‘মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে কেউ বেশি দিন টিকতে পারে না’
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯এই বিষয়গুলো নিয়ে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে গ্রে অ্যাডভার্টাইজ লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার ও কান্ট্রি হেড সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনের সঙ্গে৷
ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশে কতগুলো বিজ্ঞাপন সংস্থা আছে?
সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: রেজিষ্ট্রার্ড বিজ্ঞাপনী সংস্থা আড়াইশ' থেকে তিনশ'৷ পুরোপুরি চলে এমন সংখ্যা যদি বলেন সেটা ৫০টাও হবে না৷
এর মধ্যে মূলধারার কতটি?
মূলধারা বলে কিছু নেই৷ তবে বিজ্ঞাপনী সংস্থার এক ধরনের পুনর্বিন্যাস ঘটেছে৷ যেমন ধরেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট থাকবে, স্ট্র্যাটেজি ডিপার্টমেন্ট থাকবে এমন৷ তবে নতুন করে কিছু ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী সংস্থা হচ্ছে৷ এরা কাজ শুরু করেছে৷ এখন ইভেন্ট আলাদা হয়ে গেছে৷ এরাও কিন্তু বিজ্ঞাপনী সংস্থার গোত্রভুক্ত৷ সবমিলিয়ে এখন ভাগ হয়ে গেছে৷
মানসম্মত বিজ্ঞাপন করার মতো সক্ষমতা আছে কতটির?
৩০ থেকে ৪০টি এজেন্সি আছে যারা মোটামুটি কাজ নামিয়ে দিতে পারে৷
দেশে বিজ্ঞাপনের বাজারের আকার কেমন?
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটসহ ধরেন তাহলে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মার্কেট৷
বিজ্ঞাপন কী শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে?
শিল্প কোন সেন্সে বলছেন আমি জানি না। আমরা এখনও ইন্ডাষ্ট্রি হিসেবে নিবন্ধিত না৷ যদি কন্ট্রিবিউশনের কথা বলেন তাহলে আমরা কিন্তু অর্থনীতিতেও বড় আকারেই কন্ট্রিবিউট করছি৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কিন্তু ব্র্যান্ডিং পড়ানো হচ্ছে৷ আমরাও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যাই৷ আপনি যদি গত ২০-২৫ বছরের ইতিহাস দেখেন তাহলে দেখবেন আমাদের সিনেমা থিয়েটার যেটা ডেলিভারি দিতে পারেনি আমাদের বিজ্ঞাপন সেটা ডেলিভারি দিয়েছে৷ এই দিক থেকে অবশ্যই এটা একটা বড় জায়গা৷
বিজ্ঞাপন জগতে কত কর্মসংস্থান হয়েছে?
এই সংখ্যাটা খুব বেশি হবে না৷ সরাসরি হয় ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষ কাজ করছেন৷ আর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধরলে এই সংখ্যাটা লাখ খানেক হবে৷
ব্যবসায়িক কারণে সৃজনশীলতা কী বাধাগ্রস্থ হয়?
ব্যবসা আছে বলেই বিজ্ঞাপন আছে৷ ক্লায়েন্ট আছে বলেই আমরা আছি৷ ব্যবসায়ীরা না থাকলে তো বিজ্ঞাপনের দরকার হতো না৷ ফলে এখানে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই৷
বিজ্ঞাপনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মূল দক্ষতার জায়গা কোনটি?
এখানে ৬-৭টি বিভাগ৷ স্ট্র্যাটেজি প্লানিং, ক্রিয়েটিভ, কপি রাইটিং, মিডিয়া প্লানিং, মিডিয়া বায়িং, ইভেন্টে গিয়ে ইভেন্ট প্লানিং, ইভেন্ট বায়িং- এই সবগুলোই আলাদা আলাদা বিভাগ৷ এখানে তো আমরা এখনো ইনস্টিটিউট করতে পারিনি৷ ফলে মাঠ পর্যায় থেকে আমরা চারুকলা, মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইনার পাচ্ছি৷ কিন্তু অন্যবিভাগগুলোতে সরাসরি পড়াশোনা না থাকায় আমরা তাদের পাই না৷ ফলে আমাদেরকে এসব বিভাগের লোক তৈরি করে নিতে হয়৷
বিজ্ঞাপনে সম্ভাবনার জায়গাটা কেমন?
ব্যাপক৷ বিজ্ঞাপন বেঁচে থাকে তখনই যখন অর্থনীতি বড় হতে থাকে৷ মানুষের প্রয়োজনের জায়গায় তারা পৌঁছতে পারে তখনই৷ এখানে অর্থনীতি যত বড় হবে, প্রতিযোগিতাও ততই বাড়বে৷ তখনই প্রয়োজন বিজ্ঞাপনের৷ যেমন ধরেন বাজারে যদি একটা সাবান থাকতো তাহলে সবাই সেটাই কিনতো৷ কিন্তু বাজারে যখন একই দামে ১০টা সাবান থাকবে তখন বিক্রি করার একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হবে৷ তখনই বিজ্ঞাপনের বিষয়টি সামনে চলে আসবে৷ কে কীভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারছে৷ এখানে প্রতিযোগিতা বাড়লে বিজ্ঞাপনের বাজারও বড় হবে৷
বিজ্ঞাপন জগতে চ্যালেঞ্জ কেমন?
বিজ্ঞাপনে বড় চ্যালেঞ্জ হিউম্যান রিসোর্স৷ আমাদের দেশে আমি বাদে আর মাত্র দু'জনকে পাবেন যারা এই বিষয়ে কমিউনিকেশনে পড়াশোনা করে এখানে এসেছে৷ মিডিয়া বায়িংয়ে যদি পড়াশোনা করা লোক আপনি না পান তাহলে কাকে নিয়ে আপনি কাজ করবেন? আমরা যদি ইন্ডাষ্ট্রির স্ট্যাটাস পাই তাহলে নানা ধরনের পলিসি তৈরি হবে, আমরাও কন্ট্রিবিউশন করার সুযোগ পাবো৷
বিজ্ঞাপন সংস্থার স্বাধীনতা কতটুকু?
আমি জানি না, এটার সরাসরি উত্তর কী হবে৷ তবে ক্লায়েন্ট কী চাচ্ছে, সেটা বুঝেই আমাদের কাজ করতে হয়৷ হ্যাঁ, আমাদের মতো বড় এজেন্সি যেগুলো আছে, তাদের স্বাধীনতা অনেক৷ কিন্তু যারা ছোট এজেন্সি তাদের অনেক কিছু কম্প্রোমাইজ করে কাজ করতে হয়৷ আমরা তো গবেষণা করেই একটা কাজে হাত দেই৷ ফলে এখানে আমাদের স্বাধীনতার জায়গাটা অনেক বেশি৷ কিন্তু যে প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নামবে না, তার উপর তো ক্লায়েন্ট অনেক কিছুই চাপিয়ে দেবে৷
বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কি কোনো বিরোধ আছে?
না না বিরোধ হওয়ার কিছু নেই৷ আপনি যখন কাজ করতে যাবেন তখন দু'একটা কথা হতে পারে৷ ক্লায়েন্ট তো আমার পার্টনার৷ যেমন ধরেন আমরা গ্রামীণফোনের জন্য কাজ করি৷ তাদের যে মার্কেটিং বিভাগ আছে আর আমাদের যারা কাজ করছে সবাই মিলেই কিন্তু এটা টিম৷ একটা ভালো কাজের জন্য তো ফাইট হতে পারে৷ আর এই ফাইটটা হয় একটা ভালো প্রোডাকশনের জন্য৷
বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনে সৃষ্টিশীল কাজ হয় কতটুকু?
পুরো বাজার যদি দেখেন তাহলে ২০-৩০ ভাগ কাজ হয় সৃষ্টিশীল৷ বাকিগুলো হয় না, কারণ আমাদের ক্লায়েন্টদের সবাই আসলে বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে কাজ করে অভ্যস্ত না৷ অনেকেই ইন-হাউস কাজ করে ফেলে৷ তাতে যে কাজটা হচ্ছে সেটা যে মানসম্পন্ন হচ্ছে তা কিন্তু নয়৷ কিন্তু অনেকে মনে করেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে এত টাকা দিয়ে কেন আমি কাজটা করাব৷ আমি তো নিজেই কাজটা করে ফেলতে পারি৷ ঢাকায় তো তাও কিছু হচ্ছে৷ কিন্তু ঢাকার বাইরে অন্য শহরগুলোতে এটা একেবারেই হচ্ছে না৷
বলা হয়, বিজ্ঞাপনে সত্য-মিথ্যার মিশেল থাকে৷ মানুষ বিজ্ঞাপন দেখে অনেক সময় প্রতারিত হন? আপনি কি মনে করেন?
আমি আসলে বিষয়টাকে এভাবে বলতে চাই না৷ তবে পরের যে অংশটা বললেন মানুষ প্রতারিত হন, হ্যাঁ হন, আপনি যদি দায়িত্বশীল না থাকেন৷ এখন ধরেন এই ধরনের বিজ্ঞাপন যেটা তৈরি হয়, সেটার জন্য এজেন্সি যতটুকু দায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও একই পরিমাণ দায়ী৷ কারণ ক্লায়েন্টতো এটা দেখেই দেয়৷ গত ১৮-২০ বছর এই সেক্টরে কাজ করে আমি যেটা দেখেছি, মিথ্যা কথা বলে হয়তো আপনি সাময়িক কিছু সুবিধা পাবেন৷ তবে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারবেন না৷ মিথ্যা বলে কেউ বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি৷ একবার, দুইবার হতে পারে, তৃতীয়বার অবশ্যই সে ধরা খাবে৷ মানুষ বিষয়টা বুঝতে পারবে৷
বিজ্ঞাপনে কী পরিমাণ বিনিয়োগ আছে?
এটা আসলে এক কথায় বলা সম্ভব নয়৷ মিডিয়া বায়িংসহ যদি ধরেন তাহলে তো আমি বলেইছি, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো হবে৷ এখানে বিনিয়োগ তার চেয়ে কিছু বেশি হবে৷
এ মন্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত? লিখুন নীচের ঘরে৷