1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জয়ের নিশ্চয়তা চায় সবাই, প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা ক্ষীণ

সমীর কুমার দে
৯ ডিসেম্বর ২০২৩

আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো শুধু নয়, বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও নির্বাচনে জেতার নিশ্চয়তা চান৷ এমনকি যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন, তারাও চাচ্ছেন জেতার নিশ্চয়তা৷

https://p.dw.com/p/4ZyA7
ভোটের লাইনে অপেক্ষমাণ ভোটারেরা৷
(ফাইল ছবি) ভোটাধিকার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন সাধারণ ভোটারেরা৷ছবি: Asif Mahmud Ove

আর তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতদিন ধরে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলছেন, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সবাইকে যদি জেতার নিশ্চয়তা দিতে হয় তাহলে নির্বাচন রূপ নেবে আনুষ্ঠানিতায়৷

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "আমাদের সঙ্গে তো আওয়ামী লীগের সমঝোতা হয়েছে৷ আমরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব৷''

কিন্তু সেখানে যদি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন, সেটা স্ববিরোধিতা হয়ে যাবে বলে মনে করেন জাসদ নেতা

তিনি বলেন, ‘‘সেই কারণে আমরা বলছি, আমাদের যে আসনগুলো দেয়া হবে, সেখানে আওয়ামী লীগের পদধারী কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন না৷ এই কথাগুলো আমরা ১৪ দলের সমন্বয়ককে বলেছি৷ দু'এক দিনের মধ্যে একটা সমাধান হয়ে যাবে৷''

বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে শুরু থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী৷ এখন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো আসন সমঝোতার দিকে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের সম্ভাবনা মিলিয়ে যাচ্ছে৷ জয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের মিত্র ও শরিক দলগুলো নৌকার সঙ্গে লড়াই নয়, ফাঁকা মাঠ চায়৷

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা) সরকারি দলের মুখোমুখি হতে রাজি নয়৷ আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও সরানোর শর্ত দিচ্ছে তারা৷ আবার নৌকার প্রার্থীরাও আগাম জয় নিশ্চিত করতে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটে চান না৷

সবাই যদি জেতার নিশ্চয়তা চায় তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কীভাবে হবে? জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আওয়ামী লীগ কীভাবে জেতার নিশ্চয়তা দেবে? আমরা তো কাউকে জেতার নিশ্চয়তা দিতে পারি না৷ জেতার নিশ্চয়তা দিতে পারে জনগণ৷''

নির্বাচন বিষয়ক আলোচনায় কাউকে জেতানোর নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, এমনকি জাতীয় পার্টির সঙ্গেও বৈঠক করেছি৷ সেখানে কাউকেই জেতানোর নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, আমরা বৈঠকে সেই কথাই বলছি, ভোট করে জিতে আসতে হবে৷''

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ১৫৪ এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ আওয়ামী লীগের ঘোষণা, ছিল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে৷ গত ৫ সেপ্টেম্বর বিবৃতিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ৷

গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মতবিনিময় সভায়ও একই আভাস দেওয়া হয়৷ এ কারণে নৌকা না পেয়ে বহু আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন৷

কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দলগুলো সাবেক বিএনপির এমপিসহ বহু আসনে প্রার্থী দিয়েছে৷ সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছোট দলগুলোও সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ২২১ আসনে প্রার্থী দিয়েছে৷ এই দলগুলোও ভোটে লড়ে জেতার পরিবর্তে, আসনের জন্য আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে ছাড় পাওয়ার আশায়৷ কিংস পার্টিও আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মুখাপেক্ষী৷

১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে৷ পুরো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ আমরা বলেছি, আমাদের যে আসনগুলো দেওয়া হবে সেগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবেন না৷''

তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের পদধারী স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও তো আরও অনেক প্রার্থী আছেন৷ অনেকগুলো দল অংশ নিচ্ছে৷ তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে৷ এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তো আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী লাগবে এমনটি নয়৷ সব আসনেও তো আর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই৷''

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকেরা প্রকাশ্যেই আসন সমঝোতার দাবি তুললেও গোপন রেখেছে জাতীয় পার্টি৷ গত তিনবারের মতো আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় চায় দলটি৷ আবারও প্রধান বিরোধী দল হতে আগ্রহী জাপা চায়, তাদের পছন্দের আসনে নৌকার প্রার্থী থাকতে পারবেন না৷ এমনকি, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও থাকতে পারবেন না, যাতে বিনা বাধায় জিততে পারে লাঙ্গল৷

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৮৮ আসনের মধ্যে ৪২টিতে নৌকার প্রার্থী ছিল না৷ এর চারটি আসনে পরাজিত হয় ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জেপির প্রার্থীদের কাছে৷ বাকি পাঁচটিতে হারে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে৷ গত নির্বাচনে জাপার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১৭২ আসনের ১৪৫ আসনে নৌকার বিরুদ্ধে জামানত হারায় লাঙ্গল৷

এ অভিজ্ঞতার কারণে বছর দুয়েক ধরে সরকারের কড়া সমালোচনা করা জাপা ভোট মৌসুমে এসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা চাইছে৷ গত বুধবার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষা করে বৈঠক করেন দলটির নেতারা৷ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগকে ৬০-এর বেশি আসনের তালিকা দিয়েছে জাপা৷ দলটির আরেকটি সূত্রের দাবি, ৭৫টি আসনের তালিকা দেয়া হয়েছে৷ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি৷ অনেকেই বলছেন, জেতার নিশ্চয়তা না পেলে শেষ মুহূর্তে জাপা নির্বাচন থেকে সরে যেতেও পারে৷ ফলে জাপার বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ৷

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নির্বাচন মানে হচ্ছে ভোটাররা অনেক প্রার্থীর মধ্যে একজনকে বেছে নেবেন৷ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলগুলো যদি সমঝোতা করে ভোট করে, তাকে নির্বাচন নয়, তামাশা বলা যায়৷এখন যা পরিস্থিতি, তা নির্বাচন নয়, ভাগবাটোয়ারা চলছে৷ ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা জানি না৷ তবে একটা জিনিস কিন্তু ভালো, আওয়ামী লীগ কোন রাখঢাক করছে না৷ যা হচ্ছে প্রকাশ্যেই হচ্ছে৷''