ভারতে ভয়াবহ জল-সংকট
৩ জুলাই ২০১৯ইতিমধ্যে চেন্নাই, মহারাষ্ট, রাজস্থান, গুজরাট ও কেরালাসহ বিভিন্ন রাজ্যে অস্বাভাবিক জলসংকটে নাজেহাল বিপুল সংখ্যক মানুষ৷
এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে চেন্নাইকে শুধুমাত্র বৃষ্টিই রক্ষা করতে পারে৷ সম্পূর্ণ ফাঁকা কুয়ো ও জলবিহীন শহর চেন্নাই৷ রাজ্যের প্রধান ৪টি জলাধারই শুকনো৷ সরকারি জলের ট্যাঙ্ক থেকে এক ফোঁটা জলের আশায় দীর্ঘক্ষণ ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মানুষ৷ বন্ধ স্কুল-কলেজ, রেস্তোরাঁও৷ মেট্রো রেলে বন্ধ শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র৷ সর্বত্র বৃষ্টির জন্য আকুতি৷ ভারতের দক্ষিণের রাজ্য চেন্নাইয়ে জল-সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যা দেখে হলিউডের অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে কথাগুলো লিখেছেন৷ গোটা ভারতে এমন অবস্থা তৈরি হতে আর বেশি দেরি নেই৷ এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল৷
ভবিষ্যতে দেশের জলসংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদরা৷ এ নিয়ে চিন্তিত ভারত সরকার এবং বিরোধী দলগুলিও৷ ক'দিন আগে রেডিও-র মাসিক অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত'-এ এ নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি বলেছেন, ‘‘একাধিক রাজ্যে জলের অভাব দেখা দিয়েছে৷ বর্ষায় যে জল পাওয়া যায়, তার মাত্র ৮ শতাংশ সংরক্ষণ করা যায়৷ এই জল মোটেই জলসংকট মোকাবিলার পক্ষে যথেষ্ট নয়৷'' দেশবাসীকে সর্বশক্তি দিয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন মোদী৷ দেশবাসীর কাছে ৩টি অনুরোধ করেছেন৷ এক, জল সংরক্ষণে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া৷ দুই, যেসব মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জল সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছে, তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া৷ এবং তিন, জল সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে একে অপরকে সচেতন করা৷
ভারতের সংসদে জল সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তাতে অংশ নিয়েছে সবকটি রাজনৈতিক দল৷ আসন্ন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির আঁচ করে সমস্যার সমাধানে সরকারকে অবিলম্বে উদোগী হওয়ার আর্জি জানিয়েছে সব দলের নেতা-নেত্রী৷ সরকার জানিয়েছে, তারা চিন্তিত৷ সমস্যার মোকাবিলায় একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে৷ আগামী কয়েক বছরে সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে৷ এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমানো, সর্বস্তরে জলের অপচয় বন্ধ করা, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা, জলাধার নির্মাণ করা ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ সংসদের অপর কক্ষ লোকসভাতেও বিভিন্ন দলের সাংসদরা অনবরত জল সংকটের মারাত্মক পরিস্থিতির আশঙ্কা করে ক্রমাগত সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন৷
রাজ্যসভায় এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ মানস ভু্ঁইয়া৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন,
‘‘ভারতে মোট ৬ লক্ষ ৫৬ হাজার গ্রাম রয়েছে৷ সেখানে ১৯ কোটি ১৯ লক্ষ পরিবার বসবাস করে৷ জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি৷ গতবছর জুনে মাসে নীতি আয়োগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬০ কোটি মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের কোনো বন্দোবস্ত নেই৷ দেশে মোট ১৮ শতাংশ মানুষ পাইপলাইনে পানীয় জলের পরিষেবা পাচ্ছেন৷ মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরালা ও গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্যে পানীয় জলের গভীর সংকট দেখা দিয়েছে৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ ভূগর্ভস্থ জল তুলে চাষাবাদ-সহ অন্যান্য কাজে লাগানোয় জলস্তর ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ প্রতিদিন আরো সমস্যা বাড়ছে৷ মহারাষ্ট্রের ঔরাঙ্গাবাদে ট্রেনে চেপে ১৪-১৫ কিলোমিটার দূরে পানীয় জল কিনতে যেতে হয় মানুষকে৷ এখন বৃষ্টির জল ধরে রেখে পানীয় জল জোগানোর ব্যবস্থা না করা হলে সমস্যা আরো বাড়বে৷''
অন্যদিকে, গোটা দেশে বাড়তে থাকা জল সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি ঠিক করেছেন ১২ জুলাই ‘জল বাঁচান, জীবন বাঁচান' দিবস পালন করবে পশ্চিমবঙ্গ৷ সেদিন দুপুর ৩টায় সচেতনতা মিছিল হবে৷