1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিপাকে জার্মান নারীরা

মোনা নাগার/এসবি১৮ অক্টোবর ২০১২

জার্মান সমাজে বিদেশিদের সমস্যা নিয়ে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হয়৷ কিন্তু বিদেশে জার্মান নাগরিক, বিশেষ করে জার্মান নারীদের অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়৷

https://p.dw.com/p/16Rmt
মধ্যপ্রাচ্যে বহু জাতি-ধর্ম-সংস্কৃতির দেশ লেবানন৷ সেখানকার সমাজ বেশ খোলামেলা বলে পরিচিত৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen

মধ্যপ্রাচ্যে বহু জাতি-ধর্ম-সংস্কৃতির দেশ লেবানন৷ সেখানকার সমাজ বেশ খোলামেলা বলে পরিচিত৷ এরিকা সে দেশেই বসবাস করেন৷ জন্ম জার্মানিতে, বিবাহসূত্রে এখন তিনি লেবাননের নাগরিক৷ কিন্তু স্বামীর দেশের নাগরিকত্ব নিতে গিয়ে তিনি জার্মান নাগরিকত্ব খুইয়ে বসে আছেন৷ অথচ ঠিক সময় কেউই তাঁকে এ বিষয়ে সচেতন করে দেন নি৷ না জেনেই ভুল করে বসে আছেন তিনি৷

বছর ছয়েক আসে এরিকা স্বামীর সঙ্গে লেবাননে বসবাস করতে আসেন৷ জার্মানিতেই তাঁদের পরিচয় হয়েছিল, তারপর বিয়ে৷ লেবাননের নাগরিকত্ব পেতে তেমন সমস্যা হয় নি৷ ফলে অনেক সুবিধাও হয়েছে৷ বার বার ভিসার জন্য আর আবেদন করতে হয় না, কাজের জন্য আলাদা করে অনুমতি চাইতে হয় না৷ গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নিয়েও ঝামেলা নেই৷ তাছাড়া স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে গেলেও লেবাননের নাগরিকত্বের প্রয়োজন৷ বিধবা হিসেবে মাসোহারাও পাওয়া যায়৷

Libanon Wer macht den ersten Schritt Mann oder Frau
লেবাননের সমাজ বেশ খোলামেলা বলে পরিচিতছবি: Fotolia/detailblick

এরিকা ও তাঁর স্বামী যখন পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন, তখন কেউ তাঁদের বলেন নি যে লেবাননের নাগরিকত্ব পেতে হলে জার্মানির নাগরিকত্ব হারাতে হবে৷ এরিকা আরবি ভাষা জানেন না, স্বামীর উপর ভরসা করে ফর্মে সই করেছেন৷ তারপর জার্মান দূতাবাসে গিয়ে নিজের সন্তানদের জন্য জার্মান পাসপোর্টের আবেদন করার সময় তিনি জানতে পারলেন যে, তিনি জার্মান নাগরিকত্ব খুইয়ে বসে আছেন৷ এটাই নিয়ম৷ অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেই জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়৷ আগে থেকে আবেদন জানালে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দু'টি পাসপোর্ট রাখার অনুমতি দেওয়া হয়৷ এরিকা সে সব কথা জানতেন না৷ কিন্তু সামান্য ভুলের কারণে এত বড় শাস্তি! ৫০ বছর বয়স্ক এই নারী আবেগ চেপে রাখতে পারছিলেন না৷

তিনি বললেন, ‘‘এমন অবস্থায় মনে হয়, জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো৷ মনে হয়, নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেললাম৷ এমন এক দেশে যেখানে এই পরিচয় বিশাল এক সুরক্ষা৷ প্রায়ই যুদ্ধ বেঁধে যায়৷ নারী হিসেবে জার্মানিতে যে অধিকার ভোগ করা যায়, তাও এখানে নেই৷ যদি কোনো কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে তো জার্মান নারী হিসেবে দেশে ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে৷ কোনোরকম সুরক্ষা ও অধিকার ছাড়া একটি দেশে থাকলে একেবারে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে৷''

এরিকার অবস্থা আরও অদ্ভুত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কারণ তাঁর লেবাননি বংশোদ্ভূত স্বামী ও সন্তানের জার্মান নাগরিকত্ব রয়েছে৷ অথচ তিনি নিজে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেও ভিসা ছাড়া নিজের দেশে প্রবেশ করতে পারেন না৷ আগের স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে এরিকার আরও দুই সন্তান রয়েছে৷ তাঁর মা ও ভাইবোনেরা জার্মানিতে থাকেন৷ নির্দিষ্ট সময়ে জার্মানিতে তাঁর অবসর ভাতা পাওয়ার কথা, যদিও তার অঙ্ক বেশি হবে না৷ নিজের ভুল শোধরাতে এরিকা জার্মান নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু সেই আবেদন নাকচ হয়ে গেছে৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এরিকার যথেষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেই৷ জার্মানিতে ফিরলে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কম৷ ফলে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতে পারে৷

এরিকার ঘটনা ব্যতিক্রম নয়৷ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে লেবাননে এমন ঘটনার কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই বটে, কিন্তু বৈরুতে প্রোটেস্ট্যান্ট সংগঠনের সভায় এমন অনেক জার্মান নারীর দেখা পাওয়া যায়, যাঁদের স্বামী মুসলিম বা খ্রিষ্টান লেবাননি৷ অনেকের আবার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে৷ তাঁদের কাহিনিও অনেকটা এরিকার মতো৷ তাঁদের মধ্যে কেউই জানতেন না যে, লেবাননের নাগরিকত্ব নিলে জার্মান নাগরিকত্ব হারাতে হয়৷ জার্মান কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রায়শ্চিত্তেরও সুযোগ দেয় নি৷ আবেদন নাকচ হয়ে গেছে৷ ৮০ বছর বয়স্কা এক বৃদ্ধার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনি জার্মান নাগরিকত্ব ফিরে পেলে রাষ্ট্রের কোনো বিশেষ লাভ হবে না৷ তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন বছর দুই-তিন জার্মানিতে বসবাস করেন এবং তারপর আবার আবেদনপত্র পেশ করেন৷ তখন হয়তো বিষয়টা অন্যভাবে দেখা যেতে পারে৷ কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে সেই নারীর পক্ষে জার্মানিতে বসবাস করা সম্ভব নয়৷

সরকার বা রাষ্ট্র এই সব নারীদের সহায়তা না করায় প্রোটেস্ট্যান্ট সংগঠন ও লেবাননে জার্মানভাষী নারীদের এক সংগঠন একটি উদ্যোগ শুরু করেছে৷ জার্মানিতে বিভিন্ন খ্রিষ্টান সংগঠনের সহায়তায় তারা সবাই মিলে জার্মান কর্তৃপক্ষের উপর একযোগে চাপ সৃষ্টি করছে৷ তাঁরা সবাই চান, এমন সব ঘটনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রথমেই যেন আবেদন নাকচ না করে দেয়৷ প্রতিটি আবেদন পরীক্ষা করে লেবাননে জার্মান নারীরা আবার জার্মান নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার একটা সুযোগ যেন পান৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য