বিশ্বে শিক্ষার্থীদের ১২টি আলোচিত আন্দোলন
সারা বিশ্বেই দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ কোনোটি সফল হয়, কোনোটি হয় না৷ তবে সফল না হলেও কিছুটা প্রভাব রেখে যায়৷ ছবিঘরে বাংলাদেশের বাইরের আন্দোলনগুলোর কথা থাকছে৷
হিটলারের সমালোচনা
১৯৪২ সালে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘হোয়াইট রোজ সোসাইটি’ নামে এক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল৷ তারা হিটলারের শাসন ও ইহুদিদের উপর অত্যাচারের সমালোচনা করে বেনামে লিফলেট বিলি করেছিল৷ হিটলারের পুলিশ বাহিনী গেস্টাপো অধিকাংশ মূল আন্দোলনকারীকে আটক করেছিল৷ পরে বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ ছবিতে আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা সোফি শল (ডানে) ও তার ভাই হান্সকে দেখা যাচ্ছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
১৯৬৮ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধে লিপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ত থাকা এবং নির্মিতব্য জিমনেশিয়ামে বর্ণবাদী পরিকল্পনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা৷ বিক্ষোভকারীদের সরাতে সহিংস উপায় বেছে নেয় পুলিশ৷ বিক্ষোভে জড়িত থাকায় কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল৷ তবে দুটি দাবিই মানা হয়েছিল৷
মিয়ানমারে বিক্ষোভ
১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ জেনারেল নে উইনের সামরিক সরকার শক্ত হাতে বিক্ষোভ দমন করায় একশ’র বেশি বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছিল৷ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ চার মাস পর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছিল৷ ১৯৮৮ সালে আবারও আন্দোলন (ছবি) শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ সেটি দমানো হলেও নে উইন পদত্যাগ করেছিলেন৷
গ্রিসের এথেন্সে বিক্ষোভ
গ্রিসে তখন ছয় বছর ধরে সামরিক শাসন চলছিল৷ এর প্রতিবাদে ১৯৭৩ সালে এথেন্স পলিটেকনিকের একদল বামপন্থি শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন৷ দ্রুত তাদের সঙ্গে আরো শিক্ষার্থী যোগ দেন৷ বিক্ষোভ দমাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাংক ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷ এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ২৪ জন মারা যান৷ শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে আরেক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা আরেকটি অভ্যুত্থান করে বসেন৷ এর কয়েকমাস পর সামরিক সরকারের পতন ঘটে৷
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন
সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম বড় বিক্ষোভটি করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ ১৯৭৬ সালে জোহানেসবার্গের সোয়েটো এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে৷ পড়ালেখার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির পাশাপাশি আফ্রিকান ভাষা যুক্ত করার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়৷ আফ্রিকান ভাষাটি বর্ণবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রতিবাদ হয়৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ গুলি চালালে সরকারি হিসেবে ১৭৬ জন (মতান্তরে প্রায় ৭০০ জন) প্রাণ হারান৷
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
১৯৯৮ সালের ১২ মে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছিল ত্রিশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ তাদের দমাতে পুলিশ গুলি চালালে চারজন মারা যায়৷ এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হলে সুহার্তো পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা সুহার্তো৷
তিয়েনআনমেন স্কোয়ার বিক্ষোভ
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ছিলেন হু ইয়াওবাং৷ তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন৷ সে কারণে একসময় তিনি দলের পদ হারান৷ ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যুর পর গণতন্ত্রপন্থি শিক্ষার্থীরা বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বিক্ষোভ শুরু করে৷ পরে সেটা বড় হলে তাদের দমাতে সামরিক আইন জারি করা হয়৷ ট্যাংক দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়৷ এতে মতান্তরে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ইরানের ‘তিয়েনআনমেন স্কোয়ার’
১৯৯৯ সালে সংস্কারবাদী পত্রিকা ‘সালাম’ বন্ধের প্রতিবাদে তেহরানের রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ এরপর পুলিশ হলে ঢুকে বিছানা পুড়িয়ে দেয়, জানালার কাচ ভেঙে ফেলে৷ ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনের সময় কয়েক হাজার জনকে আটক করা হয়৷ প্রায় ৭০ জন নিখোঁজ হন৷ বিক্ষোভের পর সরকার উলটো বাকস্বাধীনতা আইন আরও কঠোর করেছিল৷
লন্ডনে বিক্ষোভ
শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাবের প্রতিবাদে ২০১০ সালে লন্ডনে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ কোনো কোনো বিক্ষোভে ৩০ থেকে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়৷ এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সরকারি দলের ক্যাম্পেন হেডকোয়ার্টারে ঢুকে পড়েছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করেছিল৷
হংকংয়ের ‘ছাতা বিপ্লব’
২০১৪ সালে চীনের কংগ্রেস হংকংয়ের নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব করে৷ সেটি বাস্তবায়িত হলে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে বলে হংকংয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে৷ বিক্ষোভকারীদের মারধরও করা হয়৷ এসব থেকে বাঁচতে ছাতার ব্যবহার শুরু করেছিল তারা৷ তাই এটি ‘আমব্রেলা রেভুলিউশন’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল৷ ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল এই আন্দোলন৷
পৃথিবী বাঁচানোর আন্দোলন
২০১৮ সালে প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সংসদের কাছে এই পোস্টার নিয়ে দাঁড়াতেন সুইডেনের স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ সেখানে লেখা আছে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’৷ টুনব্যার্গের এই আন্দোলন এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার শিক্ষার্থীরা৷
ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনে৷ ঘটনার তদন্তের দাবি উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শোনেনি৷ তাই শিক্ষার্থীরা কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেছিল৷ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে৷ উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশ এমন আচরণ করে বলে অভিযোগ ওঠে৷ আন্দোলন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়েছিল৷ পরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন উপাচার্য৷