1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুশ, ওবামা, ট্রাম্প, বাইডেন না পারলেও পুটিন পেরেছেন

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম মূলত রাজনীতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, শরণার্থী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যু কভার করেন৷ পাশাপাশি জার্মানি ও ইউরোপে জীবনযাপনের নানা দিকও তুলে ধরেন তিনি৷
আরাফাতুল ইসলাম
১৮ মার্চ ২০২২

গত দেড় যুগ ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা একটি বিষয় খুব করে চেষ্টা করেছেন৷ কখনো ভর্ৎসনাও করেছেন৷ কিন্তু কাজ হয়নি৷ পুটিনের অবশ্য আলাদা করে কোনো চেষ্টা করতে হয়নি৷ তার এক উদ্যোগেই কাজ হয়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/48hSL
Deutschland G8 Gipfel in Heiligendamm
ছবি: Toshifumi Kitamura/AFP/Getty Images

বলছি জার্মানির কথা৷ ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশ দুটো বিশ্বযুদ্ধের পর নিজেদের বেশ খানিকটা সামলে নিয়েছে৷ এখন আর যা-ই হোক সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে রাজি নয় জার্মানি৷ অবস্থা এমন যে দেশটির সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু দুর্বলতার কারণে শিরোনাম হয়েছে অনেকবার৷ বিমান বাহিনীর বিমান যখন-তখন অকেজো হয়ে যায়, সমরাস্ত্রগুলো সেকেলে, পরমাণু বোমা নেই - এমনকি প্রতিরক্ষাখাতে বাজেট বাড়াতেও বড় অনিহা ইউরোপের কেন্দ্রের দেশটির৷ 

জার্মানি বরং জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে নিজেদের পাশাপাশি জোটভুক্ত দেশগুলোর সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দিয়েছে৷ জোটের কোনো দেশ বিপদে পড়লে সেদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ মানবতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানির এই মানসিকতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি অনেকদিন ধরে৷ কয়েক মাস আগে ওলাফ শলৎস ক্ষমতা গ্রহণের আগের ষোল বছর দেশটির চ্যান্সেলর ছিলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ আমি দেখেছি কীভাবে তিনি একের পর এক ঝড় সামলে জার্মানিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন৷ দেশটির বিদেশ নীতি যেমন নিজের দেশের জনগণের স্বার্থ এবং বাণিজ্যবান্ধব, তেমনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ইস্যুতেও সোচ্চার নিজের ভয়ঙ্কর অতীত ইতিহাসের দায় মেনে নিয়ে এগিয়ে চলা জার্মানি৷ 

জার্মানির এই এগিয়ে চলার মাঝে প্রতিরক্ষার বিষয়টি যে উপেক্ষিত হচ্ছে সেটা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ কখনো বুশ, কখনো ওবামা, কখনো ট্রাম্প, কখনো বাইডেন তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেলকে প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন, গ্যাস-তেলের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে বলেছেন৷ জার্মানি যে ন্যাটো জোটের প্রত্যাশামতো প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট বাড়াচ্ছে না, সেটা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ম্যার্কেলের বিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছিল৷ বিরক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি থেকে ন্যটো জোটের আওতায় থাকা কিছু মার্কিন সৈন্যও ফেরত নিয়েছে সেই সময়৷

কিন্তু ম্যার্কেল প্রতিরক্ষা খাতকে আলাদা করে গুরুত্ব দেননি৷ তিনি বরং পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা কমাতে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ধারাবাহিকভাবে সরিয়ে নিয়েছেন তার দেশকে৷ জলবায়ু পরিবর্তনরোধে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকেও ক্রমশ সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশের বেশি খরচেও রাজি হননি৷

ম্যার্কেলের জার্মানি বরং মার্কিন আপত্তি সত্ত্বেও রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে৷ গত পঞ্চাশ বছর ধরেই এই নির্ভরশালীতা ধরে রেখেছে জার্মানি৷ শুধু তাই নয়, নতুন এক পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে সরাসরি আরো গ্যাস আনার প্রক্রিয়াও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে৷ এতে রাশিয়া যেমন লাভবান, জার্মানিও৷

Arafatul Islam Kommentarbild App
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

ম্যার্কেলের এই নীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন না আনার পক্ষেই ছিলেন গতবছর ক্ষমতায় আসা নতুন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ কিন্তু বাধ সাধলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ ইউক্রেন আক্রমণ করে তিনি মুহূর্তেই বার্লিনের টনক নড়িয়ে দিয়েছেন৷ বুশ, ওবামা, ট্রাম্প, বাইডেনরা জার্মানিকে যা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন, পুটিনে সেটা এক আক্রমণ থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন৷

জার্মানি এখন প্রতিরক্ষাখাত শক্তিশালী করতে ন্যাটোর প্রত্যাশামতো জিডিপির দুই শতাংশের বেশি ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পাশাপাশি ২০২২ সালের বাজেটে একশ বিলিয়ন ইউরো আলাদাভাবে রাখা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর উন্নয়নের জন্য৷ শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশ্বের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার জন্য জার্মান সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে৷ আর রাশিয়ার তেল-গ্যাসের বিকল্প উৎসও খোঁজা হচ্ছে৷

শলৎস মনে করেন, জার্মানির স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র ধরে রাখতে প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করা দরকার৷ কথা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু না হলে বার্লিনের এই উপলব্ধি কি তৈরি হতো?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান