1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটারের কথা: ''ক্ষমতা নিয়ে যেন মারামারি খুন-খারাবি না হয়''

হাসিবুর রহমান বিলু, বগুড়া ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮

''গত যে ৩বার সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবার সুযোগ আমার হয়েছে তার আগে প্রত্যেক বারই মনেপ্রাণে চেয়েছি চাল ডাল তেল লবন যেন কেনার ক্ষমতা থাকে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে যেন মারামারি খুন-খারাবি না হয়৷''

https://p.dw.com/p/GNRt
বগুড়ার জন্য ভোটে ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ছবি: Mustafiz Mamun

- রিক্সা চালক সাইদুর রহমান খুব আক্ষেপের সাথে একবারে বলে গেলেন কথাগুলো৷ গাইবান্ধা জেলের পলাশবাড়ী উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সের এই রিক্সা চালক এবারও ভোট দেবেন এবং তার চাওয়াও আছে আগের মতোই, তবে এবার সে আর একটু বেশি কিছু চায় নতুন সরকারের কাছে তা হলো চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিচার৷

সাইদুর জানান, প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পলাশবাড়ী থেকে বগুড়া শহরে এসে রিক্সা চালিয়ে গড়ে ১০০ টাকা পান আর তা দিয়েই তাকে চালাতে হয় ৬ সদস্যের সংসার৷ ৫/৬ বছর ধরে তিনি রিক্সা চালাচ্ছেন কিন্তু এখনও তার ঘরে তিনবেলা ভরপেট খাবার সংস্থান নেই৷ তার নেই কোন জমিজমা-ব্যবসা বাণিজ্য৷

Call centre business in Bangladesh - Youth in Bangladesh
রিক্সাচালকদের মত সাধারন ভোটারদের দাবি, চাল, ডাল, তেল লবনের দাম যেন ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকেছবি: DW

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার হাতিবান্ধা গ্রামের দিপুচন্দ্র ঘোষ এবার প্রথম ভোটার হয়েছেন৷ এসএসসি পাশ ৩৬ বছর বয়সের দিপুর আগে ভোটার হবারই সুযোগ হয়নি৷ জীবনে প্রথম ভোট দেবে ২৯ ডিসেম্বর, এই আনন্দের কথা জানাতে দিপু যেমন ভোলেননি তেমনি দারিদ্র্যের কারণে সংসার জীবনে পা রাখার সুযোগ তার হয়নি এ কথা বললেন খেদ প্রকাশ করে৷ রাস্তার পাশে সন্দেশ বিক্রি করে বড় ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে থাকা মা-বাবা হারা দিপুর আগামী সরকারে কাছে চাওয়ার শুধু একটি চাকরি যা তার জীবনকে স্বাভাবিক করবে৷

মৃত আনন্দ মোহন ঘোষের ছেলে দিপু মনে করেন, এখন চাল ডাল তেলের যে দর তা যদি না কমে তবে তার সংসার জীবনে আর পা দেয়া হবে না৷ ২৯ তারিখের পর যারাই সরকার গঠন করুক তারা যেন চাল-ডাল-তেল ও লবনসহ অন্যান্য জিনিসের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয় এটাই তার চাওয়া৷
বগুড়া শহরের টেম্পল রোড রুটির দোকান চালান স্বপন৷ ২০ বছর বয়সের এ যুবক এবার ভোটার হয়েছেন এবং ভোট দেবেন তার পছন্দের প্রার্থীকে এ আশা নিয়ে যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দর আবার কমে আসে৷

'আওয়ামীলীগ সরকারের সময় যখন আমি রুটির দোকান চালু করি তখন আটার দর ছিল ৬ টাকা কিলোগ্রাম আর এখন ২৬ টাকা' স্বপন এ কথা জানিয়ে বলেন, রুটির দোকান চালাতে গিয়ে তাকে ৩৬ টাকা দরেও আটা কিনতে হয়েছে৷ আগামী সরকারের কাছে তার চাওয়া দেশে যেন হানাহানি না থাকে আর জিনিস পত্রের দাম যেন কমে৷

'ভোট কবে হবে তা জানিনা কিন্তু ভোট দিতে যাব' খুব সহজ ভাবেই জানালেন রিক্সা চালক মো: রফিকুল ইসলাম (৫০)৷ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার করতকোলা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সংসদ নির্বাচনসহ যেসব ভোট হয়েছে তার সবগুলোতেই তিনি তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন৷ বিগত ২টি সংসদ নির্বাচনে একবার বিএনপি এবং একবার আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে তিনি ভোট দিয়েছেন৷ তিনি যে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন সেবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে আর যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন সেবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে৷ দুটি দলের কাছেই তাঁর চাওয়া ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দর সরকার সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখবে কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি৷ অনির্বাচিত সরকারের কাছে তার কোন চাওয়া ছিল না তুবুও পেয়েছে সন্ত্রাস মুক্ত পরিবেশ৷ তিনি দাবি করেন, এ সরকারের আমলে রাতে রিক্সা চালানোর সময় বা গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে হয়নি৷

সব সরকারের কাছেই তার চাওয়া দেশও দশের উন্নতি৷ বিগত সবগুলো সরকারের সময়ই দেশের কিছু না কিছু উন্নতি হয়েছে দশের তেমন কোন উন্নতি হয়নি বরং দশের জন্য যারা সেই রাজনীতিবিদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উন্নতি হয়েছে৷ তিনি আশংকা করছেন আগামীতে এরকমই হবে সে কারনে তিনি আওয়ামীলীগ বিএনপি এবং জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে দাবি করেছেন দূর্নীতিবাজ এবং সমাজ বিরোধীদের তাঁরা যেন রাজনীতিতে না রাখেন৷

মুড়ি বিক্রেতা প্রদীপ ও জানেন না সংসদ নির্বাচনের তারিখ৷ তবে এবারও তিনি সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন৷ ৩৬ বছর বয়সের প্রদীপ এর আগে আরও ৩ বার সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন৷ তিনি জানান তার পছন্দের প্রার্থীর দল দু'বার সরকার গঠন করেছে৷ যে সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রাথীকে ভোট দিয়েছিলেন সেবার বিএনপি এবং যেবার আওয়ামীলীগকে মনোনিত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন সেবার আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে৷

বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের চাঁদমুয়া হরিপুর গ্রামের মৃত নীলকান্তের ছেলে প্রদীপও বরাবরের মতোই এবারও চান নির্বাচিত সরকার যেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দর সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার সব চেষ্টা করে৷ গেল ২ বছল দেশে আইন শৃংখলা ভাল ছিল এটা তার দাবি এবং তিনি বিশ্বাস করেন গত দু'বছর অসৎ রাজনীতিবিদদের যে শিক্ষা হয়েছে তাতে তাদের সংশোধন আসতে বাধ্য৷

সেদ্ধ ডিম বিক্রেতা গনেশ (৩৩) জানান, ২৯ তারিখের নির্বাচনেও তিনি ভোট দিতে যাবেন৷ আগেও ২ বার তার ভোট দেবার সুযোগ হয়েছে৷ তার চাওয়া ছিল এ দেশটি যেন লোনমুক্ত হয় পরের গোলামী না করে৷ কিন্তু তার সে চাওয়ায় গুড়ে বালি৷ তার ভাষায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে যেটুকু তিনি জেনেছেন তাতে দেখা গেছে দেশের ঘাড়ে লোনের বোঝা আরও বড় হয়েছে৷ তার ভাষায় দেশ এখনও অন্যের ওপর নির্ভশীল৷

বগুড়া শহরতলীর চেলোপাড়া এলাকার বাসিন্দা গণেশ প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেদ্ধ ডিমের দোকান খোলেন বগুড়া শহরের প্রাণ কেন্দ্র সাতমাথায়৷