1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ের চাপ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ অক্টোবর ২০২২

বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেই রাজপথ দখলের লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

https://p.dw.com/p/4Ibqd
Bangladesch | BNP Rally in Khulna
খুলনায় বিএনপির জনসভাছবি: Kazi Fazla Rabby

বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। আর ডিসেম্বরেই রাজপথ দখলে রাখতে মাঠে নামবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। দুই দলের এই লড়াইয়ে চাপে সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বৈশ্বিক অস্থিরতায় আমরা এমনিতেই চাপে আছি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন দিন দিন নেমে যাচ্ছে। ঠিকমতো শিপমেন্ট করতে না পারার কারণে ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে। তাদের চাহিদাও দিন দিন কমেছে। এই সংকটের মধ্যে যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয় তাহলে আমাদের মহা সংকটে পড়তে হবে। আমি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের অনুরোধ করব, সংকটকালীন এই সময়ে আপনারা যে কর্মসূচি দেন না কেন সেটা যেন একটু চিন্তা ভাবনা করে দেওয়া হয়।”

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার ও জ্বালানি সংকট এবং বৈশ্বিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতি এখন টালমাটাল। সাধারণ মানুষ পড়েছে জীবন-জীবিকার চাপে। এমন বিপদসংকুল সময়ে রাজনৈতিক সংঘাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষকে রক্ষায় বিশিষ্টজনেরা রাজনৈতিক উদারতা ও ঐকমত্যের পক্ষেই কথা বলেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "দুই রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতার লড়াইয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তারা কেউ মানুষের কথা ভাবছে না। এক দল ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে, আরেক দল ক্ষমতায় যেতে চাইছে। কষ্টে থাকা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট ও যুদ্ধে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়েছে বিদ্যুৎ সংকট, ডলার সংকট, কর্মসংস্থানের সংকট। সব সংকট যখন সাধারণ মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, তখন দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতার কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত। আর তাতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। রাজনৈতিক দলের বাইরে থাকা নাগরিক সমাজকে ভূমিকা নিতে হবে। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কিছুতেই দেখতে চাই না।”

বর্তমানে বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের সমাবেশ বাধামুক্ত হলেও পরে ময়মনসিংহ ও খুলনার কর্মসূচিতে পদে পদে বিপত্তি ছিল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। শ্রমজীবী মানুষের জীবিকা বিঘ্নিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপিকে রাজপথ ইজারা দেওয়া হয়নি, আওয়ামী লীগও রাস্তায় নামবে। আওয়ামী লীগের এমন বক্তব্যে অনেকটা স্পষ্ট, বিএনপির অন্য বিভাগীয় সমাবেশ সহজ হবে না। আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। 

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিএনপির গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি দেখে সরকার চাপে পড়েছে। এসব সমাবেশে যেভাবে সাধারণ মানুষ বাধা পেরিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন তাতে সরকারের ভিত নড়ে উঠেছে। বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সমাবেশে যেভাবে মানুষ আসছে তাতে ভয় পেয়ে সরকার হামলা ও ধরপাকড় শুরু করেছে।”

‘দুই রাজনৈতিক শক্তির সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়েছে’

সরকার তো চাইলে বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করে দিতে পারত? সেটা তো করেনি? জবাবে জনাব প্রিন্স বলেন, "বর্তমানে দেশের ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর সেই শক্তি নেই যে, সমাবেশ বন্ধ করে দেবে। ডিসেম্বর মাস তো শুধু তাদের না, সারা দেশের মানুষের। আমরাও জাতীয় পাতাকা হাতে মাঠে থাকব।”

তবে বিএনপি সমাবেশে জনসমাগম বাড়ায় আওয়ামী লীগ চাপে পড়েছে এ কথা মানতে নারাজ দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মোজাম্মেল হক। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "আমরা তো তাদের কোন কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছি না। পরিবহন মালিকেরা যদি গাড়ি না চালান আমরা কী করতে পারি। বিশেষ করে খুলনার সমাবেশের পর আমি নিজে একজন পরিবহন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে চেয়েছি, কেন তারা পরিবহন বন্ধ করেছে? জবাবে তিনি বলেছেন, ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি পেট্রোল বোমাসহ নানভাবে তাদের পরিবহন ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এই কারণে বিএনপির কোন কর্মসূচি আসলেই তারা ভয় পান। রাস্তায় গাড়ি নামাতে সাহস পান না। আর জনসমাগম সেটা তো আমাদের একটা জেলার কাউন্সিলে যে লোক হয়, তাদের বিভাগীয় সমাবেশেও সেই লোক হচ্ছে না। তাহলে ভয়ের কী আছে?”

পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তা প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বক্তব্যে স্পষ্ট। রোববার তিনি বলেছেন, "রিজার্ভের যে অবস্থা, জানি না সামনে কী হবে! এলএনজি এখন আমরা আনছি না। এ সময়ে ২৫ ডলার হিসাব ধরেও যদি এলএনজি আমদানি করতে যাই, তাহলে ছয় মাসের চাহিদা মেটানোর মতো অবস্থা (টাকা) আছে কিনা, জানি না। সাশ্রয়ী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রয়োজনে দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ করেই দিতে হবে।”

বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ১১ বছরে সর্বোচ্চ। ঢাকা নগরেই আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। কলকারখানার উৎপাদন কমেছে। রপ্তানি নিম্নমুখী। রেমিট্যান্স কমছে। নিত্যপণ্যের দামে মানুষ দিশেহারা। ঋণের জন্য আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে যেতে হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাতে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যাহত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিতে সব পক্ষের ঐকমত্যের কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদেরা।

অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে ঐকমত্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার পতনে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিরোধী দল বাধামুক্ত কর্মসূচি পালন করতে পারবে, তেমন আশাও দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার হুঁশিয়ার করে বলেছেন, "খেলা হবে ডিসেম্বরে।”