1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-জোড়ো যাত্রায় কী পেলেন রাহুল গান্ধী?

৩০ জানুয়ারি ২০২৩

১৩৫ দিন ধরে পদযাত্রা করে কশ্মীরের লালচকে ভারত-জোড়ো যাত্রা শেষ করলেন রাহুল গান্ধী। রাহুল কি মানুষের আস্থা পেলেন?

https://p.dw.com/p/4Mqyl
রাহুল গান্ধীর ভারত-জোড়ো যাত্রা
ছবি: Altaf Qadri/AP/picture alliance

জওহরলাল নেহরু তার মেয়ে ইন্দিরাকে জেলে থাকার সময় ভারত চিনিয়েছিলেন। তার সেই ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া আজও অন্যতম বেস্টসেলার। রাহুল গান্ধী তার প্রপিতামহের লেখা বই ভালো করে পড়েছেন। কিন্তু রাজনীতি তো পুঁথির পড়া নয়, রাজনীতিতে মানুষের কাছে যেতে হয়, তাদের পাশে পেতে হয়। তাদের কথা জানতে হয়। এতদিন রাহুল গান্ধী রাজনীতিটা করে এসেছেন পার্ট টাইম জব হিসাবে। জন্মদিনে অথবা মন চাইলেই ছুটি কাটাতে চলে গেছেন ইউরোপে। প্রতিবারই বিজেপি-র খোঁচা হজম করতে হয়েছে কংগ্রেসকে। পাপ্পু (এই নামেই বিজেপি ডাকে তাকে) কোথায়, এই প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে জেরবার হয়েছেন নেতারা।

ভোট এলে কয়েকটা জনসভা করা, মাঝেমধ্যে লোকসভায় হঠাৎ কিছু জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল রাহুলের রাজনৈতিক বিচরণ। সেই রাহুলই গত ১৩৫ দিন ধরে কন্যাকুমারী থেকে ভারত-জোড়ো যাত্রা করে পায়ে হেঁটে  পৌঁছালেন কাশ্মীর। ১২টা রাজ্য ও দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে তিন হাজার ৯৭০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে পেরিয়েছেন রাহুল।

হাঁটতে হাঁটতে তার দাড়ি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। পদযাত্রায় তাকে দেখা গেছে প্যান্টের উপরে একটা হাফ হাতা টি শার্ট পরেছেন তিনি। প্রবল শীতের মধ্যেও গরম পোশাক দূরস্থান, ফুলশার্টও পরেননি। কেন?  রাহুল বলেছেন, ''আমি যখন মধ্যপ্রদেশ পৌঁছালাম, তখন তিনটি বাচ্চা মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলো। তাদের গায়ে ছেঁড়া পোশাক। তারা শীতে কাঁপছিল। সেদিনই ঠিক করলাম, শীতে শরীরে কাঁপন ধরার আগে পর্যন্ত গরম জামা পরব না। আমি ওদের জানাতে চাই, ওদের সঙ্গে আছি।'' রাহুলের বক্তব্য, ''আমি গরম পোশাক পরলাম কিনা, সেটা বড় ব্যাপার নয়, বড় বিষয় হলো, এই বাচ্চারা, এই গরিব মানুষেরা কেন গরম জামা পরতে পারবেন না?''

অবশেষে এক রাজনীতিক রাহুলের দেখা পাওয়া য়াচ্ছে, যিনি মানুষের পাশে থেকে, তাদের কথা শোনার জন্য পদযাত্রা করেন। দেখা করেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তার এই দীর্ঘ পদাত্রায় সামিল হন হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী, সেই সঙ্গে বেশ কিছু মানুষ, কেউ সাধারণ, কেউ বা প্রতিষ্ঠিত।  রাহুল ১১৩টা স্ট্রিট কর্নার মিটিং করেছেন, একশটা জায়গায় বসে মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। হাঁটতে হাঁটতে ২৭৫বার মতবিনিময় করেছেন নানাজনের সঙ্গে, ১৩টা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। তার যাত্রাপথে বিরোধী দলের নেতারা যোগ দিয়েছেন। কাশ্মীরের লালচকে পতাকা উত্তোলন করার সময় ২১টি দলকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ১২টি দল য়োগ দেবে বলে জানিয়েছে। মোদ্দা কথা, ভারতজুড়ে এই পদযাত্রায় বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে চলতে চেয়েছেন রাহুল। ২০২৪-এর জোটের কথা ভেবে। কিছু দল আসেনি। কিছু এসেছে।

ঘটনা হলো, এরকম প্রয়াস রাহুল আগে কখনো করেননি। ২০২৪-এর ভোটের পটভূমিতে তার এই প্রয়াস নিজের ও দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল এটাও বোঝাতে পেরেছেন, মল্লিকার্জুন খাড়গে দলের সভাপতি হলেও তিনিই কংগ্রেসের মুখ। নিষ্ক্রিয় মুখ নন। সক্রিয়। আলস্য, উদ্যমহীনতা ঝেড়ে ফেলে তৎপর রাহুলকে এই রূপে বোধহয় এই প্রথমবার দেখা গেল।

এ সবই খুব ভালো কথা। কিন্তু সেইসঙ্গে আরেকটা প্রশ্নও তো অনিবার্যভাবে উঠে আসে। এতদিন রাহুলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, তার প্রতি মানুষের আস্থা ছিল না।  রাজনীতিক হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি।  তিনি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি। সোনিয়া-তনয় রাজনীতিতে দাগ কাটতে পারছিলেন না। নেতৃত্ব দিতে পারছিলেন না। মুশকিল সেখানেই ছিল।

এই যাত্রা কি রাহুলকে রাজনীতিক হিসাবে নতুন জন্ম দেবে? বলা মুশকিল। কারণ, এরপর তিনি কি করবেন, আবার শীতঘুমে চলে যাবেন, নাকি মানুষের পাশে থাকবেন, লড়াই করবেন, আস্থা পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। রাহুলের দল ডাকা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি কাশ্মীরে যাচ্ছে না। শুধু শরদ পাওয়ারের এনসিপি, লালুপ্রসাদের আরজেডি, শিবসেনা, ফারুক আবদুল্লার এনসি, মেহবুবা মুফতির দল, ঝাড়খণ্ড মক্তি মোর্চা, ডিএমকে, সিপিএম, সিপিআইয়ের মতো দলগুলিই কাশ্মীরে গিয়ে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে কাশ্মীরে প্রচণ্ড বরফ পড়ছে। দৃশ্যমানতা কম। তাই একের পর এক বিমান বাতিল হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কতজন নেতা যোগ দিতে পারবেন, সেটা বলা মুশকিল।

কিন্তু রাহুল এখনো সেই জায়গায় পৌঁছাননি যে, তিনি ডাকলেই সব বিরোধী দল একজোট হবে। জোট করে লোকসভা ভোটে লড়বে। তিনি চেষ্টা করছেন এখন এইটুকই বলা যায়।

তিনি কি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ২০২৪ সালে টক্কর দিতে পারবেন`? এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার মতো সময় এখনো আসেনি। এই মুহূর্তে ভোট হলে বলতে হতো, তিনি টক্কর দিতে চাইবেন ঠিকই, কিন্তু সেটা হবে নেহাতই দুর্বল টক্কর। তবে রাজনীতিতে একটা বছর অনেক সময়। ফলে ভবিষ্যতে কী হবে তা এখন থেকে বলা মুর্খামি। এখন শুধু এটুকুই বলা যায়, রাহুল এই প্রথমবার রীতিমতো গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করেছেন, তিনি সাড়া ভালো পেয়েছেন। কংগ্রেসকর্মীরা কিঞ্চিত চাঙ্গা হয়েছেন। ব্যস এইটুকু। এর বেশি এখন আর কিছু বলা যাচ্ছে না। মনে রখতে হবে, বিপক্ষে আছেন মোদী-শাহ। তাদের সঙ্গে লড়াই করে দলকে নির্বাচনে সাফল্যের মুখ দেখানো কঠিন, খুবই কঠিন কাজ। সেই কাজে এগোতে পারলে পাপ্পু থেকে রাহুল  কুশলী রাজনীতিকে রূপান্তরিত হবেন। সে কাজে তিনি সফল হবেন কি না, তা  ভবিষ্যৎ বলবে।