1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ কি ভোটে পড়বে?

গৌতম হোড় | স্যমন্তক ঘোষ
১২ মে ২০২৪

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। কিন্তু সেই ক্ষোভের প্রভাব কি এবার লোকসভা ভোটে পড়বে?

https://p.dw.com/p/4fhJW
মুর্শিদাবাদে ভোটের লাইন।
লোকসভা ভোটেমৃল্যবৃদ্ধি কি কোনো প্রভাব ফেলবে ?ছবি: Subhadip Basak/DW

বারণসীর দশাশ্বমেধ ঘাট। বড় ছাতার তলায় চৌকিতে বসেছিলেন সঙ্গম চৌবে। মানুষ আসছেন। কেউ কেউ পুজো করাচ্ছেন। সকালেই রোদের তাপ বাড়ছে। ভোটের উত্তাপও বাড়তে শুরু করেছে বারাণসীতে। সঙ্গম বলছিলেন, বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জয় নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তিনিও মোদীকেই ভোট দেবেন। তারপর একটু থেমে তিনি বললেন, তবে জিনিসের দাম ভয়ংকরভাবে বেড়েছে

বারাণসীর ঘাটে বসে সঙ্গমের বলা ওই কথাগুলো শুধু বারাণসীর একজন মানুষের আক্ষেপ মনে করলে ভুল হবে। বারাণসী থেকে আমেঠির দূরত্ব ১৭৮ কিলোমিটারের মতো। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাবেক নির্বাচনকেন্দ্রে গতবার স্মৃতি ইরানি জিতেছেন। এবারও রাহুল সেখানে দাঁড়াননি। আমেঠির মানুষের একাংশ রাহুলের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না। আমেঠির কাছে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে মানুষ বলছিলেন, রাহুল দূর থেকে হাত নেড়ে চলে যান। তাদের কাছে পৌঁছান না। রাহুলকে নিয়ে তাই তারা হতাশ।

এই সব কথাবার্তা যখন চলছে, তখনই তখনই বিজয় বললেন, ''এ সবই ঠিক, কিন্তু ১৩ টাকা কিলোগ্রাম দরে চিনির কী হলো?'' অবধারিতভাবে পরের প্রশ্নই হলো, ১৩ টাকা কিলোগ্রাম দরে চিনি মানে? বিজয়ের জবাব, ''প্রধানমন্ত্রী গতবার বলেছিলেন, ১৩ টাকা কিলোগ্রাম দরে চিনি দেবেন। তা তো পাইনি। আর অন্য সব জিনিসের দাম দেখেছেন?''

ঠিক এই কথারই প্রতিদ্বনি শুনেছি মুজফফরনগরে নাথুরামের গলায়। মূল্যবৃদ্ধিকে হিন্দিতে বলে মেহঙ্গাই। নাথুরাম আক্ষেপ করে বলেছেন, ''মেহঙ্গাই বহুত বাড় গয়া।'' কলকাতার তরুণ বিশ্বাসেরও বক্তব্য, ভোট এলেই জিনিসের দাম বেড়ে যায়।

দিল্লিতে শাকসবজির বাজারে দাম শুনেই মনে হচ্ছে, ছুঁলেই ছ্যাঁকা মারবে। পটল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কিলো দরে, মটরশুটি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কিলো, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, আলুও তাই। বিনস বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কিলো দরে, ঝিঙে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কিলো, দুইশ গ্রাম পনিরের দাম বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা। সর্যের তেলের দাম কিছুদিনের মধ্যে লিটারে ১৫ টাকার মতো বেড়েছে। বাসমতী চালের দাম বেড়েই চলেছে। ওষুধের দামের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্যি।

এই অবস্থার প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কথাতেও।

লোকনীতি-সিএসডিএস প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষায় জিনিসের দাম নিয়ে প্রায় ৭১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দাম বেড়েছে। ১৩ দশমিক তিন শতাংশ বলেছেন, দাম কমেছে। দাম কমা-বাড়া নিয়ে প্রায় ২১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী, ১২ শতাংশ মনে করেন, রাজ্য সরকার দায়ী। ৪২ শতাংশের মতে, দুই সরকারই দায়ী।

কংগ্রেস প্রচারে নেমে জিনিসের দাম ও কর্মসংস্থানের কথা বলছে। রাহুল গান্ধী প্রায় প্রতিটি জনসভাতে নিয়ম করে এই দুইটি বিষয় তোলেন। কিন্তু তার ভাষণে এতগুলি বিষয় থাকে যে তার মধ্যে এই দুইটি বিষয় অনেক সময়ই হারিয়ে যায়। তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব তার বক্তৃতার অনেকটা অংশ এই দুই বিষয়ে খরচ করছেন। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, আমি মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দিয়েছি, সেই চাল ফোটাতে হচ্ছে হাজার টাকার গ্যাসে

তবে প্রশ্নটা হলো, জিনিসের দাম, কর্মসংস্থান নিয়ে মানুষের ক্ষোভ থাকলেও তার প্রতিফলন কি ভোটের বাক্সে পড়ে্? বারাণসীতে সঙ্গম জিনিসের দামের কথা বলার পর একইসঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি মোদীকে ভোট দেবেন। অন্যরাও ক্ষোভ জানিয়েও বলেননি, এর জন্য তাদের ভোট বিরোধীদের কাছে যাবে কি না।

ভারতে আসলে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে মানুষ অনেক কিছু বিবেচনা করে। জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট হয়, আবেগের বিষয় থাকলে তার উপর ভোট হয়, প্রার্থী দেখে হয়, দলকে দেখে হয়, ক্ষোভ-বিক্ষোভের উপরেও হয়। আবার একেকটা রাজ্যে মানুষ একেক রকম করে ভাবেন। ফলে জিনিসের দামের প্রভাব ভোটে কোথায়, কতটা পড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো