ভাষা না জানলে...
৩ জানুয়ারি ২০১৪হাসান রাশোভ-হুসেইন অত্যন্ত অসুস্থ৷ তাঁর হার্ট ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে পারে না৷ ইরাক থেকে আসা এই কুর্দ শরণার্থীর জরুরি ভিত্তিতে হার্ট প্রতিস্থাপন প্রয়োজন৷ কিন্তু বাড ও্যনহাউসেন-এর একটি ক্লিনিক এ ব্যাপারে তাঁকে ‘ওয়েটিং লিস্ট' বা অপেক্ষমান তালিকায় রাখতে রাজি হয়নি৷ কারণ হিসাবে বলা হয়, অপারেশনের পর জটিল নিয়মকানুন বোঝার মতো যথেষ্ট জার্মান ভাষার জ্ঞান রোগীর নেই৷
ক্লিনিকের অসহযোগিতা
হাসানের আইনজীবী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষেরই সমান অধিকার রয়েছে৷'' কিন্তু ক্লিনিকটি মনে করছে, এক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে৷ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জার্মান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এর নীতিমালা অনুযায়ী ৷ ক্লিনিকের প্রধান য়ান গুমার্ট এই প্রসঙ্গে বলেন, জার্মানির এই নীতিমালায় বলা হয়েছে যে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে কোনো রোগীকে অপেক্ষমান তালিকাতেই রাখা হবে৷ এতে বলা হয়েছে, ভাষা সমস্যা থাকলে রোগী চিকিৎসার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সহযোগিতা নাও পেতে পারেন৷ আসলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর ডাক্তারের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে হয়৷ তা না হলে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, হতে পারে মৃত্যুও৷ ‘‘...আর এর হাত থেকেই আমরা রোগীদের রক্ষা করতে চাই'', বলেন গুমার্ট৷
অন্য হাসপাতালের খোঁজ
এই ধরনের নীতিমালা ব্যাখ্যার ব্যাপার৷ ঐ ক্লিনিক প্রত্যাখ্যান করার পর হাসান অন্য এক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ ম্যুন্সটার ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্য তাঁকে ‘ওয়েটিং লিস্ট'-এ স্থান দেয়৷ ভাষাগত বাধার ব্যাপারটা তাদের কাছে তেমন অনতিক্রম্য মনে হয়নি৷ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে দোভাষী নিয়োগ করে তারা৷ আর রুটিন পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যাপারে হাসানের জার্মান জানা আত্নীয়স্বজনরা সাহায্য করেন৷
হাসানের আইনজীবী জাহিট টোলান মনে করেন, ভাষা সমস্যা দেখিয়ে রোগীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করাটা সংবিধান পরিপন্থি, যাতে সমানাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে৷ এ কারণে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করেন তিনি৷ দাবি করেন ১০.০০০ ইউরো৷ অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মীমাংসা হয় ক্লিনিকটির সঙ্গে৷ রফা হয় ৫০০০ ইউরোতে ৷ তবে এই ভাবে রফা হওয়াতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন নীতিমালার ব্যাপারে আদালতের কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হয়নি৷
স্পষ্ট নীতিমালা দাবি
জার্মানির রোগী সুরক্ষা সংগঠনের পরিচালনা বোর্ডের অয়গেন ব্রিশ মারাত্মক অসুখে আক্রান্তদের অধিকার রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন৷ তিনি অঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যবস্থায় স্পষ্ট নীতিমালা দাবি করেন৷ তাঁর মতে, এক্ষেত্রে নানা রকমের ব্যাখ্যা থাকা উচিত নয়৷
ভবিষ্যতে যাতে এ ব্যাপারে জটিলতা দেখা না দেয়, সে জন্য জার্মান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অঙ্গ প্রতিস্থাপন নীতিমালাটিকে স্পষ্ট করার উদ্যোগ নেবে৷ এর ফলে সব মানুষই সমান অধিকার পাবে ভাষা না জানলেও৷