1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

বিপর্যস্ত ধলেশ্বরীতে ডুবছে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা

সুলাইমান নিলয় ঢাকা
৮ জুলাই ২০২২

এবারের কোরবানির ঈদে দেশে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হবে বলে নানা মহল থেকে বলা হচ্ছে৷ এর বাইরে সারা বছর আরো প্রায় এক কোটি পশু জবাই হয়৷ তবে এসব পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি করা যায় না বিখ্যাত কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য৷ কেন?

https://p.dw.com/p/4DqAx
এবারের কোরবানির ঈদে দেশে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হবে বলে নানা মহল থেকে বলা হচ্ছে। এর বাইরে সারা বছর আরো প্রায় এক কোটি পশু জবাই হয়। তবে এসব পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি করা যায় না বিখ্যাত কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য। কেন?
সাভারে ট্যানারি শিল্পের কঠিন বর্জ্য মিশছে ধলেশ্বরী নদীতেছবি: Suliman Niloy/DW

এক সময় বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের খ্যাতি ছিল দুনিয়াজোড়া৷ এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর যে কয়েকটি খাতকে ঘিরে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল, তার অন্যতম ছিল চামড়া শিল্প৷ বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হওয়ার পশুর চামড়ার খ্যাতিও ছিল এই খাতে৷

তবে এর রয়েছে আরেকটি দিকও৷ এই চামড়া শিল্প দশকের পর দশক ধরে দূষণ করেছে বুড়িগঙ্গা৷ ২০১৭ সালে সাভারে স্থানান্তরের পর এখন দূষণ করছে দেশের অন্যতম স্বচ্ছ পানির নদীর ধলেশ্বরী৷ সাভারের হরিণধরা থেকে দূষণ এখনো বুড়িগঙ্গায় আসছে, পৌঁছে যাচ্ছে কালিগঙ্গা নদীতেও- এমন মত অনেকের৷

এ রকম পরিবেশ দূষণ আর অব্যবস্থাপনায় চামড়া যেন এখন এক মরা শিল্প৷ এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শিল্প এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারে৷ একে বাঁচাতে দরকার কঠোর সরকারি উদ্যোগ ও সমর্থন৷

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদের মতে, দেশের ট্যানারিগুলো লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পেলেই বর্তমান পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷ যাতে দেশে আসতে পারে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার৷

একটু পরিকল্পনা করলে কয়েক বছরের মধ্যে রপ্তানি আয় ছয়-সাত বিলিয়নে নেয়াও সম্ভব বলে মনে করেন তিনি৷

চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার তিনটি স্তর রয়েছে৷ ওয়েট ব্লু, ক্রাস্ট, ফিনিশড৷ ফিনিশড চামড়া থেকে তৈরি হয় চামড়াজাত নানা বাহারী পণ্য৷ এই তিন পর্যায়ে পরিবেশ রক্ষা করা হলে পাওয়া যায় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ৷ এই সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের চামড়া দিয়ে পণ্য তৈরির শর্ত দিয়ে দেয় পৃথিবীর বড় বড় ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো৷ বাংলাদেশে কয়েক শ ট্যানারি থাকলেও তিন পর্যায়ে সনদ রয়েছে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের৷

তাই ওই প্রতিষ্ঠানটির বাইরে দেশের অন্য কেউ ব্র্যান্ডেড কোম্পানির পণ্য তৈরি করতে চাইলে তাকে নির্ভর করতে হয় আমদানি করা চামড়ার উপর৷

মাছ বিক্রি করে বাঁচতো গরিব মানুষ: জালাল মেম্বার

ফিরে দেখা: চামড়া শিল্পের দূষণ

টাঙ্গাইলের সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী রণদাপ্রসাদ সাহার হাত ধরে গত শতাব্দীর ৪০ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জে এই অঞ্চলের প্রথম ট্যানারি স্থাপিত হয়৷ যা পরে সরিয়ে আনা হয় ঢাকার হাজারিবাগে৷ পাকিস্তান আমলে অবাঙালি কিছু ব্যবসায়ীর হাত ধরে সেই এলাকায় বিস্তার লাভ করে এই শিল্প৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যা আসে বাঙালিদের হাতে৷

দেশের এই শিল্পের বিরুদ্ধে দূষণের অভিযোগও বেশ পুরনো৷ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৪টি খাতের ৯০৩টি শিল্প কারখানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুষণকারী হিসাবে হাজারিবাগের সব ট্যানারিকে ‘লাল' ক্যাটাগরিভুক্ত করে৷

এরপর আট বছর ধরে এই দূষণ বন্ধে নানা চেষ্টা তদবির চলে৷ সেই সব চেষ্টা সফল না হওয়ায় ১৯৯৪ সালে এ বিষয়ে আদালতে রিট দায়ের করে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)৷ ওই রিটের রায় হয় ২০০১ সালের ১৫ মে৷

রায়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ছয় সপ্তাহ সময় দেয়া হয়৷ আট বছরেও সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০০৯ সালে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ৷ আদালত অবমাননার আদেশের পরও তেমন একটা কাজ হয়নি৷ বরং চলতে থাকে দূষণ৷

অবশেষে আরো ৮ বছর পর ২০১৭ সালে হাই কোর্টের আদেশের পর বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হলে মালিকরা ট্যানারি সরিয়ে আনে সাভারের ট্যানারি শিল্প নগরীতে৷

ট্যানারি শিল্প নগরীর পেছনের দিকে অনেকগুলো ড্রেন ও পাইপ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তরল বর্জ্য নির্গমন হয়৷
ট্যানারি শিল্প নগরীর পেছনের দিকে অনেকগুলো ড্রেন ও পাইপ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তরল বর্জ্য নির্গমন হয়৷ছবি: Suliman Niloy/DW

দূষণের কবলে ‘ধলেশ্বরীর স্বচ্ছ পানি’

রবীন্দ্রনাথের বাঁশি কবিতার নায়িকা বাস করতেন ধলেশ্বরীর তীরে৷ সেই কবিতায় রবি ঠাকুর বলেছিলেন, সেইখানে/বহি চলে ধলেশ্বরী,/তীরে তমালের ঘন ছায়া--- /আঙিনাতে/যে আছে অপেক্ষা করে,/তার পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর৷৷

এই ধলেশ্বরী এখন যমুনার শাখা নদী৷ বাংলাদেশের নদী বিষয়ক বহু গ্রন্থের প্রণেতা মাহবুব সিদ্দিকীর মতে, যমুনার উৎপত্তির আগে এক সময় ধলেশ্বরী ছিল গঙ্গার শাখা নদী৷ এখন এটি যমুনার শাখা নদী৷ তবে এই নদীর নির্মল পানির সুনাম প্রাচীন কাল থেকেই৷

মাহবুব সিদ্দিকী তার ‘আমাদের নদ-নদী’ নামক বইয়ে লিখেছেন, ‘‘পোড়াবাড়ি আর চারাবাড়ির চমচমের কথা শোনেননি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুব কমই রয়েছেন৷ দারুণ স্বাদের এই চমচম তৈরি করার মূল রহস্য কিন্তু ধলেশ্বরীর স্বচ্ছ পানি৷’’

তিনি লিখেছেন, ‘‘এখানকার গৃহস্থ ও চাষিগণ তাদের পালিত গাভীর জন্য ধলেশ্বরীর পানি ব্যবহার করতেন৷ সেই গাভীর দুধেই তৈরি হতো চমচম৷’’

এক জমিদার কন্যার বিয়ের গল্পও স্থানীয় মানুষদের মুখে মুখে৷ একবার কন্যার বিয়েতে মিষ্টি বানাতে সেই জমিদার পোড়াবাড়ির কারিগরদের কলকাতা নিয়ে গিয়েছিলেন৷ সেখানে ধলেশ্বরীর গাভীর দুধ না থাকায় দারুণ স্বাদের এই চমচম তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন একই কারিগররা৷

টাঙ্গাইলের এক সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, স্টিমার ঘাট না থাকায় পোড়াবাড়ি ও চারাবাড়ির পুরনো জৌলুস এখন আর নেই৷ তাই মিষ্টির দোকানগুলো চলে এসেছে টাঙ্গাইল শহরে৷ এখানকার চমচম তৈরিতে যে তিন দোকানের ব্যাপক সুনাম রয়েছে, তারা কিন্তু দুধ আনে সেই পোড়াবাড়ি-চারাবাড়ি থেকেই৷

টাঙাইলের পোড়াবাড়ি থেকে শত কিলোমিটার ভাটিতে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের মিল্কিহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গল্পের মত করে ধলেশ্বরীর হারিয়ে যাওয়া সেই স্বচ্ছ পানির গুণগান গাইছেন এলাকার মানুষ৷ আফসোস আর অভিসম্পাত করছেন দূষণকারীদের৷ এই মিল্কিহাটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরীর উল্টাপাশে সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় এখন রয়েছে বিসিক ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, ঢাকা৷

স্থানীয়রা বলছেন, ২০১৭ সালে ট্যানারি স্থানান্তরের পর বদলে যায় তাদের পরিচিত ধলেশ্বরী নদী৷

কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে পানিতে শরীর ভিজলে ঘা হয়ে যায়: শাহজালাল

কীভাবে দূষিত হয় ধলেশ্বরী?

ট্যানারি থেকে মূলত দুই ধরনের বর্জ্য উৎপাদিত হয়৷ তরল বর্জ্য এবং কঠিন বর্জ্য৷ তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ট্যানারি শিল্প নগরীতে স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা সিইটিপি৷

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন পদ্ধতি না থাকার কথা স্বীকার করলেও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহামেদ মনে করেন, সিইটিপি এখন ঠিকঠাকমতোই চলছে৷

যদিও এর আগে তরল বর্জ্য নিয়ে মোটামুটি তিন ধরনের অভিযোগ উঠেছিল৷ প্রথমত: যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হয়, সেটা সিইটিপির পরিশোধন সামর্থ্যের বাইরে৷ ফলে পুরোপুরি পরিশোধিত হওয়ার আগেই তা ছেড়ে দেয়া হতো নদীতে৷ দ্বিতীয়ত: কিছু তরল বর্জ্য আলাদাভাবে সিইটিপিতে পাঠাতে হয়৷ সেটা অনেক ট্যানারি মানছিল না৷ তৃতীয়ত: কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দিচ্ছিল৷ এই অভিযোগে গত মার্চে ৭টি ট্যানারিকে বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর৷

শাহিন আহামদের দাবি, এখন বর্ষায় কিছু বর্জ্য উপচে নদীতে গেলেও সাধারণভাবে তা যাবে না৷

আর এই সিইটিপির সীমানা প্রাচীরের বাইরে নদী তীরে গড়ে উঠেছে বিশাল এক ময়লার ভাগাড়, যেখানে কঠিন বর্জ্য ফেলছে ট্যানারিগুলো৷

তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ট্যানারি শিল্প নগরীতে স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা সিইটিপি
তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ট্যানারি শিল্প নগরীতে স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা সিইটিপিছবি: Suliman Niloy/DW

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্যানারি শিল্প নগরীর পেছনের দিকে অনেকগুলো ড্রেন ও পাইপ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তরল বর্জ্য নির্গমন হচ্ছে৷ ভরা বর্ষায়ও পাইপের সামনে নদীর পানি কালো হয়ে গেছে৷

অন্যদিকে যেখানে কঠিন বর্জ্য ফেলা হয়, সেখান থেকে কখনো উপচে, কখনো বৃষ্টির পানিতে ভেসে এ সব বর্জ্য নদীতে মিশছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷ কখনো কখনো কেউ কেউ সরাসরি নদীতে ফেলছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের কারো কারোর৷

কঠিন এ সব বর্জ্য যদি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে যেত, তাহলে এর সমাধান হয়ে যেত বলে মনে করছেন শাহিন আহামেদ৷

জীবিকা হারিয়েছে শত শত মানুষ

চামড়া শিল্প নগরীর উল্টোপাশে নদীর অপর পাড়ের গ্রাম মিল্কিহাটি এলাকার ইউপি সদস্য জালাল মেম্বার ডয়চে ভেলেকে বলেন, তার এলাকার শত শত মানুষ এই নদীতে মাছ ধরতো৷ কয়েক বছর আগেও রাত ভর মাছ ধরলেই দুই তিন হাজার টাকার মাছ পেতেন তারা৷ তিনি নিজেও ধরতেন৷

সারা বছর এই মাছ পাওয়া যেত উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি কাজসহ অন্য পেশায় জড়িত স্থানীয়রাও খাওয়ার জন্য বা মূল পেশার অবসরে বাজারে বিক্রির জন্য মাছ ধরতো৷ দূর দূরান্ত থেকে পেশাদার শত শত জেলেও আসতো এই এলাকায়৷ ট্যানারি আসার পর মাছ হারিয়ে যাওয়ায় দূরের সেই জেলেরা বিদায় নিয়েছে৷ পাশাপাশি এলাকার মানুষ বেকার হয়েছে৷

জালাল মেম্বার বলেন, ‘‘কাজ হারানো সেই মানুষেদের এখন আর কোনোভাবেই দৈনিক ২-৩ হাজার টাকা উপার্জনের সুযোগ নেই৷’’

নবাবগঞ্জের আলী মিয়ার সাথে সম্প্রতি দেখা হয় এই গ্রামে৷ পূর্বে এই নদীর মাছ কিনে তিনি বিক্রি করতেন দূর দূরান্তে৷ এখন পদ্মার মাছ এনে বিক্রি করেন এই এলাকায়৷

হারিয়ে যাওয়ার দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি জানান, সেই সময় তার আয় হতো দৈনিক হাজার দেড়েকের মত৷ এখন ৫শ-৭শ টাকা রোজগার করতেই কষ্ট হয়ে যায়৷

তিনি বলেন, ‘‘ধলেশ্বরীর মাছের ছিল ভিন্ন এক স্বাদ৷ মানুষ শুনলেই এই মাছ কিনে নিতো৷’’

এই গ্রামের কৃষক মো. শাহজালাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই নদীর পানি দিয়া মা-চাচীরা ডাল পাক করতো৷ তরকারি পাকাইতো৷ আমরা কাজ কাম কইরা নদীতে গোসল করতাম৷ ছেলে-মেয়েরা গোসল করতো, আনন্দ করতো৷ গৃহস্থরা গরু পালতো৷ সব গরু এখানে ঝাপাইতো (গোসল করতো)৷’’

"এখন পয়সাওয়ালারা মোটরের পানিতে গোসল করায়, যাদের মোটর নাই, তারা টিউবওয়েলের পানি চেপে তুলে গরু গোসল করায়৷”

তিনি বলেন, ‘‘এটা মাছের খনি ছিল৷ এখন তো নদী আরো গভীর হয়ে গেছে৷ ট্যানারি করার সময় মাটি তুলছে৷ মাছ এখনো আছে৷ কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে মাছ নিজেই (দূষণের কারণে মরে) ভেসে উঠবে৷ মরা সেই মাছ তুলে খেলেও অসুস্থ হয়ে যাবে৷’’

আমরা এখন বড় বড় কোম্পানির অর্ডার পাচ্ছি: মোখলেসুর রহমান

এলডাব্লিউজি'র সনদ ও ব্যবসায়ীদের আফসোস

বাংলাদেশে একমাত্র ট্যানারি হিসাবে চট্টগ্রামের রিফ লেদারের রয়েছে ওয়েট ব্লু থেকে ফিনিশড পর্যন্ত তিন পর্যায়ে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ৷ গত বছরের জুনে এই সনদ পায় প্রতিষ্ঠানটি৷ সনদ পাওয়ার পর বদলে গেছে তাদের ব্যবসা৷

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, সনদ পাওয়ার পর থেকেই বড় বড় কোম্পানির অর্ডার পেতে শুরু করেছেন তারা৷

পাশাপাশি দেশের যে সব প্রতিষ্ঠান এতদিন আমদানি করা চামড়া দিয়ে ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানের পণ্য তৈরি করতো, তাদের অনেকে এখন রিফের কাছ থেকে চামড়া কিনছে বলে জানান তিনি৷

রিফের সনদপ্রাপ্তির পেছনে রয়েছে তাদের নিজস্ব ইটিপি, যা স্থাপনে খরচ হয়েছে তিন কোটি টাকার মতো৷ বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানই এটি তৈরিতে কারিগরি কাজ করেছে৷

চামড়াজাত পণ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ড অ্যাপেক্স ফুটওয়ার৷ এর উদ্যোক্তা মনজুরে এলাহী ৭০-এর দশকে একটি ট্যানারি তৈরি করেছিলেন৷ সেই ট্যানারিটি এখন সাভার ট্যানারি শিল্প নগরীতে রয়েছে৷

এই অ্যাপেক্স ট্যানারির নির্বাহী পরিচালক এম এ মাজেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা ২০১৭ সালেই নিজেরা আলাদা ইটিপি করতে চেয়েছিলেন৷ নানা জটিলতায় সেই ইটিপি তারা এখনো করতে পারেননি৷ ফলে কমে গেছে তাদের ব্যবসা৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরাসহ আরো কয়েকটা প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইটিপি করতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু অন্য ট্যানারিগুলো এতে আপত্তি করে যে, আমরা কেন্দ্রীয় ইটিপি থেকে বেরিয়ে গেলে তারা সেখানকার খরচ চালাতে পারবে না৷ তখন আমরা বলেছিলাম, নিজেরা ইটিপি বানালেও আমরা কেন্দ্রীয় ইটিপির খরচ চালিয়ে যাবো৷’’

এরপরও এখনো ইটিপি করা সম্ভব হয়নি বলে আফসোস করেন তিনি৷

তবে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহামেদ মনে করেন, বাংলাদেশে অনেকেরই এলডাব্লিউজির সনদ পাওয়ার যোগ্যতা আছে৷ তারা দূষণের সাথে জড়িত নয়৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখানে সবগুলো ট্যানারিকে এক করে ফেলছে, যারা অন্তত ভালো করছে, তাদেরকে পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া উচিত, যাতে তারা এলডাব্লিউজির সনদের জন্য আবেদন করতে পারে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ভারতে সরকারের সহযোগিতার কারণে আমাদের চেয়ে খারাপ ট্যানারিও এলডাব্লিউজির সনদ পেয়ে গেছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য