মাথা ব্যথা কমাতে ব্যথানাশকের যত বিকল্প

ঠিক এমন অবস্থাই হয়েছিল জার্মান তরুণী ইয়োনার৷ পরে তিনি একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন৷ সেখানে তাকে বিকল্প কিছু থেরাপি শেখানো হয়৷

ইয়োনা কোজারের মাথা ব্যথা গুরুতর মাইগ্রেনে রূপ নিয়েছিল৷ তার মধ্যে কিছু স্নায়বিক উপসর্গও দেখা দিয়েছিল৷ এই অবস্থায় মানুষ যা করে, ২১ বছর বয়সি ইয়োনা সেটিই করেছেন৷ ব্যথানাশক বা পেইনকিলার খেয়েছেন৷ প্রথমে কাজ হলেও মাথা ব্যথা ক্রমেই বেড়েছে এবং আরো গুরুতর হয়েছে৷

ইয়োনা জানান, ‘‘আমি প্রায়ই পেইনকিলার খেতাম, কারণ, মাঝেমধ্যে আমি কিছুই করতে পারতাম না- অথচ আপনাকে কাজ করতে হবে৷ আমি উচ্চমাত্রার ব্যথানাশক খেতাম৷''

ইয়োনা মাথা ব্যথার চিকিৎসার জন্য পরিচিত এক বিশেষ ক্লিনিকে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি জানতে পারেন যে, নিয়মিত ব্যথানাশক খাওয়ার জন্য তার মাইগ্রেন আরও খারাপ হয়েছে৷ অনেকটা দুষ্ট চক্রের মতো... চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে ব্যথানাশক-প্ররোচিত মাথা ব্যথা বলে৷

নিউরোলজিস্ট ডা.কারোলিন ইয়াগেলা বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, পেইন রিসেপ্টরগুলোর অতিসংবেদনশীলতার কারণে এটা হয়৷ পেইন রিসেপ্টর নিয়মিত উদ্দীপিত হতে থাকে৷ একটা সময় সেগুলো ফিডব্যাক মেকানিজমের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়, এবং তাদের উপর ওষুধ আর প্রভাব ফেলতে পারে না৷ তারা এত বেশি উদ্দীপিত হয়ে ওঠে যে, বলতে গেলে, সেগুলো ব্যথার কারণ হতে পারে৷''

ডাক্তাররা প্রথমে ইয়োনার নিউরোলজিক্যাল চেকআপ করেন, পরে দ্বিতীয় ধাপের উপসর্গগুলো পরীক্ষা করেন৷ ইয়োনার এখন যে ধরনের ব্যথা হচ্ছে, সেটি স্ট্রোকের আগের ধাপ হতে পারে- যদিও ইয়োনার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা তা মনে করছেন না৷ তবে তাকে পেইনকিলার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে৷

পেইন থেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. এস্টেল নিব বলেন, ‘‘মাইগ্রেন ও মাথা ব্যথার ওষুধ খাওয়ায় বিরতি দেওয়ার বিষয়টিকে আমরা ‘ওষুধ বিরতি' বলি- এটা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা নয়৷ রোগী চেয়েছেন বলে নয়, তিনি যেন দৈনন্দিন কাজ করতে পারেন সেজন্য পেইনকিলার খেয়েছেন৷ এই চক্র বন্ধ করতে আমরা ‘ওষুধ বিরতি'র সময় ব্যবহার করা যায় এমন ওষুধ খাওয়ার কথা বলি৷''

এর মানে হলো আর কোনো পেইনকিলার নয়৷ এর পরিবর্তে প্রথম কয়েকদিনের জন্য কোর্টিসন দেই, এবং তারপর এন্টিডিপ্রেসেন্ট৷ তবে সমন্বয় সহজ নয়৷

ইয়োনা বলেন, ‘‘এটা কঠিন! মাঝেমধ্যে আমি বলি, ‘আমি কি কিছু খেতে পারি?' কিন্তু আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে ও ভাবতে হবে যে, ‘আপনি এখন এটা করবেন৷ প্রথমে এটা কঠিন, কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যায়৷'''

একে ‘মাল্টিমোডাল ট্রিটমেন্ট' বলা হয় যার উদ্দেশ্য সাহায্য করা৷ এর একটি উপাদান হলো পেশী শিথিলকরণ৷

এর সঙ্গে একটি ব্যায়াম জড়িত, যা রোগীকে ব্যথার স্থান খুঁজে পেতে সহায়তা করে৷

আচরণগত থেরাপির মাধ্যমে ইয়োনা মাইগ্রেন ও নিয়মিত পেইনকিলার ব্যবহারের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে জানতে পারেন৷ অনেক ওষুধ নেওয়ার পরিবর্তে তাকে নতুন সমাধান খুঁজে পেতে হবে৷

নিউরোলজিস্ট ডা.কারোলিন ইয়াগেলা বলেন, ‘‘তার অ্যাটাক হতে পারে- এই ভয় থেকে তিনি অনেক বেশি ওষুধ সেবন করছিলেন৷ এটাই তার জন্য কাল হয়েছিল৷ তাকে এমন মানসিকতা থেকে বের করে আনা এবং তিনি মেনে চলতে পারেন এমন কিছু আচরণগত নীতি দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷''

বিকল্প চিকিৎসার মধ্যে ছিল ফিজিওথেরাপি৷ ইয়োনার ঘাড় ব্যথার সঙ্গে মাইগ্রেন জড়িত৷ এমন চিকিৎসা শুরুতে তাকে সহায়তা করেছিল৷

এই প্রক্রিয়ায় ফিজিওথেরাপিস্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল৷

চিকিত্সার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ব্যায়াম, যেমন, ধৈর্য শেখার জন্য হাঁটা৷ আরেকটি সহায়ক বিষয়: ইয়োনার টানটান পেশি শিথিল করা ও তার প্রধান ট্রিগার ফ্যাক্টর চাপের সঙ্গে লড়া৷ কোনো ব্যথানাশক ছাড়াই ১৬ দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ায় তার শরীরে কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷

ইয়োনা বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি, যাওয়ার সময় আমার শরীরের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি শক্তি অনুভব করছি৷ অর্থাৎ আমি জানি, আমি কোথায় শুরু করতে পারি, নিজের জন্য কী করতে পারি৷ এটা একটা চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আমার স্পিরিটটা ভালো আছে৷''

নিজের দৈনন্দিন জীবনে বিকল্প থেরাপিগুলো মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে ইয়োনা৷ তিনি আশা করছেন, সামনের দিনগুলোতে মাইগ্রেনে ব্যথা কম হবে এবং তিনি ব্যথানাশক কম করে ব্যবহারের চেষ্টা করবেন৷

আন্দ্রেয়াস ক্যুর্টেন/জেডএইচ