1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বায়ন কি তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে?

৪ এপ্রিল ২০২২

প্রথমে করোনাভাইরাস মানুষের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায় ফাটল ধরিয়েছিল। আর এখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিত্যপণ্যের বাজারে ধস নামাচ্ছে। এই বিষয়গুলো আমাদের ডি-গ্লোবালাইজেশনের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/49RM6
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, করোনা মহামারির পর, ইউক্রেন যুদ্ধ এই দুয়ে মিলে ‘ডি গ্লোবালাইজেশন যুগের’ সূচনা করবে৷ 
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, করোনা মহামারির পর, ইউক্রেন যুদ্ধ এই দুয়ে মিলে ‘ডি গ্লোবালাইজেশন যুগের’ সূচনা করবে৷ ছবি: Maxar Technologies/REUTERS

বিশ্বায়নের কথা তো কম বেশি সবাই জানে। কিন্তু অবিশ্বায়ন বা ‘ডিগ্লোবাইলেজশন’ সম্পর্কে কয়জনই বা জানে? সরবরাহ খাতে বিশৃঙ্খলা, পণ্যের ঘাটতি এবং ঊর্ধগতি এসব যে প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত, সেটাই ডিগ্লোবালাইজশন৷

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, করোনা মহামারির পর, ইউক্রেন যুদ্ধ এই দুয়ে মিলে ‘ডি গ্লোবালাইজেশন যুগের’ সূচনা করবে৷ 

কিন্তু এই নতুন পৃথিবীটা কেমন হবে?

বিশ্বায়নের সংজ্ঞা

বিশেষজ্ঞরা সাধারণত তিন ধরনের বিশ্বায়নের কথাবলে থাকেন৷ অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক।

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি টিকে আছে৷ এর ফলে সাধারণ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব হয়েছে।

জার্মান অর্থনীতিবিদ কোরা ইয়ুং ব্লুথ বলেন, “বিশ্বায়নের প্রভাব সমাজ এবং পরিবেশের উপরও পড়ে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর কর্মীরা কাজ করতে নিম্ন আয়ের দেশে চলে যাচ্ছেন এবং সেখান থেকে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি উৎপাদনের জন্য অন্যরকম পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে পরিবেশে এর প্রভাব পড়েছে।“

অর্থনৈতিক মন্দার পরে বিশ্বায়ন

বিশ্বায়নের ফলে যেমন অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরশীলতা বেড়েছে, তেমনি অবিশ্বায়নের কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতিঘটছে।

যুক্ত্ররাষ্ট্রের ডার্ট্মাউথ কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক ডগলাস আরউইন ব্যাখ্যা করেছেন, “১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকে বিশ্বজুড়ে জিডিপিতে রপ্তানির অনুপাত বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল। কিন্তু ২০০৮ এবং ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর তাতে সমতা এসেছে বা কমে গেছে।“

এরপর এলো মহামারি

করোনা মহামারির কারণেঅর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তনএসেছে। এর কারণে পণ্য ঘাটতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এগুলো কে ভুলতে পারে।

হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অর্থনীতিবিদ মেগান গ্রেনে বলেন, “এরকম সংকট সরবরাহের ধারায় মৌলিক পরিবর্তন সৃষ্টি করেছে। এই মহামারিতে মজুদের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে যাতে বিশ্বব্যাপী সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলেও কাউকে বিপদে পড়তে না হয়।“

এরপর শুরু হলো ইউক্রেন যুদ্ধ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর রাশিয়ার কৃষি এবং জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞার পর এর প্রভাব টের পেলেন বিশ্ববাসী৷ 

রাশিয়া এবং ইউক্রেন গম এবং সূর্যমূখী তেল রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি দেশ। 

অর্থনীতিবিদ থেসিস পিটারসেন মনে করেন, “জ্বালানি আমদানিতে আমাদের ঘাটতি রয়েছে কারণ ইউরোপ রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল এবং পুরো বিশ্বের রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কৃষিজাত পণ্যের প্রয়োজন রয়েছে।“

শুধু নিম্ন আয়ের দেশগুলিতেই নয়, বিশ্বের উচ্চ আয়ের দেশগুলিতেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অনুভব করা যাবে। অর্থনীতিবিদদের আশংকা “গম এবং তেলের উপর নির্ভরশীল দেশগুলো তে দুর্ভিক্ষও দেখা যেতে পারে।“

বিশ্বায়ন যুগের অবসান

অর্থনীতিবিদ গ্রিনে উল্লেখ করেন, “বিশ্বায়ন পরিমাপের কোন সূচক নেই।  বিশ্বায়নের সুসময় এখন আর নেই। কিন্তু আমি বলবো, এই প্রক্রিয়া এখন আরো ধীরগতিতে চলছে। আমরা এখনো অবিশ্বায়নের পর্যায়ে চলে যাইনি।“

সাহসী নতুন সংযোজন

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, “রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং চীন থেকে মূলধন অপসরণ একটি প্রবণতাকে নির্দেশ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, দেশগুলি তথাকথিত সংকটপূর্ণ নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে, যা অবিশ্বায়নের দিকে পরিচালিত করতে পারে।“

অর্থনীতিবিদরা বিশ্বাস করেন যে বিশ্ব বর্তমানে দুটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক দলের দিকে যাচ্ছে: একটি দল গণতান্ত্রিক অর্থনীতির দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ওশেনিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ অ্যামেরিকা) এবং আরেকটি দল স্বৈরাচারী রাষ্ট্রগুলির (চীন, রাশিয়া এবং তাদের অংশীদারেরা)।

ইতিহাসবিদ আন্দ্রেয়াস ভিরশিং বলেন, “আমরা নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছি কিনা এটা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় আলোচ্য বিষয়।  করোনা মহামারি এবং এখনকার যুদ্ধ নিয়ে একসাথে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে বিশ্বে মৌলিকভাবে কিছু একটা পরিবর্তন ঘটছে।“

সোনিয়া অ্যাঞ্জেলিকা দিন/এএস