মিলান শহরে গাড়িমুক্ত চত্বর বাড়ছে
১৯ জানুয়ারি ২০২৩তুলি আর রং নিয়ে ভোরবেলাই তারা উদয় হন৷ মিলান শহরের বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবীরা শহরের ‘প্রাতো চেন্তেনারো' নামের এলাকার একটি চত্বর রং করছেন৷ রাউন্ডঅ্যাবাউট ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার সরিয়ে জায়গাটিকে তারা সম্পূর্ণ গাড়িমুক্ত করে তুলতে চান৷
ডিজাইনের ছাত্রী জুলিয়া বাদোকি স্বেচ্ছাসেবীদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা অ্যাসফাল্টের উপর রং করছি, কারণ আমরা জায়গাটিকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই৷ আমরা জায়গাটিকে নতুন করে সাজাচ্ছি৷ আগে যে সব গাড়ি থাকতো, সেগুলি চলে গেছে৷''
মিলান শহরে এই নিয়ে ৩৯টি চত্বর গাড়িমুক্ত করা হচ্ছে৷ সেই ব্যস্ত আবাসিক এলাকায় এখন পার্ক করা গাড়ির বদলে অলিভ গাছ, টেবিল-চেয়ার ও বেঞ্চ শোভা পাচ্ছে৷ অ্যাসফাল্টের উপরেও রং করা হচ্ছে৷ স্বেচ্ছাসেবীরা দুই দিনের মধ্যেই রংয়ের কাজ শেষ করতে চান৷ নিজের প্রেরণা সম্পর্কে জুলিয়া বাদোকি বলেন, ‘‘প্রায় ২৪ বছর ধরে মিলানে থাকি বলে নিজের শহরে এই কাজে আমিও হাত লাগিয়েছিলাম৷ এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা অবশেষে গাড়ির বদলে মানুষের জন্য জায়গা আদায় করতে পারি৷ বয়সের তোয়াক্কা না করে আমরা সবাই বাইরে মিলিত হতে পারি৷''
মিলানের পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এমন খোলা চত্বরের আইডিয়া ছড়িয়ে পড়ছে৷ দেমেত্রিয়ো স্কোপেলিতি নামের স্থপতি ও তাঁর টিম নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দ্রুত ও সস্তার সমাধানসূত্র সৃষ্টি করছেন৷ একেবারে সূচনা পর্ব থেকে নাগরিকদের শামিল করা এই উদ্যোগের মূলমন্ত্র৷
‘‘মানুষ চত্বরের রূপান্তর সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করেন৷ নাগরিক উদ্যোগের সদস্য ও নগর পরিকল্পনাকারীরা তারপর একসঙ্গে প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত করেন৷ কাজ শুরু হলে স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় বাসিন্দারা সাহায্য করেন, এখানে যেমনটা ঘটছে৷''
২০১৮ সালে রংয়ে ভরপুর ‘পিয়াৎসা আপের্তা' বা উন্মুক্ত চত্বরের উদ্যোগ শুরু হয়৷ প্রথমে পর্তা জেনোভা, পিয়াৎসা সিচিলিয়া ও ভিয়া স্পোলেতোর রূপান্তর ঘটানো হয়৷ তবে পিয়াৎসা দেরগানো ছিল শহরের প্রথম উন্মুক্ত চত্বর৷ পরীক্ষামূলকভাবে শুধু শুরুতেই চত্বর রং করা হয়৷ ইতোমধ্যে সেই চত্বরে অ্যাসফাল্ট সরিয়ে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়েছে৷ নতুন গাছপালা, টেবিল টেনিস খেলার ব্যবস্থা ও বেঞ্চ জায়গাটিকে মনোরম করে তুলেছে৷ পৌরসভার স্থপতি দেমেত্রিয়ো স্কোপেলিতি বলেন, ‘‘আমরা এই কাজকে স্থায়ী ‘কাঠামোগত হস্তক্ষেপ' বলি৷ এই চত্বর পাড়ার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ মনে হবে যেন চিরকাল এমনই ছিল৷ ইটালির ঐতিহ্য অনুযায়ী পিয়াৎসা কবল স্টোন দিয়ে ঢাকা৷ কেউ যদি ২৫টি পার্কিং স্পেস আবার ফিরে পেতে চায়, তাকে পাগল ঘোষণা করা হবে৷''
গাড়ির জন্য এখন শুধু চিকন একটা পথ অবশিষ্ট রয়েছে৷ নতুন করে চত্বর সাজাতে মিলানের পৌর কর্তৃপক্ষকে সামান্য ব্যয় করতে হয়৷ অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কম খরচে রূপান্তর ঘটিয়ে বিশাল পরিবর্তন আনা যায়৷ এমনকি রং করার সময়েই মানুষ জায়গাটি ব্যবহার করায় জুলিয়া ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা খুবই খুশি৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জুলিয়া বাদোকি বলেন, ‘‘কাজের শুরুতেই এখানকার অনেক বাসিন্দা এসেছিলেন৷ বিশেষ করে চত্বরের একেবারে পাশেই থাকেন, এমন মানুষের উৎসাহ বেশি ছিল৷ তাঁরা টেবিল ঢেকে, চেয়ারে বসে সারা দূপুর ধরে তাস খেলেছিলেন৷ তাই আমার মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্প পাড়ার সবার কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে৷''
রং শুকিয়ে যাবার আগেই পিয়াৎসার উপর স্বতঃস্ফূর্ত পারফরমেন্স দেখা গেলো৷ এক নাচের শিক্ষক স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নাচতে উদ্বুদ্ধ করলেন৷
এমন উদ্যোগের দৌলতে মিলান অন্যান্য শহরের জন্যও আদর্শ হয়ে উঠছে৷ আগামী বছর শহরের আরও ১৪টি পিয়াৎসা এভাবে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে৷
২০১৮ সালের ছবিঘর
কাডেরাইট/গেসনার/এসবি