1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কনডম এখনো ট্যাবু, বলছেন মন-সমাজবিদ

৪ জুন ২০২১

ভারতে কনডম ব্যবহার করেন মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষ। সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। আন্দোলন প্রয়োজন, বলছেন বিশিষ্টজনেরা।

https://p.dw.com/p/3uQLp
কন্ডোম
ছবি: AFP/P. Paranpje

দোকানে গিয়ে কনডম চাইতে আড়ষ্ট বোধ করা। লজ্জায় দোকানদারের কাছে কনডম চেয়েই উঠতে না পারা। এ সব নতুন ছবি নয়। রাস্তাঘাটে প্রতিদিনই এমন ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। কনডম নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে এখনো যে যথেষ্ট ট্যাবু এবং আরষ্টতা রয়েছে, এবার তা প্রমাণ হয়ে গেল। একুশ শতকে পৌঁছে এই প্রথম ভারতে কনডমের ব্যবহার নিয়ে একটি সমীক্ষা হলো। এবং সেখানে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা হতাশ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

একাধিক সংস্থা একত্রে এই সমীক্ষাটি করেছে। সাহায্য নেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য এবং পরিবার মন্ত্রণালয়ের তথ্য। দেখা গেছে, ১৩০ কোটির ভারতে মাত্র ৫ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ কনডম ব্যবহার করেন। ২০ থেকে ২৪ বছরের তরুণ ভারতের ৮০ শতাংশই শেষবার যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করেনি।

মন-সমাজবিদ মোহিত রণদীপ ভারতের যৌনপ্রশিক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, এই সমীক্ষা দেখে তিনি এতটুকু বিস্মিত নন। ''এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। আমাদের সমাজে যৌনতাকে এখনো নিষিদ্ধ বস্তু হিসেবে দেখা হয়। যৌনতাকে কেবলমাত্র সন্তান উৎপাদনের বিষয় হিসেবে দেখা হয়। ফলে সেখানে কনডমের ব্যবহারে অনীহা থাকবে, সেই তো স্বাভাবিক।''

মোহিতের মতে, এতবছর লেগে গেল কনডমের ব্যবহার নিয়ে একটি সমীক্ষা করতে। বহু বছর আগেই এই সমীক্ষা হওয়া দরকার ছিল। যে তথ্য হাতে পাওয়া গেছে, তা নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে ওঠা প্রয়োজন। সরকারকেও কনডম ব্যবহার নিয়ে সামাজিক প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক ট্যাবু ভেঙে জনগণের হাতে কনডম তুলে দিতে হবে।

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা বলেছেন মোহিত। তার মতে, যৌনতা নিয়ে সামাজিক ট্যাবু থাকলেও যৌন চাহিদা স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের মধ্যে থাকে। ফলে তার প্রভাব পড়ে জনসংখ্যার উপর। অন্যদিকে কম বয়সীদের মধ্যে ধর্ষকাম, বিকৃত যৌনতার মানসিকতা তৈরি হয়। কনডমের সমীক্ষায় যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে সেই বিষয়গুলিও স্পষ্ট হয়েছে।

ভ্যাজাইনা বা যোনি সম্পর্কে আপনার যা জানা উচিত

স্যাফো ফর ইকুয়ালিটির সদস্য চিত্র পরিচালক সুস্মিতা সিনহা। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''অত্যন্ত জরুরি একটি সমীক্ষা হয়েছে। আমরা যারা যৌনতা নিয়ে কাজ করি, যৌন চাহিদা, যৌন স্বাধীনতার বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলি, তারাও অনেকে জানতামই না যে, মেয়েদের জন্যও আলাদা কনডম হয়। এটাই হলো সামাজিক শিক্ষার অভাব।'' মোহিতের মতো সুস্মিতারও বক্তব্য, সামাজিক সংগঠনগুলির পাশাপাশি সরকারকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

পরিবার প্রকল্প নিয়ে ভারত সরকার বহুদিন ধরেই চিন্তিত। সেই ইন্দিরা গান্ধীর আমলে 'হাম দো হামারা দো' স্লোগান সামনে এসেছিল। গ্রামে গঞ্জে সেই স্লোগান পৌঁছে গিয়েছিল। তাতে যে কোনোই লাভ হয়নি, এমনটা বলা যায় না। কিন্তু জনসংখ্যার বৃদ্ধি যে এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি, সে তথ্যও বিভিন্ন সমীক্ষায় একাধিকবার উঠে এসেছে। মোহিতের মতে, যে ভাবে হাম দো হামারা দো স্লোগান গ্রামে গ্রামে গ্রামে পৌঁছেছিল, ঠিক সেভাবেই কনডমের ব্যবহার, ডনডমের বিজ্ঞাপন গ্রামে গ্রামে পৌঁছানো দরকার।

কনডম নিয়ে এই সমীক্ষাটির নাম দেওয়া হয়েছে কনডমোলজি। কনজিউমার, কনডম এবং সাইকোলজি-- এই তিনটি শব্দকে জুড়ে কনডমোলজি নামটি তৈরি করা হয়েছে। যে সংস্থাগুলি এই সমীক্ষা চালিয়েছে, তারা রিপোর্টে বলেছে, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরো কাজ করবে তারা। মানুষকে সচেতন করার জন্য আরো বেশ কিছু প্রয়াস নেওয়া হবে। তবে সমীক্ষাটি নিয়ে সরকারের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।