ভারতে বিপত্তারণ রেডিও
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭পুরনো রেডিও-র দিন যায় যায়৷ ইথার তরঙ্গের নতুন তারকা এফএম রেডিও৷ ছেলে-বুড়ো এখন তাতেই মত্ত, কারণ এফএম রেডিওতে সারাদিন গান শোনা যায়৷ যিনি চাষ করেন, তাঁর হাল-লাঙলের মাথায় বসানো থাকে এফএম রেডিও, যিনি বাজারে সবজি বেচেন, যিনি রিকশা চালান, তাঁরা সবাই এফএম রেডিওর ভক্ত৷ এমনকি নদীতে, সমুদ্রে মাছ ধরতে যান যেসব মৎস্যজীবী, তাঁদের ট্রলারেও এফএম রেডিও এখন আবশ্যিক সরঞ্জাম৷ সেই কথা মাথায় রেখেই এফএম রেডিওতেও এখন থেকে আবহাওযার খবর সম্প্রচার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হ্যাম রেডিও অপারেটররা৷ সেই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর৷ ভারতে প্রসার ভারতী, অর্থাৎ তথ্য-সম্প্রচার আইন অনুযায়ী বেসরকারি রেডিওতে কোনো খবর পরিবেশন করা যায় না৷ সেই অধিকার একমাত্র সরকারি বেতার সংস্থা আকাশবাণীর৷ এই প্রেক্ষিতে এফএম চ্যানেলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচার করা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে, যাতে বিশেষত উপকৃত হবেন মৎস্যজীবীরা৷
হ্যাম রেডিও অপারেটরদের অনুরোধে আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী৷ তা হলো গভীর সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যান যেসব ধীবররা, তাঁদের কাছে হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও থাকা বাধ্যতামূলক করা৷ যাতে দূর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েও তাঁরা যোগাযোগ রাখতে পারেন উপকূলের সঙ্গে৷ এবং এমন এইচএফ রেডিও, যা থেকে সমুদ্রে তাঁদের অবস্থানও নিশ্চিত করা যাবে গ্লোবাল পজিশনিং স্যাটেলাইটের সাহায্যে৷ এর ফলে একাধিক উপকার হবে৷ প্রথমত, এই মৎস্যজীবীরা কোনো বিপদে পড়লে, তাঁদের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়া উপকূল রক্ষী বাহিনীর পক্ষে অনেক সহজ হবে৷ দ্বিতীয়ত, এর ফলে দেশের জলসীমা সুরক্ষিত রাখার একটা পরোক্ষ বন্দোবস্ত হবে৷ এক তো ধীবররাই নজরদারির দায়িত্ব অনেকটা সামলাতে পারবেন, যেহেতু ভারত সরকার মাছ ধরার সীমানা এখন অনেকটাই সম্প্রসারিত করে দিয়েছে৷ আন্তর্জাতিক জলসীমা সংলগ্ন সেইসব অঞ্চলে ধীবররা থাকলে কোনো শত্রুপক্ষীয় জলযান চট করে ভারতের সীমানায় ঢুকে আসতে পারবে না৷ চোরাচালানের সমস্যারও কিছুটা সুরাহা হবে৷ তেমনই, মাছ ধরার ট্রলারগুলির ভৌগোলিক অবস্থান নিশ্চিত হলে, উপকূল রক্ষী বাহিনীকে ভুয়ো খবর দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে, সেই ফাঁকে জলসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও কমে আসবে৷
পশ্চিমবঙ্গের অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সভাপতি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে জানালেন, উপকূল রক্ষী বাহিনীকে তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছেন, অর্থের সাশ্রয় করতে এই রেডিও তৈরি করতে এবং ব্যবহার করতে তাঁরাই হাতে কলমে তালিম দেবেন মৎস্যজীবীদের৷ বাণিজ্যিক উদ্দেশে নয়, সমাজসেবা হিসেবেই তাঁরা এ কাজ করবেন৷ এবং এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেবেন, যাতে দশজন মৎস্যজীবীকে শেখালে, তাঁরাই আরও দশজনকে শিখিয়ে দিতে পারেন৷