1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে শাটডাউনের সুপারিশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ জুন ২০২১

বাংলাদেশ যদি এখনই সতর্ক না হয় তাহলে করোনা পরিস্থিতি ভারতের চেয়েও ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি৷ তাই তারা সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3vZO6
ঢাকা
ফাইল ছবিছবি: Mohammad P. Hossain/REUTERS

কিন্তু লকডাউন বা শাটডাউন যা-ই হোক না কেন, মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করবে কে? আর যারা গরিব মানুষ, তাদের খাবারের সংস্থানই বা হবে কিভাবে?

সাধারণ মানুষ তো বিধিনিষেধ মানছেনই না৷ মানছেন না দায়িত্বশীলরা৷ ফরিদপুরে এখন কড়া বিধিনিষেধ চললেও তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার জনসভা করেছেন সাবেক এমপি এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য আব্দুর রহমান৷ ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার আয়েশা শরিয়ত উল্লা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন৷ কয়েক হাজার লোকের উপস্থিতিতে তিনি সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যও দেন৷ তিনি নিজে মাস্ক ব্যবহার করেননি, আর যারা উপস্থিত ছিলেন তারাও করেননি৷ ছিলনা কোনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই৷  

এ নিয়ে কথা বলার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি৷ মোবাইল ফোনে এসএমএস-এরও জবাব দেননি তিনি৷

তবে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, ‘‘কড়াকড়ি আরোপের আগেই শুধু ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের অনুমতি নিয়েছিল তারা৷ কোনো সমাবেশের কথা ছিল না৷ কিন্তু কড়াকড়ি আরোপের পর তাদের অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ করেছিলাম, তারা শোনেননি৷ আমি নিজেও তাকে ফোনে চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু ফোনে পাইনি৷ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানের দিন এসি ল্যান্ডকেও পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু কাজ হয়নি৷ তারা অনুষ্ঠান করেছেন৷’’

তাদের অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ করেছিলাম, তারা শোনেননি: বোয়ালমারী ইউএনও

তিনি জানান, এখনো এনিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে৷ ওই সমাবেশের কারণে করোনায় বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি৷

বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের হার শতকরা ১০-এর নীচে নেমে গিয়েছিল৷ আর প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা নেমেছিল এক হাজারের নীচে৷ কিন্তু এখন সংক্রমণের হার ২২.২১ ভাগ আর প্রতিদিন সংক্রমণ প্রায় ছয় হাজার৷ মৃত্যুহার ১.৫৯৷ গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছেন ১০৮ জন, যা এই বছরে সর্বোাচ্চ৷ আর শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৬৯ জন৷

গ্রামাঞ্চলেও এখন করোনা ছড়িয়ে পড়েছে৷ খুলনা এখনো মৃত্যুর শীর্ষে আছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় সেখানে মারা গেছেন ২৭ জন৷ ঢাকা ২৫ জন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে৷ বরিশাল বিভাগে কেউ করোনায় মারা যাননি৷

জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি ডা. মো, শহীদুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে যে অবস্থা হবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না৷ ভারতের চেয়েও খারাপ হবে৷ তাই আমরা ১৪ দিনের জন্য পুরো দেশ শাটডাউনের সুপারিশ করেছি৷’’

এই শাটডাউন কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘জরুরি ওষুধ এবং খাদ্য সরবারাহ ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে৷ মানুষকে ঘরে থাকতে হবে৷ তা না হলে আমরা এখন যে জীবিকার কথা বলছি, খাদ্যের কথা বলছি, তার জন্য লোক থাকবে না৷ জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কী হবে?’’

ভারতের চেয়েও খারাপ হবে: টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি ডা. মো. শহীদুল্লাহ

তিনি বলেন, এর আগে সরকার কখনো লকডাউন, কখনো বিধিনিষেধ আরোপ করেছে৷ কিন্তু কোনোটাতেই কাজ হয়নি৷ কারণ, লকডাউন দিয়ে যদি সব কিছু খুলে রাখা হয় তাহলে তো কাজ হবে না৷ কাজ হয়ও নাই৷ তাই সত্যিকার অর্থে শাটডাউন দরকার৷ এটা ১৪ দিন করতে পারলে সংক্রমণ কমে যাবে৷ স্বাভাবিক হয়ে আসবে৷ বাঁচতে হলে যে-কোনো উপায়ে এটা করতে হবে৷’’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকার কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শাটডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ যেকোনো দিন থেকে এই শাটডাউন শুরু হতে পারে৷ জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে৷ কিন্তু নানা প্রেশার গ্রুপ এর বিরুদ্ধে কাজ করছে৷ তারা জীবিকা ও অর্থনীতির প্রশ্ন তুলছেন৷

তবে এই শাটডাউন দিয়ে দরিদ্র মানুষকে ঘরে রাখতে হলে তাদের খাদ্য সহায়তা দিতে হবে৷ আর যাদের অবস্থা ভালো তাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে৷ বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর তিন কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে৷ করোনায় আরো দুই কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে গেছে৷ তাদের পক্ষে ১৪ দিনের খাবার মজুত করা সম্ভব নয়৷ যদি শাটডাউন শুরু হয় তাহলে তাদের খাদ্যের সংস্থান কী হবে সরকার এখনো সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি৷ এখন করোনায় বিশেষ কোনো খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিও নেই৷ প্রচলিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পগুলোই চলছে৷ তবে সঠিক তথ্যভাণ্ডার না থাকায় বড় একটি অংশ এই কর্মসূচির আওতায় নেই৷

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘যদি আগের মতো লকডাউন বা শাটডাউন হয়, তাহলে তো আর কোনো কথা নেই৷ কিন্তু সত্যিকার অর্থে শাটডাউন হলে গরিব মানুষের খাবার বা অর্থের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে আগে৷ আর যারা দারিদ্র্য সীমার একটু উপরে আছে, তাদেরও দেখতে হবে৷ দেখতে হবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের৷ আর খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য