1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মামলার হুমকি গোলাম আরিফ টিপুর

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজাকারের তালিকায় এসেছে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের নাম৷ এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে৷ তালিকায় নাম রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নামও৷

https://p.dw.com/p/3UwX6
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলেকে জনাব টিপু বলেছেন, ‘‘তারা এটা ঠিক না করলে আমি মামলা করব৷ একটা ভালো উদ্যোগকে নষ্ট করতে এটা ষড়যন্ত্র৷'‘

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নিজেরা কোনো তালিকা প্রস্তুত করিনি৷ এই তালিকাটি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছি৷ যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তালিকাটি করেনি৷ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা যে তালিকা করেছিল, সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল৷ আমরা শুধু তা প্রকাশ করেছি৷ সেখানে কার নাম আছে, আর কার নাম নেই সেটা আমরা বলতে পারব না৷'‘ তিনি বলেন, ‘‘একই নামে তো অনেক মানুষ থাকতে পারে৷ আর একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসবে কেন, এটা হতে পারে না৷ আর যদি আসেও সেটা পাক বাহিনীর ভুল৷ যদি মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় এসে থাকে, তবে আমরা সেটা যাচাই করে দেখব৷ কেউ আমাদের কাছে এলে আমরা দেখব৷'‘

রোববার প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ যাচাই-বাছাই করে পর্যায়ক্রমে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী৷

আ ক ম মোজাম্মেল হক

সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় নিজের মুক্তিযোদ্ধা বাবার নাম এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী৷ সোমবার মনীষা চক্রবর্তী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ৷ ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে৷ সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে৷ আমার বাবা এডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং-১১২ পৃষ্ঠা-৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নাম্বার রাজাকার৷'‘

তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমার ঠাকুরদা এডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে৷ তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত৷ তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷'‘

গোলাম আরিফ টিপু

প্রকাশিত ওই তালিকায় রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ সংগঠকের নাম রয়েছে৷ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের পরিবারের সদস্যরা৷ প্রকাশিত তালিকার ১৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় রাজশাহীর পাঁচজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নাম রয়েছে৷ এরা হলেন, ১. আহমেদ আব্দুর রউফ, ২. মো. মহসিন, ৩. আব্দুস সালাম, ৪. গোলাম আরিফ টিপু ও ৫. এসএস আবু তালেব৷ গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘‘যারা এই তালিকাটি করেছেন, তাদের এ নিয়ে কোন জ্ঞান নেই৷ তালিকাটি যখন তারা প্রকাশ করেছে দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে৷ এ নিয়ে ইতিমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়েছে৷‘'

তালিকায় উঠে এসেছে বরগুনার পাথরঘাটার মুজিবুল হকের (নয়া ভাই) নাম৷ বরিশাল বিভাগের ১৩৫ নম্বরে রয়েছে তার নাম৷ তিনি মারা গেছেন৷ তার ছেলে এডভোকেট রেজাউল হক শাহীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার বাবা ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম কমিটি হয়েছিল, আমার বাবা ছিলেন সেই কমিটির সভাপতি৷ তিনি মুক্তিযুদ্ধে একজন সংগঠক৷ ১৯৮৬ সালে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনও করেছেন৷‘' হঠাৎ করে তার নাম রাজাকারের তালিকায় কিভাবে এল? জানতে চাইলে জনাব শাহীন বলেন, ‘‘একটি ভালো উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য এটা করা হয়েছে৷ এটা চক্রান্তের অংশ বলেই আমি মনে করি৷'‘

জানা গেছে, প্রকাশিত তালিকায় বগুড়ার আদমদীঘিতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যসহ একডজনের বেশী শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতাদের নাম ছাপা হয়েছে৷ এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে৷ বিভ্রান্তিকর তালিকা তৈরীর সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন তারা৷