বুসানে বাংলাদেশের জয়যাত্রা
এশিয়ার চলচ্চিত্র জগতের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন বুসান আন্তর্জাতিক উৎসব৷ দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে এবারের আসরে বাংলাদেশের উপস্থিতি সার্থক করেছে ‘বলী’ ছবির পুরস্কার জয়৷ ছবিঘরে দেখুন বুসানে বাংলাদেশের জয়যাত্রা৷
এশিয়ার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান
১৯৯৬ সালে শুরু হয় প্রথম পুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (পিআইএফএফ)৷ ২০১০ সাল পর্যন্ত এই নামেই প্রতিবছর উৎসব হয়েছে৷ ২০১১ সাল থেকে এর নামকরণ হয় বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (বিআইএফএফ)৷ এবার হয়ে গেলো উৎসবটির ২৮তম আসর৷ বুসান শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, সেই সঙ্গে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এশিয়ার চলচ্চিত্রের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে৷
‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ দিয়ে শুরু
পুসান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ (২০০৯)৷ এরপর ২০১২ সালে উৎসবের সমাপনী ছবি নির্বাচিত হয় তার ‘টেলিভিশন’৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘বুসান এশিয়ান সিনেমার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ শিল্প-সংস্কৃতি আগের মতো ইউরোপকেন্দ্রিক নেই৷ বুসানে এখন বাংলাদেশের সিনেমা মনোযোগ পাচ্ছে৷ আমি নিশ্চিত, সামনের দিকে আমাদের নির্মাতারা এখানে ঝলক দেখাবেন৷’
‘বলী’র জয়
বুসানের এবারের আসরে নিউ কারেন্টস বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ইকবাল হোসাইন চৌধুরী পরিচালিত ‘বলী’ (দ্য রেসলার)৷ এটি চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ার সাগরপাড়ের খ্যাপাটে জেলে মজুর গল্প৷ দুর্বল শারীরিক গড়ন সত্ত্বেও ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় অংশ নিতে চায় সে৷ বিচারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আকর্ষণীয় একটি সিঙ্গেল রাউন্ড ম্যাচের মতো ছবিটি, এতে দারুণভাবে গল্প বলা হয়েছে৷’
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পাওয়া ‘বলী’র (দ্য রেসলার) শুটিং হয়েছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায়৷ গল্পের প্রয়োজনে এতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার হয়েছে৷ এজন্য মজু চরিত্রে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের অভিনেতা নাসির উদ্দিন খানকে৷ পরিচালক ইকবালের আশা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হওয়ার সুবাদে ছবিটি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে দীর্ঘদিন৷ ছবিটি প্রযোজনা করেছেন পিপলু আর খান৷
‘স্বপ্নটা বাস্তবায়ন হওয়ায় কষ্ট নেই’
নিউ কারেন্টস বিভাগে এশিয়ার উদীয়মান নির্মাতাদের ১০টি নতুন প্রথম কিংবা দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে৷ এরমধ্যে ‘বলী’র পাশাপাশি প্রতিযোগিতা করেছে বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’৷ তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন দেখেছি একদিন বুসান কিংবা বড় উৎসবে পৌঁছাবো৷ তবে আমাদের দেশে যে কাঠামোর মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র বানাতে হয় সেটা অনুকূল নয়৷ সব জায়গা থেকেই একটা সংগ্রাম করতে হয়৷ সবশেষে স্বপ্নটা বাস্তবায়ন হওয়ায় সেগুলো নিয়ে কষ্ট নেই৷’
‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’
বুসানে তিন কিংবা ততধিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনা করা এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত নির্মাতাদের প্রতিযোগিতা বিভাগ জিসোক৷ এতে এবার নির্বাচিত হয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’৷ এর মাধ্যমে প্রথমবার অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি৷ চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের অংশ সিনেমাটি৷ এবারই প্রথম এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিনেমা বুসানের প্রতিযোগিতায় জায়গা পেয়েছে৷
দু’হাত ভরে পেয়েছে বাংলাদেশ
বুসান এবার দু’হাত ভরে দিয়েছে বাংলাদেশকে! বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার বাংলাদেশের তিনটি সিনেমা প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে৷ এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে স্থান পায় বাংলাদেশের রবিউল আলম রবির ‘সুরাইয়া’ ছবির চিত্রনাট্য৷ এছাড়া বুসান এশিয়ান ফিল্ম অ্যাকাডেমির ফেলো হিসেবে উৎসবে কাজ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’র চিত্রগ্রাহক এজাজ মেহেদি৷
বাংলাদেশ নাইট
বুসানে একই আসরে প্রতিযোগিতা বিভাগে তিনটি সিনেমার স্থান পাওয়া উপলক্ষে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি আয়োজন করেছিল ‘বাংলাদেশ নাইট’৷ উৎসবে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয় অনুষ্ঠানটি৷ তাদের পাশাপাশি বুসানের একটি পাঁচতারকা হোটেলে আরও ছিলেন বিভিন্ন দেশের প্রযোজক, উৎসব পরিচালক, চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিকেরা৷