মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ?
৮ ডিসেম্বর ২০১৫সোমবার সাউথ ক্যারোলিনায় এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আর কোনো উপায় নেই৷'' গত বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ায় এক মুসলিম দম্পতির গুলিতে ১৪ জনের নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন৷ ‘‘যতদিন না আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা আসলে কী ঘটছে, সেটা বের করতে না পারেন ততদিন পর্যন্ত'' মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি৷ বলা বাহুল্য, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অনেকেই এর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন৷ বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোও ট্রাম্পের বক্তব্যের বিশ্লেষণ করছে৷
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা রিপাবলিকান প্রার্থী জেব বুশ ট্রাম্পকে ‘বিকৃত মস্তিষ্ক' বলেছেন৷ তাঁর ‘নীতি' প্রস্তাবনাগুলো চিন্তাশীল নয় বলেও মন্তব্য করেন জেব বুশ৷
ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা কিংবা মুসলিম অ্যামেরিকানদের ছোট করা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ বিরোধী৷
‘কাউন্সিল অন অ্যামেরিকান-ইসলামিক রিলেশান্স'-এর পরিচালক নিহাদ আওয়াদ মনে করেন, এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইসিস-কে সাহায্য করছেন৷
ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন এশিয়ার মুসলিম সমাজ৷ পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর বলেছেন, ‘‘এটা এমনই অযৌক্তিক মন্তব্য যে এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই না আমি৷ এটা ধর্মান্ধতার চরম রূপ৷ এর সঙ্গে মিলেছে অজ্ঞতা৷ আমি আশা করবে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি পাকিস্তানের একজন অজ্ঞ অপরাধী মনের মোল্লার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবেন না৷''
ক্রিস্টোফার ডেওল্ফ বলেন, ট্রাম্প একজন ভাঁড় কিন্তু তিনি যা বলছেন তা উপেক্ষা করা অসম্ভব৷ তিনি এমন মন্তব্য করেছেন যেটা গণহত্যা উসকে দিতে পারে৷
মিশরের স্যাটায়ার নির্মাতা ও ২০১৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি'-র তালিকায় স্থান পাওয়া ড. বাসেম ইউসেফও ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ ওয়েবসাইট ‘ভক্স'-এ প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম অভিবাসীদের প্রবেশ নিষেধের আহ্বান জানিয়ে ঠিক যে রকম প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলেন, সেটাই পাচ্ছেন৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প যখন এই মন্তব্য করেন তার ঘণ্টা চারেক আগে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, আইওয়া রাজ্যে অন্য প্রার্থী টেড ক্রুজ তাঁর (ট্রাম্প) চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ দু'টি উদ্দেশ্য এরকম মন্তব্য করেন ট্রাম্প৷ প্রথমত তিনি গণমাধ্যমের শিরোনামে থাকা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন৷ দ্বিতীয়ত, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেই অংশের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, যাঁরা হয়ত গোপনে ট্রাম্পের সঙ্গে একমত পোষণ করেন, যে সাধারণ রাজনীতিবিদরা যে কথা বলতে চান না, তিনি সেটা বলতে রাজি আছেন৷
গত কয়েকমাস ধরে চলা প্রচারণায় ট্রাম্পের দেয়া বক্তব্যের বিশ্লেষণ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস৷ তাদের মতে, প্রচারণার ক্ষেত্রে ট্রাম্প নতুন উপায় অবলম্বন করছেন৷ তিনি নীতি, এন্ডোর্সমেন্ট, বিজ্ঞাপন ও আর্থিক সহায়তা দানের মতো প্রচারণার চলমান উপায়গুলোর উপর জোর না দিয়ে ভাষা ও শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাইছেন৷ আধুনিক রাজনীতিতে সচরাচর এরকম দেখা যায় না বলেও মন্তব্য করেছে নিউইয়র্ক টাইমস৷
২০১০ সালের মিস ইউএসএ রিমা ফাকিহ-র সঙ্গে ট্রাম্পের একটি ছবি টুইট করে ফ্রেজার নেলসন লিখেছেন, মুসলিম অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্প সবসময় চিন্তিত ছিলেন না৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)