচিবালয়ে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম খুলেছে৷ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷

মোকা মোকাবিলায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের এক হাজার ৬০৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে৷ এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ লাখ সাত হাজার ১০০ জনকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে৷

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব অমিত দাসগুপ্ত জানান, ‘‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় ২০ লাখ ত্রিশ হাজার করে নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি ৫৯০ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে তিন মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, তিন টন ড্রাই কেক, ২০ হাজার খাবার স্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রামই সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ জেলা প্রশাসকদের নিজস্ব দুর্যোগ ফান্ড আছে৷ আর কাদের, কখন আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে তা জেলা প্রশাসকরাই নিদ্ধান্ত নেবেন৷ সাধারণত চার নম্বর সিগন্যালের পরই আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়৷’’