1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমকামিতা আইন

১০ মার্চ ২০১২

সমকামিতাকে আইনি বৈধতা দেবার প্রশ্নে ভারতে বিতর্ক চলছে৷ এ আইনের সমর্থক ও বিরোধীরা ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে তুমুল লড়াই চালাচ্ছেন৷ যু্ক্তি আর পাল্টা যুক্তিতে চলছে যুদ্ধ৷ অবস্থাটা এখন এমন যে, ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান’৷

https://p.dw.com/p/14Idw
ছবি: AP

সমকামিতা৷ মানে, সমলিঙ্গের মানুষের সাথে সম্পর্ক৷ অর্থাৎ সেটি হতে পারে নারীর সঙ্গে নারীর কিংবা হতে পারে এক পুরুষের সঙ্গে আরেক পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক৷

সমকামিতাকে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে৷ তাই সে সব দেশে, সমলিঙ্গের মানুষকে বিয়ে করাটাও আজ আর দোষের কিছু নয়৷ কিন্তু এই সমকামিতাকে আইনগত স্বীকৃতি দিতে গিয়েই ভারতে চলছে বাকবিতণ্ডার ঝড়৷

২০০৯ সালে দিল্লির উচ্চ আদালত থেকে একটি রায়ে বলা হয়েছিলো, ‘সমকামিতা' কোনো অপরাধ নয়৷ সেই রায়ের ফলে সমকামী মানুষ বা সমকামিতায় বিশ্বাসী উদারমনের মানুষরা খুশিই হয়েছিলেন৷ কিন্তু এ রায়ের বিপরীতে প্রতিবাদও হয়েছে ব্যাপকভাবে৷

Flash-Galerie CSD Christopher Street Day 2010 Berlin
বার্লিনে সমকামিদের মস্ত বড় উৎসব ক্রিস্টোফার ডে স্ট্রিটের প্যারেডছবি: picture-alliance/dpa

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই রায়টিকে প্রথমে খুব ইতিবাচক ভাবে নেয় নি৷ অবশ্য পরবর্তীতে এটি তার নেতিবাচক অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে৷

সমকামিতা বিরোধীরা বলেন, ‘‘ভারতের সমাজ, সংস্কৃতির সঙ্গে এটি বেমানান''৷ তাদের মতে, সুপ্রাচীন দেশ ভারতের আছে কিছু নিজস্ব সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ৷ সেগুলোকে মূল্যায়ন করা উচিত৷ শুধু পশ্চিমা বিশ্বের অন্ধ অনুকরণে এই দেশে সমকামীদের স্বীকৃতি দেয়াটা তাই উচিত নয় বলে প্রচার করছেন বিরোধীরা৷

সমকামিতার পক্ষে যারা লড়ছেন, তাদের মতে, ‘‘এটা দোষের কিছু নয়''৷ এতে ‘অন্যায়' বা ‘অপরাধে'র কিছু নেই৷ এটিও প্রাকৃতিক৷ এক মানুষের প্রতি আরেক মানুষের শারীরিক সম্পর্ক হলে সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত লাগার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করছেন তারা৷ তারা আরো বলছেন, ‘‘কে কাকে পছন্দ করবে বা করবে না এটি একান্তই ব্যক্তির মৌলিক অধিকার৷ সুতরাং সমকামিতাকে নিন্দনীয় চোখে দেখার কিছু নেই৷''

তবে, সমকামী সমাজের এসব কথা শুনে থেমে নেই বিরোধীরা৷ তাই, সমকামীদের পক্ষে দেয়া দিল্লির উচ্চ আদালতের রায়ের বিরোদ্ধে আবারো আইনি লড়াইয়ে নেমেছে তারা৷ এবার লড়াই হচ্ছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে৷

ভারতের সরকারি আইনজীবী পি পি মালহোত্রা গত সপ্তাহে আবারো সমকামিতার বিরোদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন৷ মালহোত্রা বলেছেন, ‘‘সমকামিতা একটি অনৈতিক কাজ৷ এটি সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী৷'' তাছাড়া ‘‘সমকামিতার মাধ্যমে সমাজে ‘এইডস'-এর মতো কঠিন রোগ ছড়াচ্ছে'' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷

তাঁর এ মন্তব্যের পর আবারো প্রতিবাদে মুখর হয়েছে সমকামী সমাজ ও উদারনীতির মানুষেরা৷ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুক, টুইটার ও বিভিন্ন ব্লগে বিষয়টি নিয়ে এখন চলছে তুমুল বিতর্ক৷

মালহোত্রার সমালোচনা করে তনুজা খোসলা লিখেছেন, ‘‘দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দুর্নীতির মতো হাজারটা সমস্যায় ভুগছে ভারত৷ এসব সমস্যার ফেলে রেখে ওরা মানুষের মৌলিক অধিকারের পেছনে লেগেছে৷ এর কোনো মানে নেই৷''

তনুজা এই লেখা নিজের ব্লগে পোস্ট করতে না করতেই ব্যাঙ্গালোর থেকে শর্মা নামের আরেক ব্লগার তাঁকে উত্তরে লিখেছেন, ‘‘একটি ছেলে আর একটি মেয়ে এখনো স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে না ভারতের পার্কগুলোতে৷ আর এই অবস্থায় তুমি সমকামিতার পক্ষে কথা বলছো?'' শুধু তাই নয়, ‘‘বিষয়টিকে বরং আজ থেকে আরো ৫০ বছর পরের বিষয়'' হিসেবে তুলে রাখার জন্যও তনুজাকে পরামর্শ দিয়েছেন শর্মা৷

পক্ষে-বিপক্ষে যখন এতো তর্ক চলছে, তখন সবার মনোযোগ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দিকে৷ কারণ বর্তমানে এ বিষয়ে একটি শুনানি চলছে সেখানে৷ বিচারক জি সি এস সিংভি এবং বিচারক এস জে মুখোপাধ্যায়কে অবশ্য এখনো যথেষ্ঠ উদার বলেই মনে হচ্ছে৷

তাঁদের যৌথ বেঞ্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ক'দিন আগে সমকামিতা নিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে৷ বিচারকেরা প্রশ্ন করেছেন যে, ‘‘অস্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ক মানে কী? এটি বলতে তারা কী বোঝান?''

এবার অপেক্ষার পালা৷ দেখা যাক, সুপ্রিম কোর্টকে কী উত্তর তাঁরা পাঠান৷ ধারণা করা হচ্ছে, এই উত্তরের পরই আবার নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে সর্বোচ্চ আদালত৷ আর আবারো সমকামিতার পক্ষে-বিপক্ষে নতুন করে তর্ক জমবে ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে৷

প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা

সম্পদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য