1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানববন্ধনের পর অবরোধের ঘোষণা বিএনপির

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ ডিসেম্বর ২০২৩

ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের বাধায় বিএনপির সমাবেশ পন্ড হওয়ার ৪৩ দিন পর দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককে আবার রাজপথে দেখা গেল রোববার৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা৷

https://p.dw.com/p/4ZzGQ
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন থেকে নানা ইস্যুতে সভা-সমাবেশের আরো কর্মসূচি দেয়া হবে যাতে সেসব কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন৷
ঢাকায় বিএনপির মানববন্ধনছবি: Mortuza Rashed/DW

বিএনপি রোববার সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে৷ অন্যদিকে দলটি মঙ্গলবার থেকে আবার টানা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে সারাদেশে৷

বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন থেকে নানা ইস্যুতে সভা-সমাবেশের আরো কর্মসূচি দেয়া হবে যাতে সেসব কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন৷ নেতা-কর্মীদের মাঠে সক্রিয় করাই হবে এইসব কর্মসূচির আসল উদ্দেশ্য৷ আর ১৭ ডিসেম্বরের পর থেকে নির্বাচনে যাতে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে না যায় সেজন্য সারাদেশে গণসংযোগসহ আরো কর্মসূচি দেবে বিএনপি৷ নেতা-কর্মীরা ওইসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন৷ বিএনপি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ 

‘হরতাল-অবরোধেও এখন থেকে মাঠে থাকতে হবে’

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতা এবং সমাবেশ পন্ড হওয়ার পর দিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখনো তিনি জামিন পাননি৷ তাকে গ্রেপ্তারের পর একে একে শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকেই আটক করা হয়েছে৷ তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীও এখন কারাগারে৷

কারাগারের বাইরে থাকা নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান৷ এরপর গত ২৮ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির আটক নেতা-কর্মীদের স্বজনদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে কয়েকজন নেতাকে দেখা যায়৷ একইদিন আরেকটি কর্মসূচিতে একজন বিএনপি নেতা ছিলেন৷ আর রোববারের মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচিতে আরো বেশি কেন্দ্রীয় নেতাসহ অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন৷

মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক, মোস্তাাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, তাইফুল ইসলাম টিপু, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতানা আহমেদ, রেহানা আখতার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন৷

মানববন্ধনে সেলিমা রাহমান বলেন, ‘‘১৫ বছর ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা করে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে৷ গত এক মাসেই বিএনপির প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরে যত নিপীড়ন হচ্ছে, তা বিশ্বের আর কোথাও নেই৷ বাবাকে না পেলে ছেলেকে, ছেলেকে না পেলে বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে৷'' 

মানববন্ধনে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও অংশ নেয়৷ আর বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নগারীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করে৷ মানববন্ধন চলাকালে প্রেসক্লাবসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ছিলো৷

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগামীতে এই ধরনের কর্মসূচি আরো আসবে এবং সেই কর্মসূচিতে কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন৷ হরতাল-অবরোধেও এখন থেকে মাঠে থাকতে হবে৷ আগে তো আমরা তাই করতাম৷ আর ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষ হলে সারাদেশেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে নামবেন৷ এই নির্বাচনের বিরুদ্ধেতো আমরা৷ সেটার কারণতো জনগণকে বোঝাতে হবে৷ তারা যাতে নির্বাচনে ভোট না দেয় সেজন্যতো মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ সেটা আমরা করব৷''

তার কথা, ‘‘পুলিশের কাজই হলো এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমন করা৷ তাদের গ্রেপ্তার করা৷ তাই বলে আমাদের বসে থাকলে চলবেনা৷ আমাদের অনেক কমিটি আছে৷ নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে তারা তো কমিটির সবাইকে নিয়ে জেলে যাননি৷ যারা বাইরে আছেন তাদের মাঠে থাকতে হবে৷''

আর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘আমাদের নেতা-কর্মীরা অনেকেই এখন কারাগারে৷ বিরোধীদের আন্দোলন দমাতে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে৷ তাই আমাদের বাইরে যারা আছেন তারা গ্রেপ্তারও এড়াচ্ছেন, আন্দোলনেও থাকছেন৷ বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের মানববন্ধনে আমাদের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন৷ ভবিষ্যতে আমরা আরো এই ধরনের কর্মসূচি দেব যাতে মানুষ জমায়েত হয়, সম্পৃক্ত হয় এবং নেতা-কর্মীরাও মাঠে নামতে পারেন৷''

তার কথা, ‘‘সরকার একটা প্রহসনের নির্বাচন করছে ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য৷ দেশের মানুষ এটা জানে৷ তাই এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে আরো সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি আমরা দেব৷ সেই কর্মসূচিতেও আমাদের নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে থাকবেন৷'' 

‘সরকার একটা প্রহসনের নির্বাচন করছে ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য’

বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো গত ২৯ অক্টোবর থেকে ৮ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত মোট ১০ দফায় ২১ দিন অবরোধ ও চার দিন হরতাল পালন করে৷ এসব হরতাল অবরোধে সাপ্তাহিক ছুটির দুটি দিন এবং সপ্তাহের মাঝে মঙ্গলবার বিরতি রাখে দলটি৷ এছাড়া সরকারি ছুটির দিনও কর্মসূচি রাখেনি তারা৷ ৪৩ দিন পর বিএনপি ও সমমনারা আবার মানববন্ধনের মাধ্যমে মাঠে জমায়েতের কর্মসূটি পালন করল যাতে কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে ব্যানারসহ বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন৷

ফের ৩৬ ঘন্টার অবরোধ:

সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনের তফসিল বাতিল ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১২ ডিসেম্বর (মঙ্গবার) ভোর ছয়টা থেকে ১৩ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আবারো অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি৷ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী রোববার বিকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ দলটি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি নিয়েছে৷

রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ‘‘২৮ অক্টোবর থেকে এপর্যন্ত বিএনপির ২৩ হাজার ৭৬৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ মামলা দেয়া হয়েছে ৯৮৯টি৷ রোববার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২০ জনকে৷