ভেজাল খাদ্যে জীবনের ঝুঁকি
৩ জুন ২০১৩আমাদের খাদ্যাভাসে এসেছে বিরাট পরিবর্তন৷ নানা রকমের মনের মতো খাবার ভারতীয় ভোক্তাদের রুচিবোধটাকে দিয়েছে পাল্টে৷ যদিও সবাই জানে ঐসব খাবারে আছে প্রচুর ভেজাল৷ সরকারি নিয়মবিধি যাই থাক, ভেজাল চলছে একইভাবে৷ সবথেকে বিপজ্জনক হলো কাঁচা শাকসবজি ও ফলফলাদিতে বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে চলেছে কীটনাশক কেমিক্যালস ব্যবহার৷ জনস্বাস্থ্যের ওপর যার ফল হয় মারাত্মক৷ এমন কী বেড়ে যায় ক্যান্সারের মত দূরারোগ্য ব্যাধির আশঙ্কা৷
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিল্লি আদালতে এই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করলে আদালত একটি বিশেষ সেল গঠনের নির্দেশ দেন৷ আবেদনে বলা হয়েছে, কীটনাশক কণা থাকার পরিণামে ক্যান্সার হবার এবং স্নায়ুতন্ত্র ও লিভারের ক্ষতি হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ ভারতে বিশেষ করে দিল্লিতে শাকসবজি ও ফলফলাদিতে কীটনাশক কেমিক্যালস-এর কণা থেকে যায় ইউরোপীয় মানের তুলনায় ৭৫০ গুণ বেশি৷এনজিওগুলির দাবি, আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ পাঁচটি বিষাক্ত কীটনাশকের মধ্যে চারটি পাওয়া গেছে ভারতীয় শাকসবজি ও ফলে৷ বাজার সমীক্ষা এবং আচমকা খাদ্যসামগ্রী পরীক্ষা করার কথা বলেছে আদালত৷
বিশেষজ্ঞ কমিটি আদালতকে জানিয়েছেন, বাজারের শাকসবজি ও ফলে কীটনাশক রাসায়নিকের কণা থেকে যায় কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য দিল্লি প্রশাসনের অবকাঠামো আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন৷ যেমন, আধুনিক পরীক্ষাগার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমশক্তি এবং পরিসর৷ শাকসবজি ও ফলফলাদিতে কীটনাশক দেয়া হচ্ছে কিনা সেদিকেও কড়া নজর রাখা দরকার৷
যেসব শাকসবজি ও ফলে কীটনাশক কণা আছে সেগুলি চিহ্নিত করতে হবে এবং বিনা পরীক্ষায় এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে তা পাঠানো বন্ধ করতে হবে৷ বিদেশ থেকে যেসব খাদ্য সামগ্রী আসে বিমানবন্দরের কাছে তা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হবে৷
হলুদ রঙের ডাল যেমন, মুগ ডাল, ছোলার ডাল,খেসারি ডাল৷ এতে হলুদ রঙের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মেশানো হয় মেটানিল ইওলো৷ মটরশুঁটি, কাঁচা লঙ্কা এবং অন্যান্য কাঁচা শাকসবজির তাজাভাব এবং সবুজতা উজ্জ্বল করতে মোশানো হয় ম্যালাচিট গ্রীন৷ এই কেমিক্যালসে ক্যান্সার হবার বিপদ থাকে৷ এক খন্ড ভেজা ব্লটিং পেপারে রাখলে বোঝা যায় যে তাতে ঐ কেমিক্যালস দেয়া হয়েছে কিনা৷ সরষের তেলে ভেজাল দিতে আর্জিমোন বীজ মেশানো হয়৷ এতে বাচ্চা ও বুড়োবুড়িদের গ্লুকোমার মত মারাত্মক চোখের অসুখ হতে পারে৷
পনির, খোলা কনডেন্স মিল্কে মাড় মিশিয়ে তার ঘন ও তাজাভাব বাড়ানো হয়৷ খেলে এতে পেটের অসুখ হয়৷ এমন কী বাচ্চাদের আইসক্রীমে মেশানো হয় ওয়াশিং পাউডার৷ ঐসব আইসক্রীমের ওপর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ফেললে যদি বিজবিজ করে ফেনা উঠতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তাতে ওয়াশিং পাউডার মোশানো হয়েছে৷ খেলে পেট ও লিভার খারাপ হয়৷ কারবাইড দিয়ে পাকানো ফল অনেকদিন খেলে ডাইরিয়া, মুখে ঘা, মাথা ঘোরা এমন কী ক্যান্সার হতে পারে৷ সামান্য আর্থিক লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা এই ধরণের জনস্বাস্থ্যের বিরাট ক্ষতি করে চলেছে৷ এটা বন্ধ করার উপায় নজরদারি এবং কঠোর শাস্তি৷