অজানা রহস্য জানাবে জুনো
৫ জুলাই ২০১৬শব্দের ২০০ গুণ বেশি গতিতে প্রায় ২৭০ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার ভোরে (০৪:০০ জিএমটি/ইউটিসি) বৃহস্পতির কক্ষপথে ঢুকে পড়ে জুনো৷ গাঢ় কালো মহাকাশকে ভেদ করে এত দীর্ঘ একটা পথ পাড়ি দেয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়, তাও আবার একেবারে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে৷ তার ওপর বৃহস্পতির চারপাশে তীব্র রাসায়নিক বিকিরণের বলয় রয়েছে, যার কাছাকাছি অরক্ষিত অবস্থায় গেলে যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ তাই জুনোর যাত্রাপথ নিয়ে বেশ চিন্তাতেই ছিলেন তার প্রধান পরীক্ষক স্কট বল্টন৷ সান আন্টোনিয়োর ‘সাউথ-ওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট' থেকে সে কথাই জানিয়েছিলেন স্কট৷ বলেছেন, ‘‘আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম, নার্ভাসও লাগছিল৷ মনে হচ্ছিল, বৃহস্পতির কক্ষপথে ঢোকার আগেই যদি কোনো অঘটন ঘটে?''
না, সেরকম কিছুই ঘটেনি৷ বরং পরীক্ষা একবারে সফল৷ বিশেষভাবে নির্মিত জুনো কোনো সমস্যা ছাড়াই যে বৃহস্পতির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে! আর তাই তো আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়ার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন৷ আর নাসা'র ধারাবিবরণীতে বলা হয়, ‘বৃহস্পতিতে স্বাগতম'৷
পাঁচবছর আগে, সেই ২০১১ সালের ৮ আগস্ট ‘সৌরজগতের রাজা' বৃহস্পতির উদ্দশ্যে যাত্রা করেছিল জুনো৷ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ১১০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে সে সময় তৈরি করা হয়েছিল এই মানববিহীন নভোযানটি৷ মূল উদ্দশ্য ছিল – জুনোকে বৃহস্পতির কক্ষপথে পাঠিয়ে গ্রহটির সম্পর্কে অজানা তথ্য সংগ্রহ করা৷
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই মিশনে বৃহস্পতিকে ৩৭ বার প্রদক্ষিণ করার সুযোগ থাকবে জুনোর৷ আর তারপর, ২০১৮ সালে বৃহস্পতির বুকে আছড়ে পড়বে এটি৷ মিলিয়ে যাবে মহাবিশ্বের মহাকাশে৷
বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করার হিসেবে জুনো অবশ্য প্রথম নভোযান নয়৷ এর আগে ১৯৮৯ সালে পাঠানো গ্যালিলিও নভোযানটিও বৃহস্পতি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানায়৷ বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টোর পৃষ্ঠে লোনা পানির অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিল গ্যালিলিও৷ তবে জুনো আরও অনেক কাছ থেকে বৃহস্পতিকে জানার, বোঝার সুযোগ করে দেবে৷ বৃহস্পতি-পৃষ্ঠের ৩ হাজার ১০০ মাইল ওপর থেকে তথ্য পাঠাতে পারবে এই নভোযান৷ করবে রহস্যের সমাধান, দেবে নানা প্রশ্নের উত্তর৷
কতটা জল রয়েছে বৃহস্পতিতে? কতটা কঠিন পদার্থ? কেনই বা বৃহস্পতিকে সৌরজগতের আর পাঁচটা গ্রহের থেকে বেশি উজ্জ্বল মনে হয়?
স্কট বল্টনের ভাষায়, ‘‘আমরা বৃহস্পতি রহস্যের একেবারে তলানি পর্যন্ত যেতে চাই৷ জানতে চাই কীভাবে তৈরি হয়েছে এই গ্রহ, কী কী দিয়ে তৈরি হয়েছে৷''
ডিজি/এসিবি
ভিডিওটি দেখলেন? কেমন লাগলো জানান নীচের ঘরে৷