1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মন্ত্রণালয়ের একপেশে ব্যাখ্যার বিজ্ঞাপন, প্রশ্নবিদ্ধ গণমাধ্যম

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ মে ২০২১

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকের পর সংবাদমাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার বিজ্ঞাপন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ প্রশ্নের মুখে এখন শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, যেসব সংবাদ মাধ্যম তা প্রকাশ করেছে, তারাও৷

https://p.dw.com/p/3tgJL
সাংবাদিক রোজিনাকে নিয়ে সংবাদপত্রে ছাপানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেছবি: bdnews24.com

বিজ্ঞাপন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের অনেকে বিষয়টিকে দেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন এবং মানহানিকর হিসেবে অভিহিত করেছেন৷ তারা বলছেন, কোনো পণ্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অসত্য এবং একপেশে তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায় না৷ আর সেটা প্রচার করা হলে যে সংবাদমাধ্যম প্রচার করেছে এবং যাদের বিজ্ঞাপন, তাদের উভয়েরই দায় থাকে৷

বাংলাদেশে সাধারণভাবে বিজ্ঞাপন-নীতিমালা বা আইন না থাকলেও সম্প্রচার নীতিমালা আছে আর তা সবার জন্যই প্রযোজ্য৷

এই নীতিমালার চতুর্থ অধ্যায়ে বিজ্ঞাপনের নীতিমালার কথা বলা হয়েছে৷ তাতে ২৬ ধরনের নীতির কথা বলা হয়েছে৷ মোটা দাগে নীতিগুলোর শিরোনাম হলো:

১,রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বক্তব্য ২. পণ্য, পণ্যের মান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ৩. মহান মুক্তিযুদ্ধ , ভাষা ও সংস্কৃতি ৪. শিশু ও নারীর অধিকার এবং ৫. বিবিধ

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি এই নীতিমালায় সরসরি না থাকলেও নিন্দা, অপপ্রচার ও কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি বিজ্ঞাপনের নীতিমালায় নিষদ্ধ করা হয়েছে৷

আশরাফ কায়সার

বিজ্ঞাপনী সংস্থা বেঞ্চমার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ কায়সার বলেন, ‘‘কোনো বিজ্ঞাপনে যদি কারুর চরিত্র হনন করা হয় বা যদি কোনো প্রোডাক্টের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়, তহলে এখানে আইন থাকুক বা না থাকুক তা আইন ও নীতিবিরোধী৷ আর এর জন্য যারা বিজ্ঞাপন দেবেন এবং যারা প্রচার বা প্রকাশ করবেন, উভয়ই দায়ী হবেন৷’’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারতে ম্যাগি নুডলজস-এর বিজ্ঞাপনে যেসব তারকা অংশ নিয়েছেন, আদালত তাদেরও দায়ী করেছেন৷

তিনি রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা’ হিসেবে প্রচার করা বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেআইনি ও নীতিবিরোধী কাজ করেছে৷ আর যেসব পত্রিকা এটা প্রচার করেছে, তারাও এই অপরাধে অপরাধী৷ কারণ ওই বিজ্ঞাপনে একপেশেভাবে রোজিনার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দেয়া হয়েছে৷ পত্রিকাগুলো তো ক্রস চেক না করে সবার বক্তব্য না নিয়ে খবর প্রকাশ করে না৷ তাহলে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশ করলো কেন?’’

যারা মন্ত্রণালয়ের এ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে ডেইলি স্টারও রয়েছে৷ দৈনিকটির সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তার এক লেখায় বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন যেহেতু সাংবাদিকরা বর্জন করেছেন, তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য যাওয়া দরকার৷ সেকারণেই বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে৷

তবে মাহফুজ আনামের এই ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আশরাফ কায়সার বলেন, ‘‘তার এই বক্তব্য আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ পত্রিকার মালিকরা তাদের রাজস্বের জন্য কম্প্রোমাইজ করেন৷ এখানেও তাই করেছেন৷’’

ইলিয়াস খান

এই ধরনের বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কি কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ প্রচলিত আইনে আছে? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘মানহানির মামলা করার সুযোগ আছে৷ এখানে মানহানির তিনটি উপাদনই আছে৷ আর সেই তিনটি উপাদান হলো: এটা প্রকাশিত হয়েছে, এটা মিথ্যা এবং মানহানিকর৷’’

এছাড়া বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও এর বিরুদ্ধে মামলা করা যায় বলে তিনি জানান৷ তিনি বলেন, আইনে যারা এটা প্রকাশ করেছেন তারাও আসামি হবেন৷ আর যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তারা তো হবেনই৷

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের কয়েকজন সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি৷

তবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘‘যে পত্রিকাগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞাপন ছেপেছেন, তারা চরম নিন্দনীয় কাজ করেছেন৷ তবে আমি মনে করি, এটা সাংবাদিকরা করেনি৷ মালিকপক্ষ করেছেন৷ কারণ, আমরা জানি মালিকপক্ষ এখন শুধু ব্যবসা করার জন্য পত্রিকা বা গণমাধ্যম চালাচ্ছে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থের ব্যাপারে তাদের কোনো ভূমিকা নেই৷’’

‘‘আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই বিজ্ঞাপন দিয়ে অনুচিত কাজ করেছে৷ তারা অসত্য তথ্য দিয়েছে,’’ বলে মনে করেন তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান