ভারতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২৫ অক্টোবর ২০১৩বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে অবশ্যই ছায়া ফেলবে বহুদিন ধরে আটকে থাকা তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি এবং ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তি দুটির বাস্তবায়ন৷ কাজেই এটা যে কত জরুরি সেটা ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নতুন করে বোঝাতে আগামী নভেম্বর মাসে দিল্লি যাচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি৷ বলা বাহুল্য, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচনে এই দুটি হবে প্রধান নির্বাচনি ইস্যু৷ তাই চুক্তি দুটি না হলে সেটা হবে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিএনপি এবং জামাতের প্রধান হাতিয়ার৷ বিরোধীদল ইতিমধ্যেই অভিযোগের আঙুল তুলতে শুরু করেছে এই বলে যে, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু পরিবর্তন আনতে পারেনি কিছুই৷
উভয় দেশের কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ঐ দুটি চুক্তি রূপায়ণে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর তরফে আন্তরিকতা বা রাজনৈতিক সদিচ্ছার খামতি নেই৷ কিন্তু ঘরোয়া রাজনীতির আবর্তে পড়ে সেটা আটকে আছে৷ ভারতেও সংসদ এবং বিধানসভা ভোট-যুদ্ধে ড. সিংয়ের মুঠোতে ক্রমশই যেন জোর কমে যাচ্ছে৷ তবে তিস্তা চুক্তি মূলত আটকে আছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনড় অবস্থানে৷ মনমোহন সিং সরকার ভোটের মুখে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে চটাতে চাইছে না৷ এর কারণ, ভোটের পর হয়ত তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন দরকার হতে পারে কংগ্রেসের৷
প্রশ্ন হলো, মমতার এত আপত্তির কারণ কী? তাঁর মতে, তিস্তা চুক্তির আগেই উত্তরবঙ্গের চাষিদের সেচের জল থেকে বঞ্চিত করে তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেয়া হচ্ছে এবং হবে৷ এই অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা৷ এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের বলেছেন, শুকনো মরসুমে তিস্তার জল এতটাই কম থাকে যে, ব্যারাজ থেকে উত্তরবঙ্গের সেচ খালে বাড়তি জল দেয়া সম্ভব নয়৷ তিস্তা চুক্তির একটা সন্তোষজনক সমাধানে তাই শুরু হয়েছে, কূটনৈতিক ভাষায় যাকে বলা হয় ‘‘ট্র্যাক-টু ডিপ্লোমেসি''৷ সমস্যা সমাধানে যুক্ত করা হয়েছে এসএফজি নামে ভারতের এক থিংক ট্যাংককে৷ তারা তিন দফা সমাধান-সূত্রের কথা বলেছে৷ যেমন যৌথ নদী কমিশনকে ঢেলে সাজানো, নদী অববাহিকার পলি সরিয়ে গভীরতা, তথা নাব্যতা বাড়ানো এবং বর্ষাকালে উদ্বৃত্ত জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদি৷
ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়নেও দরকার সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদন৷ সেখানে বেঁকে বসেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি৷ আপত্তি রয়েছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং আসামের অহম গণপরিষদের৷ সেখানেও প্রধানমন্ত্রীর হাত বাঁধা৷ শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে গত জুলাই মাসে ডা. দীপু মনি দিল্লিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, দু'দেশের মৈত্রী বন্ধন অটুট রাখতে এটা কত জরুরি৷ এতে ভারতের কৌশলগত সহযোগিতা বাড়বে৷ আর ঢাকার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে দু'দেশেরই লাভ৷
সব থেকে বড় কথা, আওয়ামী লীগ ভোটে হেরে গেলে দৌরাত্ম্য বাড়বে ইসলামিক শক্তিগুলির৷ বিশেষ করে আফগানিস্তান থেকে যৌথ সেনা সরে গেলে পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে যেমন জঙ্গি তৎপরতা বাড়বে, তেমনি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও তার আশঙ্কা থাকছে৷ দু'দিক থেকে তার মোকাবিলা করা ভারতের পক্ষে কঠিন হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল৷ কাজেই, দু'দেশের সরকারের পক্ষে চুক্তি দুটি কার্যকর করার এটাই সম্ভবত শেষ সুযোগ৷