1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অভিবাসনগ্রিস

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় গ্রিসের বাংলাদেশিরা

২১ আগস্ট ২০২২

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের ওমোনিয়ার রাস্তায় বাংলাদেশিদের ভিড়৷ কেউ বানাচ্ছেন ঝালমুড়ি, কেউ খুলেছেন দোকান৷ গ্রিসে সেই অর্থে কোনো ভবিষ্যৎ নেই, দাবি করছেন তারা৷ নিজেদের শঙ্কার কথা তারা তুলে ধরেছেন ডয়চে ভেলের কাছে৷

https://p.dw.com/p/4Fpua
অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম
অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলামছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW

নামেই গ্রিসের রাজধানী এথেন্স৷ কিন্তু ওমোনিয়ার এই এলাকায় প্রবেশ করলে মনে হবে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে সন্ধ্যাবেলার আড্ডা চলছে৷ রয়েছে সিলেটি মার্কেটও৷ ওমোনিয়ার রাস্তায় সর্ষের তেল, লঙ্কা, ছোলা, চানাচুর আর পেঁয়াজ দিয়ে মুড়ি মাখার গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে৷ এক ইউরোতে মানে ১০০ টাকায় মিলছে এক ঠোঙা ঝালমুড়ি৷ অনেক বাংলাদেশি জীবিকার সন্ধানে গ্রিসে পাড়ি জমান৷ তেমনই একজন মোহাম্মদ এনায়েত৷ ১২ বছর আগে এখানে এসেছিলেন তিনি৷ ২০১০ সাল থেকে এথেন্সের রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন৷ বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে৷ দুবাই থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে পৌঁছেছিলেন তিনি জীবিকার সন্ধানে৷ ভেবেছিলেন যে ব্যবসা করবেন৷ সেইভাবেই শুরু করেন৷ তারপর থেকে এই কাজটাই করছেন, অন্য কোনো কাজের কথা ভাবেননি৷ শুধু বাংলাদেশি নয়, পাকিস্তান, ভারত, এশিয়ার দেশ ইউরোপীয়রাও এই ঝালমুড়ি চেখে দেখেন৷ গ্রিসের অন্য শহর থেকে বাংলাদেশি যুবক হাবিব এসেছিলেন ওমোনিয়ায়৷ তিনিও দেশের খাবারের স্বাদ পেতে ঝালমুড়ি খেতে এসেছিলেন৷

এথেন্সের ‘বাংলা গলি’

এই ঝালমুড়ির দোকানের রাস্তার পাশেই রয়েছে বাংলা গলি নামে একটি দোকান৷ গোটা এই এলাকাটি বাংলাদেশি অধ্যুষিত৷ আগে মূলত নাইজেরীয়রা এখানে থাকতেন৷ বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জায়গাটিও তাই এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে বাংলা গলি নামে৷ এখানে ২২ বছর আগে এসেছিলেন জামালউদ্দিন সরদার৷ তিনি জানান, বাঙালিরা একটি মসজিদও তৈরি করেছে এখানে৷ তার দাবি, বাঙালিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখানে নেশাদ্রব্য বিক্রি বন্ধ হয়েছে৷ আগে হেরোইনসহ একাধিক মাদক বিক্রি হতো৷

গ্রিসে কেমন আছেন বাংলাদেশিরা, ডয়চে ভেলের সংবাদকর্মীর প্রশ্নের উত্তরে জামালউদ্দিন বলেন, ‘‘কারিগরদের জন্য গ্রিস খুব ভালো৷'' তবে তার আক্ষেপ, ‘‘বাংলাদেশিরা বেশিরভাগ ইটালি, ফ্রান্সে চলে গিয়েছে৷ ২০ থেকে ৩০ বছর গ্রিসে থাকার পরেও বৈধ কাগজ না হওয়ায় তারা এ দেশে থাকতে চাইছেন না৷ পাসপোর্ট মেলে না, কাগজ রেখে দেয়া হয়, নানা যুক্তি দেখানো হয়৷ চলতি বছরে কয়েক হাজার বাংলাদেশি গ্রিস ছেড়েছেন৷ ইটালি, ফ্রান্সের পাশাপাশি জার্মানি আর সুইডেনেও গিয়েছেন কেউ কেউ৷ ৫০ বছর থাকলেও হয়তো পাসপোর্ট পায় না৷ কারিগরদের বেতন ভাল৷ কিন্তু নথি সংক্রান্ত সংকটের কারণে কেউ থাকতে চান না৷ ৮০ শতাংশ বাঙালি গ্রিস ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ পর্তুগালে গেলে পাঁচ বছরে পাসপোর্ট হয়ে যায়৷’’

‘জেলে যারা রয়েছেন আগে তাদের কাগজ হোক'

গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী নোতিস মিতারাচির বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা চুক্তি করে৷ সেই চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিবছর চার হাজার করে পাঁচ বছরে মোট ২০ হাজার বাংলাদেশিকে মৌসুমি কাজের ভিসা দেবে গ্রিস৷ পাশাপাশি অনুমতি ছাড়া দেশটিতে অবস্থানরত ১৫ হাজার বাংলাদেশিকেও দেয়া হবে সাময়িক বসবাস ও মৌসুমি কাজের অনুমতি৷

কিন্তু গ্রিসে বসবাসরত বাংলাদেশিরাএতে খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না৷ জামালউদ্দিন বলেন, ‘‘চুক্তিটা ভাল৷ কিন্তু নিজেদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ কাগজ সংক্রান্ত নিয়ম বারবার বদল হচ্ছে৷’’ জামালের কথায়, ‘‘আগে আনলিমিটেড ছিল, তারপর তা হয়েছে ১০ বছর, তারপর সেটা দাঁড়িয়েছে তিন বছরে৷ অভিবাসীরা তাই গ্রিসে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত৷’’ ২২ বছর থেকেও নাগরিকত্বের কার্ড পাননি তিনি৷ তার মনে হয়, বাংলাদেশের বেকার মানুষদের জন্য গ্রিস এবং বাংলাদেশের চুক্তিটা জরুরি হলেও যে বাংলাদেশিরা গ্রিসে অনিয়মিতভাবে রয়েছেন, আগে তাদের কথা ভাবা উচিত সরকারের৷ তিনি বলেন, ‘‘তিন-চার হাজার বাংলাদেশি ১৮ মাস ধরে জেলে রয়েছেন৷ তাদের আগে নিয়মিত করা হোক৷ তারপর যদি এ দেশ মনে করে মৌসুমি শ্রমিক আনবে, সমস্যা নেই৷ দূতাবাসের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া উচিত যাতে জেলে যারা রয়েছেন, তাদের আগে কাগজ দেয়া হয়৷’’

চুক্তি নিয়ে সন্দেহ বাংলাদেশিদের

১২ বছর ধরে গ্রিসে রয়েছেন ইব্রাহিম৷ কাজ করছেন, কিন্তু এখনও বসবাসের বৈধতা পাননি তিনি৷ এরমধ্যে গ্রিসের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড় বেড়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের হয়রানি অনেক বেশি৷ সবাই এ দেশ থেকে চলে যায়৷ আমিও চলে যাব৷ স্পেন, পর্তুগালসহ ২৯টি দেশ আছে৷ সেখানে যেতে চেষ্টা করব৷’’গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মী নেয়ার চুক্তি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না ইব্রাহিমের কাছে৷ তার দাবি, ‘‘লোক আনবে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না৷ বাংলাদেশ সরকার গ্রিসের অবস্থা জানে না৷ বিদেশি দেখতেই পারে না গ্রিস৷ গ্রিসে অনেক অনিয়মিত বাংলাদেশি আছেন৷ কেউ কাগজ পাচ্ছেন না৷ আগে এখানকার লোকদের কাগজ দিলে তারপর বিশ্বাস হবে৷ এদেশে নানা দেশের অনিয়মিত অভিবাসীরা রয়েছেন৷ তাদের ফেলে বাংলাদেশ কেন এটা বিশ্বাস করা মুশকিল৷''

এথেন্সে ২০ বছর কাজ করেছেন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি মানিক৷ ২০০৫ সালে বৈধ কাগজ পেয়েছেন তিনি৷ কিন্তু তবুও গ্রিসে থাকতে চান না৷ ফিরে যাবেন বাংলাদেশে৷ আজিমানুল্লা নামে আরেক ব্যক্তি বলেন তিনিও ২০ বছর গ্রিসে রয়েছেন কিন্তু কাগজ নিয়ে এখনও তার সমস্যা রয়েছে৷ তাই বন্দি হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে মনে৷ গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে সন্দেহ তার মনেও৷ তার কথায়, ‘‘অনিয়মিতভাবে আসা বাংলাদেশিরা অনেকেই কাগজ পাননি, তারাও দীর্ঘদিন এই দেশে রয়েছেন৷ তাদের কী হবে?’’

গ্রিস অনুমোদন দিলেও বাংলাদেশে সমঝোতা চুক্তিটির অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি৷ বাংলাদেশে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মন্ত্রিসভা৷ গ্রিসে বিপুল পরিমাণে বাংলাদেশি থাকলেও এই চুক্তি নিয়ে তাদের মধ্যে কোথাও যেন সংশয় রয়েছে৷ দীর্ঘদিন ধরে গ্রিসে বাস করেও স্থায়ী বসবাসের আইনি কাগজ না মেলায় ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় বাংলাদেশিরা৷

অভিবাসীদের নিয়ে তথ্যচিত্র- ‘রুটের নাম বলকান’