1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটের বাজেট পেশ করে মমতা ‘কল্পতরু' হলেন

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

লোকসভা ভোট আসছে। তাই চরম আর্থিক সংকটে থাকা পশ্চিমবঙ্গেও ‘ভোটের বাজেট' উপহার দিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।

https://p.dw.com/p/4cDQU
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
লোকসভা ভোটের আগে ছাত্র, যুব, নারী, শ্রমিক, সরকারি কর্মী সকলকে খুশি করতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: Niharika Kulkarni/NurPhoto/picture alliance

আর মাস কয়েক পরেই প্রধানত বিজেপি-র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নামতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই ভোটমুখি রাজ্য বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো কল্পতরুর ভূমিকায়। গত কয়েকমাস ধরে বারবার করে আর্থিক সংকটের কথা শুনিয়েছেন মমতা। কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার যখন বাজেট পেশ করলেন, তখন দেখা গেল, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে মেয়েদের  দেয়া টাকার পরিমাণ পাঁচশ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার করা হলো। দলিত ও আদিবাসীরা পাবেন বারোশ টাকা করে।

শুধু তাই নয়, যে ডিএ বা মহার্ঘভাতা দেয়া নিয়ে এত ঝামেলা, তা-ও চার শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে, রাজ্যের যে যুবকরা চাকরি পাননি, তাদের বছরে ৫০ দিনের কাজ দেয়া হবে। মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৎসজীবীরা এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঠিকভাবে মাছ ধরতে পারেন না। তাদের তখন মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হবে।

চুক্তির ভিত্তিতে যে গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের নেয়া হয়, তাদের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে সাড়ে তিন হাজার ও তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। তাছাড়া অবসরকালীন অর্থের পরিমাণও তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। সিভিক ভলেন্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ, গ্রিন পুলিশের বেতন এক হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। মিড ডে মিল যারা রান্না করেন এবং যারা জোগাড় দেন, তারাও পাঁচশ টাকা করে বেশি পাবেন। ২১ লাখ শ্রমিকের বকেয়া অর্থও রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাজ্যের সব পরিযায়ী শ্রমিক স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন বলে অর্থ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এবার একাদশ শ্রেণিতে উঠলেই পড়ুয়ারা স্মার্ট ফোন বা ট্যাব পাবে।

রাজ্য বাজেটে যে সব প্রস্তাব রয়েছে, তাতে সরকারি কর্মী, নারী, যুব, শ্রমিক, কৃষকরা লাভবান হবেন।

অর্থ আসবে কোথা থেকে?

পশ্চিমবঙ্গে যে রাজ্য সরকারের হাতে টাকা নেই, তা ওপেন সিক্রেট। রাজস্ব আদায়ও এমন কিছু বাড়েনি, যা দিয়ে এত খরচের ধাক্কা সামলানো যাবে। তাহলে এই যে কল্পতরু হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে খুশি করতে চেয়েছেন, সেই টাকাটা আসবে কোথা থেকে?

এককথায় বলতে গেলে ঋণ করে। ভারতের এক দার্শনিক সম্প্রদায় আছে, যাদের বলা হয় চার্বাক। তাদের প্রধান কথাই ছিল, ঋণ করে হলেও ঘি খাও। কাল কী হবে, তা কেউ জানে না। তাই যতদিন বাঁচবে, সুখে বাঁচ। মমতা সরকার বাজেট পেশ করার পর বামপন্থি থেকে শুরু করে অনেক অর্থনীতিবিদদের মুখে চার্বাকের কথা শোনা যাচ্ছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, এভাবে সমানে ঋণ করে ঘি খাওয়ার নীতি কি বিপর্যয় ডেকে আনবে?

চন্দ্রিমা যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে আগামী আর্থিক বছরে ঋণের বোঝা বেড়ে দাঁড়াবে ছয় লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা।  সেক্ষেত্রে বছরে সুদেআসলে ৭৬ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা মেটাতে হবে রাজ্য সরকারকে। সেটা মিটিয়ে উন্নয়নের জন্য বেশি অর্থ থাকবে না। আর সাধারণ মানুষকে খুশি করতে বিভিন্ন প্রকল্পে দানছত্র খুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেগুলিও বজায় রাখতে হবে। তাহলে টাকার যোগান হবে কী করে? রাজস্ব না বাড়লে তখন আবার ঋণ নিতে হবে। ফলে ঋণজালে জড়িয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকছে।

বাজেট-প্রতিক্রিয়া

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ''এত ভালো বাজেট কমই হয়। এটা এ টু জেড সকলের জন্য বাজেট। সবাই এতে উপকৃত হবে।''

বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''বাজেটে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। এই বাজেটে নির্বাচনি প্রচার ছাড়া আর কিছুই নেই। তামাং, ভুটিয়া, লেপচাদের জন্য, কুড়মিদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তাদের জন্য বোর্ড হয়েছে, কিন্তু কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ভালো করার কোনো কথা নেই।''

ভারত সরকারের সাবেক আর্থিক পরামর্শদাতা ও বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী বলেছেন, ''অনুদানের কথা বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আয়ের দিশা নেই। পরের সরকারের হাতে কোনো অর্থই থাকবে না।''

সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, ''বাজার থেকে ঋণ করে কাজ চালানো হচ্ছে। তাই আয়-ব্যয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।''

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ''লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা বাড়লো। মানুষ আবার চার্জড হবেন। আজকের বাজেটের পর বিজেপি বা বিরোধী শিবির চাপে থাকবে।  যাদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে ভোট চাইবে তৃণমূল। রামমন্দিরের মোকাবিলা করতে গিয়ে এভাবে সবাইকে পাইয়ে দেয়া হয়েছে। সব শ্রেণিকে দেয়া হয়েছে। মমতা একটা ন্যারেটিভ তৈরি করতে পেরেছেন।''

কিন্তু সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমার মনে হয়, এভাবে পাইয়ে দেয়ার রাজনীতি করে ক্ষয়টা হয়ত রোধ করা যায়, কিন্তু ভয়ংকর লাভ হয় না। পশ্চিমবঙ্গে ভোট করাতে হয়। তার জন্য সংগঠন লাগে। বাহুবলী লাগে। তৃণূলের ক্ষেত্রে এবার দেখা যাচ্ছে সংগঠন ভাঙছে। অনুব্রত ভোটের মাঠে নেই। শাহজাহান জনসমক্ষে নেই। সন্দেশখালিতে যা হচ্ছে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।''

শুভাশিসের মতে, ''ভারতের অন্য রাজ্যে রামমন্দিরের প্রভাব আছে। পশ্চিমবঙ্গে রামমন্দিরের থেকে মোদীর প্রভাব অনেক বেশি। সেই প্রভাব গতবারের থেকে কমেছে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। উত্তরবঙ্গ এখনো বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি। মমতা যে চাপে আছেন এবং এজন্যই সকলকে খুশি করতে চাইছেন তা তার বাজেট দেখেই বোঝা যাচ্ছে।''

জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, আনন্দবাজার)