1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশইটালি

মিলান শহরে গাড়িমুক্ত চত্বর বাড়ছে

১৯ জানুয়ারি ২০২৩

গাড়ি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক শহরের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে৷ ইটালির এক শহর পাড়ার মধ্যে চত্বর উন্মুক্ত করে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করছে৷ স্থানীয় মানুষকে শামিল করে পৌর কর্তৃপক্ষ এমন উদ্যোগ নিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4MSYd
ছবি: Maurizio Maule/FOTOGRAMMA/picture alliance

তুলি আর রং নিয়ে ভোরবেলাই তারা উদয় হন৷ মিলান শহরের বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবীরা শহরের ‘প্রাতো চেন্তেনারো' নামের এলাকার একটি চত্বর রং করছেন৷ রাউন্ডঅ্যাবাউট ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার সরিয়ে জায়গাটিকে তারা সম্পূর্ণ গাড়িমুক্ত করে তুলতে চান৷

ডিজাইনের ছাত্রী জুলিয়া বাদোকি স্বেচ্ছাসেবীদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা অ্যাসফাল্টের উপর রং করছি, কারণ আমরা জায়গাটিকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই৷ আমরা জায়গাটিকে নতুন করে সাজাচ্ছি৷ আগে যে সব গাড়ি থাকতো, সেগুলি চলে গেছে৷''

মিলান শহরে এই নিয়ে ৩৯টি চত্বর গাড়িমুক্ত করা হচ্ছে৷ সেই ব্যস্ত আবাসিক এলাকায় এখন পার্ক করা গাড়ির বদলে অলিভ গাছ, টেবিল-চেয়ার ও বেঞ্চ শোভা পাচ্ছে৷ অ্যাসফাল্টের উপরেও রং করা হচ্ছে৷ স্বেচ্ছাসেবীরা দুই দিনের মধ্যেই রংয়ের কাজ শেষ করতে চান৷ নিজের প্রেরণা সম্পর্কে জুলিয়া বাদোকি বলেন, ‘‘প্রায় ২৪ বছর ধরে মিলানে থাকি বলে নিজের শহরে এই কাজে আমিও হাত লাগিয়েছিলাম৷ এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা অবশেষে গাড়ির বদলে মানুষের জন্য জায়গা আদায় করতে পারি৷ বয়সের তোয়াক্কা না করে আমরা সবাই বাইরে মিলিত হতে পারি৷''

মিলানের পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এমন খোলা চত্বরের আইডিয়া ছড়িয়ে পড়ছে৷ দেমেত্রিয়ো স্কোপেলিতি নামের স্থপতি ও তাঁর টিম নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দ্রুত ও সস্তার সমাধানসূত্র সৃষ্টি করছেন৷ একেবারে সূচনা পর্ব থেকে নাগরিকদের শামিল করা এই উদ্যোগের মূলমন্ত্র৷

মিলানের ৩৯টি চত্বর গাড়িমুক্ত

‘‘মানুষ চত্বরের রূপান্তর সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করেন৷ নাগরিক উদ্যোগের সদস্য ও নগর পরিকল্পনাকারীরা তারপর একসঙ্গে প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত করেন৷ কাজ শুরু হলে স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় বাসিন্দারা সাহায্য করেন, এখানে যেমনটা ঘটছে৷''

২০১৮ সালে রংয়ে ভরপুর ‘পিয়াৎসা আপের্তা' বা উন্মুক্ত চত্বরের উদ্যোগ শুরু হয়৷ প্রথমে পর্তা জেনোভা, পিয়াৎসা সিচিলিয়া ও ভিয়া স্পোলেতোর রূপান্তর ঘটানো হয়৷ তবে পিয়াৎসা দেরগানো ছিল শহরের প্রথম উন্মুক্ত চত্বর৷ পরীক্ষামূলকভাবে শুধু শুরুতেই চত্বর রং করা হয়৷ ইতোমধ্যে সেই চত্বরে অ্যাসফাল্ট সরিয়ে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়েছে৷ নতুন গাছপালা, টেবিল টেনিস খেলার ব্যবস্থা ও বেঞ্চ জায়গাটিকে মনোরম করে তুলেছে৷ পৌরসভার স্থপতি দেমেত্রিয়ো স্কোপেলিতি বলেন, ‘‘আমরা এই কাজকে স্থায়ী ‘কাঠামোগত হস্তক্ষেপ' বলি৷ এই চত্বর পাড়ার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ মনে হবে যেন চিরকাল এমনই ছিল৷ ইটালির ঐতিহ্য অনুযায়ী পিয়াৎসা কবল স্টোন দিয়ে ঢাকা৷ কেউ যদি ২৫টি পার্কিং স্পেস আবার ফিরে পেতে চায়, তাকে পাগল ঘোষণা করা হবে৷''

গাড়ির জন্য এখন শুধু চিকন একটা পথ অবশিষ্ট রয়েছে৷ নতুন করে চত্বর সাজাতে মিলানের পৌর কর্তৃপক্ষকে সামান্য ব্যয় করতে হয়৷ অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কম খরচে রূপান্তর ঘটিয়ে বিশাল পরিবর্তন আনা যায়৷ এমনকি রং করার সময়েই মানুষ জায়গাটি ব্যবহার করায় জুলিয়া ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা খুবই খুশি৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জুলিয়া বাদোকি বলেন, ‘‘কাজের শুরুতেই এখানকার অনেক বাসিন্দা এসেছিলেন৷ বিশেষ করে চত্বরের একেবারে পাশেই থাকেন, এমন মানুষের উৎসাহ বেশি ছিল৷ তাঁরা টেবিল ঢেকে, চেয়ারে বসে সারা দূপুর ধরে তাস খেলেছিলেন৷ তাই আমার মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্প পাড়ার সবার কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে৷''

রং শুকিয়ে যাবার আগেই পিয়াৎসার উপর স্বতঃস্ফূর্ত পারফরমেন্স দেখা গেলো৷ এক নাচের শিক্ষক স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নাচতে উদ্বুদ্ধ করলেন৷

এমন উদ্যোগের দৌলতে মিলান অন্যান্য শহরের জন্যও আদর্শ হয়ে উঠছে৷ আগামী বছর শহরের আরও ১৪টি পিয়াৎসা এভাবে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে৷

২০১৮ সালের ছবিঘর

কাডেরাইট/গেসনার/এসবি