মুক্তিযোদ্ধা সনদ কেলেঙ্কারি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪
মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধার কারণে গত পাঁচ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন৷ সবার সনদই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক৷
রবিবার মুক্তিযুদ্ধ ও জনপ্রশাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের বেঠকে যে পাঁচজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয় তাঁরা হলেন: স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজউদ্দিন মিঞা, সদ্য ওএসডি হওয়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান (বর্তমানে প্রদিমন্ত্রীর মর্যাদায় বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার৷
বৈঠকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছাড়া যাঁরা সনদ নিয়েছেন, তাঁদের সবার সনদ বাতিল করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এর আগে গত মাসে আরো ৩৫ জনের সনদ বাতিল হয়৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল বৈঠক শেষে জানান, ‘‘দুদক-এর তদন্তের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তদন্তে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার ব্যাপারে তাঁরা অনিয়ম করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এই সচিবদের অনেকেরই এ বছর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা৷ তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অতিরিক্ত আরো এক বছর চাকরির সুবিধা পাবেন না৷'' জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি৷ তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা বা চাকরি থেকে বিদায় করা হবে কিনা – তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
গত পাঁচ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার ১১ হাজার ১৫০ জন৷ সচিব থেকে শুরু করে চিকিত্সক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ব্যাংকারও রয়েছেন তাঁদের মধ্যে৷ সম্প্রতি সনদ জাল করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে আটক হয়েছেন পুলিশের ২৩ জন কনস্টেবল৷ এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিক শিক্ষক পদে আবেদনকারী এক হাজার ৩৩৮ জনের মধ্যে ১৫২ জনের সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে৷
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী আরো ১৮২ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক৷ এ সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী৷
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, চাকরিতে যোগদানের সময়ই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিতে হয়৷ কিন্তু এই শীর্ষ কর্মকর্তারা চাকরির শেষ সময়ে এসে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করে সনদ নিয়েছেন৷ চাকরির মেয়াদ বাড়ানো বা অন্যান্য সুযোগ নিতে যেসব পদস্থ কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে তদন্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তিনটি কমিটি এখন কাজ করছে৷