1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিরোধী-অস্ত্র নিরাপত্তায় গাফিলতি, বিজেপি-র অস্ত্র দুর্নীতি

১৫ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রবল রাজনৈতিক লড়াই শুরু। বিরোধীদের হাতিয়ার সংসদে নিরাপত্তায় গাফিলতি, চাকরি না পাওয়া। বিজেপি-র অস্ত্র দুর্নীতি।

https://p.dw.com/p/4aCLx
১৩ ডিসেম্বর দুই যুবক লোকসভায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
লোকসভায় নিরাপত্তা গাফিলতিই বিরোধীদের কাছে বড় অস্ত্র। ছবি: AFPTV/AFP/ Getty Images

ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস সাংসদ ধীরাজ সাহুর বাড়ি থেকে ৩৫৩ কোটি টাকা উদ্ধার করেছেন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা। মোট পাঁচদিন ধরে ৪০টি মেশিন এনে টাকা গোনা হয়েছে। সুটকেসে, আলমারিতে থরে থরে টাকার বান্ডিল রাখা ছিল। এখানেই শেষ নয়, এবার আয়কর কর্তৃপক্ষ বিশেষ যন্ত্র আনছেন। তা নিয়ে বাড়ির নিচে খনন করা হবে। দেখা হবে, সেখানে কোনো সোনা, রুপো বা আরো টাকা লুকিয়ে রাখা হয়েছে কিনা।

ধীরাজ সাহুর বাড়ি থেকে এত টাকা উদ্ধার করার পর কংগ্রেস  সাংসদের সামাজিক মাধ্যমে করা একটি পোস্ট ভাইরাল রয়েছে। নোটবন্দির সময় তিনি পোস্ট করে দাবি করেছিলেন, এত কালো টাকা উদ্ধার পাচ্ছে দেখে তিনি অবাক হয়ে গেছেন। কংগ্রেসই একমাত্র ভারতে দুর্নীতিমুক্ত শাসন উপহার দিতে পারে। এখন তার দুর্নীতির উদাহরণ সামনে আসার পর এই পোস্ট নিয়ে আলোচনার কোনো শেষ নেই। কারণ, আমাদের দেশে কোনো তদন্তকারী দলের তল্লাশির ফলে এত টাকা এর আগে কখনো উদ্ধার হয়নি। এর ফলে ধীরাজ তো বটেই, তার দল কংগ্রেসও বেকায়দায় পড়েছে।

মহুয়া মৈত্রের ঘটনা

সম্প্রতি লোকসভাথেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন মহুয়া মৈত্র। তিনি সাংসদ হিসাবে পাওয়া সংসদভবনের সঙ্গে যুক্ত মেল, ওয়েবসাইটের লগ ইন ও পাসওয়ার্ড দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি-সহ একাধিক ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। তার অ্যাকাউন্ট থেকে একদিনে দেশ ও বিদেশের পাঁচটি জায়গা থেকে লগ ইন করা হয়েছে। সেখান তেকে প্রশ্ন জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন।

মহুয়া স্বীকার করেছেন, তিনি লগ ইন ও পাসওয়ার্ড আইডি দর্শন হীরানন্দানিকে দিয়েছিলেন। তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, তিনি উপহারও নিয়েছেন। তবে টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। এথিক্স কমিটির রিপোর্ট অবশ্য বলেছে, মহুয়ার বেশ কয়েকটি বিদেশ সফর নিয়ে  ধোঁয়াশা আছে। তাদের সুপারিশ, কেন্দ্রীয় তদন্তকরী সংস্থাকে দিয়ে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিয়োগ তদন্ত করে দেখা হোক।

বিরোধী দলগুলি মহুয়ার বিষয়ে তৃণমূলের পাশে একজোট হয়ে আছে। ধীরাজ সাহুর বিষয়েও কংগ্রেসের সহয়োগী ও ইন্ডিয়া জোটের অন্য দলগুলি বিশেষ উচ্চবাচ্য করছে না। কিন্তু বিজেপি সমানে বিষয় দুইটি  তুলছে।

লোকসভায় লাফিয়ে পড়া

এই দুইটি বিষয় নিয়ে বিজেপি যখন বিরোধীদের উপর আক্রমণ জোরদার করছে, তখনই লোকসভার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে।  দুই দিন আগে দুই যুবক লোকসভায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ও হলুদ রংয়ের গ্যাস ছড়িয়ে দেয়.। তাদের দুই সহয়োগী লোকসভা চত্বরের ঠিক বাইরে এই রঙিন গ্যাস ছড়ায়। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের এক সহযোগী ও মূল পরিকল্পনাকার ললিত ঝাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ললিত আবার দীর্ঘদিন কলকাতায় ছিল।

এদের পরিকল্পনা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর হাতে একটা লিফলেট তুলে দেয়া। সেখানে লেখা ছিল, 'প্রধানমন্ত্রী নিখোঁজ। কেউ তাকে খুঁজে দিলে সুইস ব্যাংক থেকে অর্থ দেয়া হবে।' লোকসভায় লাফিয়ে পড়া সাগর শর্মা ই-রিকশ চালাত। অন্য যে যুবক ডি মনোরঞ্জন গ্যালারিতে ঢুকেছিল, সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে। নীলম শর্মা এমএ, বিএড পাস করেও চাকরি পায়নি। অন্যজন অমল শিন্ডে সেনা ও পুলিশের চাকরির চেষ্টা করেও প্রায়নি।

বিরোধী নেতাদের দাবি, চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে এই য়ুবকরা এরকম কাজ করেছে। এটা নরেন্দ্র মোদীর আমলে মানুষ যে চাকরি পাচ্ছে না, সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ''জনমানসের প্রতিফলন ঘটেছে লোকসভায়। চাকরি না পেলে যুবকরা আর কী করবে।''  সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন,  ''দুই কোটি চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি কোথায়? যত এই ক্ষোভ দমনের চেষ্টা হবে, ততই তা বাড়বে।''

এর মধ্যে সাগর ও মনোরঞ্জনকে লোকসভার গ্যালারিতে ঢোকার পাস দিয়েছিলেন বিজেপি-র মাইসুরুর সংসদ। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, বিজেপি প্রচার করছে এর পিছনে কংগ্রেসের হাত আছে। কিন্তু যুবকরা তো বিজেপি সাংসদের পাস নিয়ে সংসদে এসেছিল।

১৫ বিরোধী সাংসদ সাসপেন্ড

সংসদের ঘটনা নিয়ে সব বিরোধী দল একজোট হয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনকে শীত অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে প্রবল হইচই করছিলেন, চেয়ারম্যানের কথা মানেননি। তাকে সভা ছেড়ে যেতে বললেও তিনি যাননি।

লোকসভায় কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিএম, সিপিআই মিলে ১৪ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার দ্য ওয়্যারে লিখেছেন, ''বিরোধী সাংসদরা সংসদের নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি করেছিলেন, স্লোগান দিচ্ছিলেন বলে তাদের সাসপেন্ড করা হলো, আর যে বিজেপি সাংসদ দুইজনকে পাস দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না।''

বিজেপি-বিরোধীদের লড়াই

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''ভারতে একইসঙ্গে দুইটি লড়াই চলছে। একটা বিরোধীরা একজোট হয়ে সংসদে নিরাপত্তার গাফিলতির বিষয় তুলে, চাকরির বিষয় তুলে বিজেপি-কে কোণঠাসা করতে চাইছে। দুর্নীতির প্রসঙ্গ থেকে মানুষের নজর অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছে। আর বিজেপি সংসদকাণ্ডেও বিরোধীদের যোগ খুঁজে বের করতে চাইছে। তারা দুর্নীতির বিষয় তো তুলছেই। রাজনীতিতে এটাই হয়।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)