মানুষের বায়নায় রোবটের কাজ
১০ জুন ২০১৫শিল্পকলা নাকি শুধু কাজের জিনিস? এর নাম ডিজাইন ফোর পয়েন্ট জিরো৷ রোবটের হাত শক্ত স্পঞ্জ কিউব দিয়ে এ সব তৈরি করছে৷ ডিজিটাল ডিজাইনার রিড ক্র্যাম বলেন, ‘‘একেবারে মৌলিক অবস্থায় এটাকে বসার টুল, সাইড টেবিল ইত্যাদি নানাভাবে বাড়ির কাজে লাগানো যায়৷ কিন্তু মানুষই এর সীমাহীন ব্যবহার করে দেখাচ্ছে, যার অনেকগুলি এমনকি আমরাও কল্পনা করতে পারি না৷''
এই ‘ইনস্টলেশন'-এর নাম ‘রোবোচপ'৷ এটা অনেকটা থ্রিডি প্রিন্টারের মতো কাজ করে, তবে অনেক ভালো ও দ্রুত, সেইসঙ্গে আরও ইন্টারঅ্যাকটিভ৷ কারণ ইউজার তার ডিজাইন সরাসরি রোবটকে পাঠিয়ে দিতে পারে৷ একটি ওয়েবসাইটে সে নিজস্ব ডিজাইন অনুযায়ী একটি কিউব-কে পছন্দমতো গড়ে তুলতে পারে৷ তারপর রোবোচপ তার বাস্তব রূপ দেয়৷ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ হয়ে যায়৷ একজন বললেন, আগে এমনটা সম্ভবই ছিল না৷ ডিজাইনার না হয়েও এমন কিছু গড়ে তোলা যায়৷
জার্মানির ক্লেমেন্স ভাইসহার ও সুইডেনের রেড ক্রাম রোবোচপ উদ্ভাবন করেছেন৷ তাঁদের তৈরি করা রোবট ‘ডিজিটাল ইকোনমি'-র প্রতীক – অর্থাৎ ডিজিটাল ও শিল্পজগতের সংমিশ্রণ৷ ক্লেমেন্স ভাইসহার বলেন, ‘‘সব যন্ত্র কম্পিউটার-চালিত, তাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত করলে অনেক বাড়তি ক্ষমতা পাওয়া যায়৷ আমরা এখানে যা করছি, সেটা অনেকটা তারই এক ‘এক্সট্রিম' উদাহরণ৷ আমরা সব সীমা ভেঙে দিয়ে ব্যবহারকারী ও যন্ত্রের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করছি৷''
চলতি বছর জার্মানির হানোফার শহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্পমেলায় প্রায় ৩,৩০০ সংস্থা ভবিষ্যতের দিশা তুলে ধরেছিল৷ তার একটি বিষয় ছিল ‘ডিজাইন ফোর পয়েন্ট জিরো', যার মূলমন্ত্র হচ্ছে কনজিউমার বা গ্রাহকই উৎপাদন করবে৷ এই সফটওয়্যারের সাহায্যে সে কোনো ছবি ত্রিমাত্রিক মডেলে পাঠিয়ে থ্রিডি প্রিন্টিং করতে পারবে৷
নতুন এক ‘পিক-টু-কমিক-অ্যাপ' ছবি ও ভিডিও বিকৃত করে দেয়, যাতে ফেসবুক-এর মুখ চেনার ক্ষমতা সেগুলির উপর খাটানো সম্ভব না হয়৷ এক দর্শক বললেন, তিনি কারো মর্জির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো নির্দেশ দিতে পারেন৷ এ যেন মুক্তির এক অনুভূতি৷
ক্লেমেন্স ভাইসহার ও রেড ক্রাম নিজেদের জগতে ‘নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল ডিজাইনার' হিসেবেই পরিচিত৷ মিউনিখে তাঁদের স্টুডিওয় তাঁরা ‘রোবোচপ' উদ্ভাবন করেন৷ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এর জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার গড়ে তোলা৷ ভাইসহার বলেন, ‘‘একবিংশ শতাব্দীর উপকরণ হলো সফটওয়্যার – অর্থাৎ কম্পিউটার কোড৷ এটা একটা টেক্সট ফাইল, যার মধ্যে কম্পিউটারের ডেটা প্রসেসিং-এর নির্দেশিকা রয়েছে৷ আজকাল সে সব দিয়েই পণ্যের রূপ দেওয়া হয়৷ বাস্তব আর ডিজিটাল জগতের মধ্যে ফিকে হতে থাকা সীমাই আমাদের জন্য ইন্টারেস্টিং৷
বাস্তব আর ডিজিটাল জগতের মধ্য নেটওয়ার্কিং-এর আরেকটি উদাহরণ ‘আর-এইটিন উলট্রা চেয়ার' নামের এক কার্বন চেয়ার৷ সেন্সর-এর সাহায্যে বসার সময় চেয়ারের উপর চাপ নির্ণয় করা হয়৷ কয়েক'শ মানুষ এই সেন্সর-লাগানো চেয়ারে বসেছেন এবং এভাবে তারাও ‘স্রষ্টা' হয়ে উঠেছেন৷ ডিজিটাল ডিজাইনার রিড ক্র্যাম বলেন, ‘‘শুধু রেসিং কার তৈরির সময়ই সেন্সরের ব্যবহার হয় না৷ এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে৷ ইন্টারনেটে কিছু করলেই যেমন কেউ না কেউ তা টের পায়৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও চারিদিকে সেন্সর লাগানো থাকে৷ এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে হালকা চেয়ার তৈরি করা এবং ডিজাইন প্রক্রিয়ার সময় সবকিছু ‘অপটিমাইজ' করা৷''
এই উদ্ভাবক-জুটি মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে সীমা বার বার অস্পষ্ট করে তোলেন৷ ২০১০ সালে তাঁরা লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়্যারে রোবট-দের বার্তা আকাশে প্রোজেক্ট করেছিলেন৷ সারা বিশ্বের ইউজাররা সেই সব বার্তা পাঠিয়েছিলেন৷ তারা আবার সেই বার্তা ভিডিও হিসেবে ফেরত পেয়েছিলেন৷ ফলে তারা বেশ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন৷