বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে করোনা সংকট
৩১ জুলাই ২০২০বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ছয় মাস পর এখনো পর্যন্ত প্রায় এক কোটি সত্তর লাখ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে৷ মৃতের সংখ্যা ছয় লাখ আটষট্টি হাজারেরও বেশি৷ এই সংকট মোকাবিলা করতে লকডাউনসহ নানা কড়া পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ অসংখ্য মানুষের রুজিরোজগারে টান পড়ছে৷ উৎপাদনশীলতাও মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ অনেক দেশ জরুরি ভিত্তিতে ভরতুকি ও নানা রকম আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু সামর্থ্যের সীমা অতিক্রম করলে সরকারি কোষাগার দীর্ঘমেয়াদী সংকটে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে৷
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনা সংকটের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সে দেশের অর্থনীতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নয় দশমিক পাঁচ শতাংশ লোকসানে চলছে৷ বছরে দ্বিতীয় কোয়ার্টার বা তিন মাসের হিসেবে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, যা আগের সব নেতিবাচক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে৷ এমন প্রবণতা চলতে থাকলে অ্যামেরিকার অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে পড়বে বলে পূর্বাভাষ দেওয়া হচ্ছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থাও মোটেই ভালো নয়৷ জার্মানির অর্থনীতি প্রায় দশ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানা গেছে৷ বছরের দ্বিতীয় জার্মানির অর্থনীতির ১০.১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম-সহ একের পর ইইউ সদস্য দেশেও এমন নেতিবাচক চিত্র উঠে আসছে৷ ইউরো এলাকার ১৯টি দেশেও আগের কোয়ার্টারের তুলনায় জিডিপি তিন দশমিক দুই শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে৷ জুলাই মাসের শুরুতেই ইউরোপীয় কমিশন এক ভয়াবহ পূর্বাভাষ তুলে ধরেছিল৷
শুধু দেশ নয়, বিশাল ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলিও চরম সংকটে পড়েছে৷ বিশেষ করে ভ্রমণের উপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলি মারাত্মক লোকসানের মুখ দেখছে৷
যেমন বছরের প্রথমার্ধে ইউরোপের এয়ারবাস কোম্পানির ১৯০ কোটি ইউরো লোকসান হয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে এই সময়কালে কোম্পানিকে প্রায় ১,২০০ কোটি ইউরো ব্যয় করতে হয়েছে৷
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ – এই প্রবাদ সত্য প্রমাণ করে অ্যাপেল ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি-নির্ভর কোম্পানি সংকটের সময় রেকর্ড মুনাফা করেছে৷ অ্যামাজনের মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানা গেছে৷
করোনা সংকটকে ঘিরে লাগাতার অনিশ্চয়তাও পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে৷ অস্ট্রেলিয়ার মতো যে সব দেশ প্রথমদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছিল, এমন অনেক দেশের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে৷ ইউরোপের অনেক দেশে সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ' সম্পর্কেও জল্পনাকল্পনা চলছে৷ করোনা মোকাবিলায় ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার ও বিপণন সম্পর্কে স্পষ্ট পূর্বাভাষ না থাকায় করোটা সংকটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কোনো নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে না৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)