1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের সোলার সিটি সাঁচি

৩০ জানুয়ারি ২০২৪

ভারতের এক ছোট শহর পুরোপুরি সৌরবিদ্যুতে চলছে৷ তবে গোটা দেশে পুনর্ব্যহারযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি সাশ্রয়ের প্রশ্নে এখনো সমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না৷ বিভিন্ন উপায়ে সেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/4bqSB
একটি তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শহরের সব বিদ্যুৎ আসে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সেটির জন্য প্রায় ২০ লাখ ইউরো ব্যয় করেছে৷
সাঁচি ভারতের প্রথম ‘সোলার সিটি’ছবি: DW

ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের সাঁচি মূলত বৌদ্ধ স্তূপের কারণে বিখ্যাত৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় সেই স্তূপ স্থান পেয়েছে৷

এখন অবশ্য সাঁচি অন্য এক কারণে খ্যাতি অর্জন করছে৷ এটি ভারতের প্রথম ‘সোলার সিটি'৷ একটি তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শহরের সব বিদ্যুৎ আসে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সেটির জন্য প্রায় ২০ লাখ ইউরো ব্যয় করেছে৷ সেইসঙ্গে শহরে একাধিক ই-চার্জিং স্টেশন, পানির কিয়স্ক, রাজপথে সৌরবাতি ও ছাদের উপর প্রায় দুই ডজন সৌর প্রণালীও রয়েছে৷

ভারতের যে শহর পুরোপুরি সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল

রাতারাম সারাটের বাসার ছাদেও এমন এক সৌর প্রণালী বসানো হচ্ছে৷ অবসরপ্রাপ্ত এই মানুষটি এভাবে অর্থ সাশ্রয় করতে পেরে সন্তুষ্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে বলা হয়েছে, এটি তিন কিলোওয়াট জ্বালানি উৎপাদন করবে৷ অর্থাৎ দিনে ১৫ ইউনিটের মতো৷ আমি দিনে বড়জোর পাঁচ থেকে দশ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করি৷ ভাবলাম বাকিটা কেন্দ্রীয় গ্রিডে দিয়ে দেবো৷ এভাবে আমি খরচ পুষিয়ে দেব৷'' 

রাতারাম মাসে প্রায় ৫০০ ভারতীয় টাকা সাশ্রয় করে বিদ্যুতের বিল প্রায় অর্ধেক কমাতে পেরেছেন৷

সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার মডেলের আওতায় সৌর শহর প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে৷ এর ফলে বছরে কার্বন নির্গমনও প্রায় ১৪,০০০ টন কমানো সম্ভব হচ্ছে৷ প্রায় ৮,০০০ জনসংখ্যার শহর সাঁচির সব সরকারি ভবনের ছাদে এখন সৌর প্যানেল বসানো আছে৷ অন্যান্য রাজ্যগুলি তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷

দুই বছর আগে সরকার সোলার সিটি প্রকল্পের সঙ্গে একযোগে এক শিক্ষা কর্মসূচিও চালু করে৷ এর আওতায় জনসাধারণকে জ্বালানি সাশ্রয়ের গুরুত্ব, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা ও অর্থনৈতিক সুবিধা সম্পর্কে জানানো হয়৷ মধ্য প্রদেশ সরকারের প্রতিনিধি সঞ্জয় দুবে বলেন, ‘‘জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়ে ব্যক্তিগত স্তরে সচেতনতা গড়ে তোলাই ছিল উদ্দেশ্য৷ কোনো যন্ত্র ব্যবহার করে, বাড়িঘর বা টয়লেট বিশেষভাবে ডিজাইন করে কোনোভাবে কি জ্বালানির ব্যবহার কমানো যায়?'' 

পিএইচডি ছাত্র ও দোকানের আংশিক মালিক হিসেবে বিকাশ তোমার সেই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন৷ তবে অনলাইন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে তাঁর মনে সংশয় রয়েছে৷ বিকাশ মনে করেন, ‘‘ফর্মটা সহজ ছিল বটে, কিন্তু সেটা অনলাইন প্রক্রিয়ায় করতে হয়েছে৷ কিছু মানুষের সমস্যা হয়েছিল৷ আজকাল অনেক মানুষ অনলাইন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষ তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না৷ অফলাইন প্রক্রিয়া হলে আরো বেশি মানুষ ফর্ম লিখে জমা দিতে পারতেন৷''

মানুষকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে শিক্ষা দিতে, নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন করাতে এবং সাঁচির আকারের কোনো শহরের রূপান্তর রাতারাতি ঘটানো সম্ভব নয়৷

বিহারী লাল সেন সৌরশক্তিচালিত তিন চাকার যান চালান৷ তাঁর কাছে বিদ্যুতচালিত যান বেছে নেবার পক্ষে যুক্তি ছিল৷ কারণ এর মাধ্যমে তিনি টাকা বাঁচাতে পারছেন৷ তাঁর মতে, ‘'৫০ শতাংশ সুবিধা রয়েছে৷ সৌরশক্তিচালিত ব্যাটারি ডিজেলের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর৷''

সাঁচি শহরে জুলাই মাসে দুটি সোলার চার্জিং স্টেশন চালু হয়েছে৷ আপাতত চার্জ করার অবকাঠামো কাজ চালানোর মতো৷ তাছাড়া হাতে গোনা কিছু মানুষ বিদ্যুতচালিত যান গ্রহণ করেছেন৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সেই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন৷ তাঁরা বৃহত্তর চিত্রের দিকে নজর রাখছেন৷ সিইইডাব্লিউ সংগঠনের দিশা আগ্রবাল বলেন, ‘‘যে কোনো রূপান্তর প্রক্রিয়া একটানা ঘটে না৷ যেমনটা বললেন, ভারতের মতো এত বড় দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক একটি স্তরের মধ্য দিয়ে চলেছে৷ বিভিন্ন রাজ্য, সমাজের নির্দিষ্ট অংশ ভিন্ন গতিতে রূপান্তর ঘটাবে৷ জ্বালানি ক্ষেত্রে রূপান্তরের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটলেও মোবিলিটি ও শিল্পখাতে টেকসই প্রক্রিয়া এখনো প্রাথমিক স্তরে রয়েছে৷''

জেসিকা গোয়েল/এসবি