‘মানবাধিকারের ব্যাপারে সরকার উদাসীন’
১৭ এপ্রিল ২০১৩মানবাধিকারের দিকে কারো কোনো নজর নেই৷ একের পর এক মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে, গুম হচ্ছে – তাদের উদ্ধারে কোন চেষ্টাই করছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷ একটা সভ্য রাষ্ট্রে এভাবে চলতে পারে না৷ নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের-রাষ্ট্রের৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মানবাধিকারের ব্যাপারে সরকার চরম উদাসীন৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান৷
এলিনা খান বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন এক বছর৷ বুধবার তার নিখোঁজ হওয়ার এক বছর পূর্ণ হল৷ কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে উদ্ধারের ব্যাপারে আন্তরিক কোন পদক্ষেপ এখনও চোখে পড়েনি৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দায়সারা ভাবে কিছু লোক দেখানো অভিযান চালিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে৷ এর আগেও রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও নিখোঁজ হয়েছেন৷ কিন্তু একজনকেও সরকার খুঁজে বের করে পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারেনি৷ এমনকি নিখোঁজ কোন ব্যক্তির লাশও উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷ নদী-খাল-বিলে যে দু'একটি মানুষের কঙ্কাল মিলেছে, তাও সনাক্ত হয়নি৷ আসলে সভ্য সমাজে খালবিলে মানুষের কঙ্কাল মিলবে – তা মেনে নেয়া যায় না৷
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল৷ তাঁর ড্রাইভার আনসার আলীও সেই থেকে নিখোঁজ৷ বুধবার তাদের নিখোঁজ হওয়ার এক বছর পূর্ণ হল৷ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও অবুঝ সন্তানদের অবিশ্রান্ত খোঁজাখুঁজির পরও মেলেনি তার সন্ধান৷ স্বজনদের ধারণা – এখনও ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন? সরকারের কোনো সংস্থা তাকে লুকিয়ে রেখেছে? যে কোন মূল্যে সরকারের কাছে স্বামীকে ফেরত চান তাহমিনা রুশদীর লুনা৷ জীবিত না হলেও অন্তত স্বামীর লাশটি চান তিনি৷
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের জন্য সব রকম প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে এখন পর্যন্ত তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি৷ তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে নেয়নি৷ বরং রাজনৈতিক ও পারিবারিক কোন কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে গুম করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা৷ মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর নেই – এমন কথাও মানতে রাজি নন গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্তা৷
সর্বশেষ রাজধানীর মাজার রোড থেকে গত ৪ এপ্রিল ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মফিজুল ইসলাম রাশেদ নামে একজন ছাত্রদল নেতাকে অপহরণ করা হয়েছে৷ তিনি দারুস সালাম থানা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি৷ গত ১৩ দিন ধরে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় নিখোঁজ রাশেদের স্বজনরা দারুস সালাম থানায় জিডি করেছেন৷ স্বজনরা জানান, থানা ও ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি তারা৷ রাশেদ মিরপুর মাজার রোডে দ্বিতীয় কলোনির ৬৩ বি/এ নম্বর বাসার মরহুম শহিদুল ইসলামের ছেলে৷
রাশেদের স্ত্রী রুমা বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, গত ৪ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে মিরপুর মাজার রোডের দ্বিতীয় কলোনির ডায়মন্ড গার্মেন্টের সামনের রাস্তা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৫/৬ জন রাশেদকে একটি কালো রঙের নোয়া গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়৷ ওই ব্যক্তিদের পরনে ডিবি পুলিশ লেখা জ্যাকেট ছিল৷ রাশেদের বড় ভাই জাফর আহমেদ বলেন, গত ১৩ দিন ধরে দারুস সালাম থানাসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে তার কোন খবর মেলেনি৷