1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাঠ হারিয়ে বিপাকে মধ্যবিত্তরা

৩ জুলাই ২০২০

গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে৷ বেড়েছে মধ্যবিত্তের বিস্তৃতি৷ কিন্তু সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কমেছে তার প্রভাব প্রতিপত্তি৷

https://p.dw.com/p/3ejrb
Bangladesch Dhaka Mittelschicht leidet unter Corona-Pandemie
ছবি: DW/Sazzad Hossain

ঋণ দেয়ার সুবিধার্থে সদস্য দেশগুলোকে আয়ের ভিত্তিতে চারটি ভাগে ভাগ করে বিশ্বব্যাংক৷ কোনো দেশের জনগণের গড় মাথাপিছু আয় ১০৩৬ ডলারের কম হলে সে দেশটি নিম্ন আয়ের হিসেবে বিবেচিত হয়৷

২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল এই কাতারে৷ মাথাপিছু আয় ১০৩৬ থেকে ৪০৪৫ ডলার হলে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, ৪০৪৬ থেকে ১২,০৪৫ ডলার হলে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ৷ সবশেষটি উচ্চ আয়ের দেশ, এজন্য মাথাপিছু আয় হতে হবে ১২ হাজার ৫৩৫ ডলারের বেশি৷

২০১৫ সালের বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে৷ মধ্যবিত্তের যেমন আত্মসম্মানবোধ প্রবল, বিপদে পড়লেও কারো কাছ থেকে দয়াদাক্ষিণ্য নেয় না, একইভাবে এই ক্যাটাগরিতে থাকা দেশগুলোর জন্য স্বল্প সুদের ঋণসহ অনুদানের সুযোগ সুবিধাগুলো নেই, যেমনটা আছে নিম্ন আয়ের দেশের জন্য৷

আর্থিক ও সামাজিক সামর্থের বিচারে দেশগুলোকে স্বল্পোনন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত এই তিন ভাগে ভাগ করে জাতিসংঘ৷ বাংলাদেশ আছে সবচেয়ে নিচে, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাতে৷ যদিও সেখান থেকে উত্তরণে যে শর্তগুলো রয়েছে দুই বছর আগেই সেগুলো পূরণ হয়ে গেছে৷ এই ধারা বজায় থাকলে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাবে৷ এতে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছ থেকে এখন যেই সুবিধাগুলো মিলছে, সেগুলো আর পাওয়া যাবে না৷

সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে এখন বড়সড় একান্নবর্তী মধ্যবিত্ত এক পরিবারের সঙ্গেই তুলনা করা চলে৷ পরিবারের সবার আর্থিক স্বচ্ছলতা যে একরকম, তা নয়৷ বেশিরভাগের অবস্থাই টানাটানির৷ তার মধ্যেই দু-একজন, আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে অবাক করা সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছেন৷ তাদের হাতেই সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রণ৷ সব সুযোগ সুবিধাও তারা নিজেরাই ভোগ করতে চান, বাকিদের প্রাপ্যটা নিয়েও টানাটানি করেন৷ পরিবারের কর্তৃত্ব যার হাতে, তিনিও সমস্ত কিছুতে তাদের পক্ষেই অবস্থান নেন, সিদ্ধান্ত দেন৷ সদস্যদের যাদের অবস্থা একেবারে নিচে তারা মাঝেমধ্যে প্রতিবাদ করেন, কিছুটা প্রাপ্য আদায় করে নেন৷ মাঝখানে যারা আছেন তাদের তেমন কোন উচ্চবাচ্য নেই৷ খারাপ বা ভাল যাই থাকেন না কেন, বাইরে বেশ পরিপাটি এক ভাব নিয়ে চলেন৷ তাই তাদের প্রকৃত অবস্থা বোঝাটা মুশকিল৷ আগে মাঝে মধ্যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন এখন তা-ও করেন না, সবার সঙ্গে আপোষ করে চলেন৷ কখনো কখনো পরিবারে যে তাদের অস্তিত্ব আছে তা টেরই পাওয়া যায় না৷

মধ্যবিত্তের হাত ধরেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল৷ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সংগ্রাম সবকিছুতে তারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ সংস্কৃতি বিনির্মাণ করেছেন, নিজেদের শিক্ষিত হিসেবে বিকশিত করেছেন৷ দেশের রাজনীতিতেও একসময় তাদেরই আধিপত্য ছিল৷ অথচ এই মধ্যবিত্তকে এখন কর্মসংস্থানের বাজার আর বিনোদন কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না৷

নিজেদের তৈরি করা জায়গা তারা ছেড়ে দিয়েছেন উঠতি ধনিক শ্রেণির হাতে৷ এই উচ্চবিত্তের প্রতিপত্তি দিন দিন এতই বাড়ছে যে, ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে গোটা বিশ্বকেই এখন বাংলাদেশ পেছনে ফেলে দিয়েছে৷ রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদেও তাদের আধিপত্য৷ সরকার তাদের সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিতেই কাজ করে৷ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে শ্রমিকরা লড়াই করে কিছুটা আদায় করে নিতে জানে, কিন্তু মধ্যবিত্ত সেটাও পারে না৷ না আছে সে নীতিনির্ধারণে, না আছে মাঠে ময়দানে৷

DW-Mitarbeiter Porträt Faisal Ahmed
ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলেছবি: Masum Billah

আর্থিক স্বচ্ছলতার বিচারে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেনিরও স্ফীতি ঘটেছে তাতে সন্দেহ নেই৷ গত দুই দশকে দেশের কর্পোরেট ও সেবা খাত বিকশিত হয়েছে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জুটেছে৷ বোস্টন কনসালটেন্ট গ্রুপের ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী,  বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত ও স্বচ্ছল মানুষ রয়েছেন এক কোটি ২০ লাখ৷ প্রতিবছরই সেখানে আরো ২০ লাখ নতুন যুক্ত হচ্ছেন৷ ২০২৫ সালে তাদের সংখ্যা বেড়ে হবে তিন কোটি ৪০ লাখ৷ বোস্টনের প্রতিবেদন অনুযায়ী এরা উচ্চাভিলাষী, কেনাকাটায় বিদেশি ব্র্যান্ডকে গুরুত্ব দেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের খরচ বাড়াতে চান৷ তাদের জন্যই শহরগুলোতে একের পর এক শপিং মল উঠছে, রেস্টুরেন্টের ব্যবসা চাঙা হচ্ছে৷ মধ্যবিত্তরা কোথায় বুঁদ হয়ে আছেন সেটা এই প্রতিবেদন আর প্রবণতা থেকেই আঁচ করা যেতে পারে৷

তবে মধ্যবিত্তের আপাত সুখের এই জগতে হানা দিতে শুরু করেছে করোনা৷ এরই মধ্যে শহর ছাড়তে শুরু করেছেন নিম্নমধ্যবিত্তরা৷ বড় অংকের মাইনে পাওয়াদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে৷ নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না অনেকে, কেউ কেউ চাকরি হারাচ্ছেন৷ অনিশ্চিত সময় সামনে৷ উচ্চবিত্ত এরই মধ্যে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা আদায় করে নিয়েছে৷ অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে ৫০ লাখ নিম্নবিত্ত পরিবারকে৷ অন্যদিকে মধ্যবিত্ত কিছু পায়নি, এতটুকু অভিমান সে করতেই পারে৷ তার উপর বাজেটে নানামুখী খরচের চাপ বেড়েছে৷ বাস মালিকদের ক্ষতি পোষাতে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি আর বিদ্যুতের ভুতূড়ে বিলের মতো উটকো সব বোঝাতো আছেই৷ তারপরও সব সয়ে যাওয়ার এক অবাক করা শক্তি আছে তার ভিতরে৷ এই লড়াইয়ে মধ্যবিত্ত কতদিন আর টিকে থাকতে পারবে তাই এখন দেখার বিষয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান