1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদ্যুৎ নেই, জলের জন্য হাহাকার, বিক্ষোভ

২৫ মে ২০২০

আমফানের পর ১১০ ঘণ্টা কেটে গেলেও কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিশাল এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন। চলছে পানীয় জলের জন্য হাহাকার। 

https://p.dw.com/p/3ci3G
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Das

কলকাতায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে আছে সিইএসসি এবং জেলাগুলিতে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ। এই দুই সংস্থার কর্মীদের চেষ্টা, প্রশাসনের ব্যাপক চাপ সত্ত্বেও অনেক এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। বিদ্যুৎ না থাকা মানে জল নেই। এই গরমে ফ্যানও চলছে না। টেলিফোন সংযোগও অনেক এলাকায় বিচ্ছিন্ন। অনেক বাড়িতে বয়স্ক মানুষ ও রোগীরা আছেন, তাঁদের প্রভূত কষ্ট হচ্ছে। তাই বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হচ্ছে। কলকাতার পাঁচটি এলাকায় পড়ে থাকা গাছ কাটার জন্য এনডিআরএফ বা দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ বাহিনী ছাড়াও সেনা নেমেছে। সেনার সঙ্গে সিইএসসি-র লোকেরাও বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। তাঁদের নিয়ে রীতিমতো টানাটানি শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। সকলেই তাঁদের নিজেদের এলাকায় নিয়ে যেতে চান। সিইএসসি-র গাড়ি গেলে তা মুহূর্তে ঘেরাও হয়ে যাচ্ছে। করোনা-লকডাউন, সামাজিক দূরত্বের কেউ আর তোয়াক্কা করছেন না।  বিশেষ করে কলকাতার লোকের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বেহালায় চারদিন পরে সিইএসসির গাড়ি রবিবার যাওয়ার পরেই লোকে তা ঘেরাও করে। বৃদ্ধ থেকে তরুণ, সকলেই সেই দলে ছিলেন। কাজ শেষ না করলে ঘেরাও সরবে না বলে তাঁরা জানিয়ে দেন। আমফানের তাণ্ডবে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। স্টেশন এবং কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আসলে আমফান এমন তাণ্ডব চালিয়েছে যে, পরিস্থিতি প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। শুধু কলকাতাতেই গাছ পড়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। অধিকাংশ জায়গায় ইলেকট্রিকের তার জড়িয়ে গাছ পড়েছে। কোথাও ট্রাম লাইনের তার, ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ে পড়েছে। সব ঠিক করতে ্নেকটাই সময় লাগার কথা। লাগছেও। তার ওপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, করোনার জন্য প্রচুর কর্মী হয় ছুটিতে আছেন, নয়তো বাড়ি চলে গিয়েছেন, আর আসতে পারেননি। প্রতিটি বিভাগে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ কর্মী কম।

আর পানীয় জল নিয়ে হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। মুখ্যমন্ত্রীর হিসাব, এখানে ২২ লাখ বাড়ি পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ভেঙেছে। লোকেরা আশ্রয়শিবিরে। প্রশাসন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মাত্র ২২ হাজার জলের পাউচ দিয়েছে। চিড়ে, মুড়ির মতো শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে লোকেদের। অনেক জায়গায় রান্না করা খাবারও দেওয়া হয়েছে। যেহেতু প্রায় সব বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, তাই সর্বত্র নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। পুকুরে নোনা জল ঢোকায় সব মাছ মরে গিয়েছে। সেই জল ছেঁচে ফেলে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বহু এলাকায় টিউবওয়েলও অচল। তাই পানীয় জলের জন্য হাহাকার বেড়েছে। শুকনো চিড়ে ভিজিয়ে খেতেও জল পাচ্ছেন না অনেকে। পরিস্থিতি ভয়াবহ। জমিতে নোনা জল ঢুকে যাওয়ায় তাতে আপাতত চাষ সম্ভব নয়। 

তবে সিইএসসি যে অতি দ্রুত কলকাতায় বিদ্যুৎ ফেরাতে পারছে না, তার দায় মুখ্যমন্ত্রী নেননি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বাম আমলে সিইএসসি-কে কলকাতায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। তাঁরা দেননি। এরপর কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী প্রশ্ন করেছেন, ''দিদি তো নয় বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। আগে ভুল হয়ে থাকলে তিনি কেন ঠিক করলেন না?'' সিইএসসির বিরুদ্ধে লোকেদের অভিযোগ, তারা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কর্মী নিয়ে কাজ করে এবং তাদের বিদ্যুতের মাসুলের হার চড়া। সিইএসসি অবশ্য দাবি করেছে, তাঁদের ৩৩ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩০ লাখের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে।

এরই মধ্যে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ আমফান দুর্গত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যেতে গিয়েছিলেন, পুলিশ তাঁকে যেতে দেয়নি। তা নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ দিলীপ। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রচুর গর্জন করে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য যেন সরাসরি গরিবদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারকে নয়। অধীরও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে ঢালাও অর্থ সাহায্য দিন। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র মাত্র এক হাজার কোটি আগাম হিসাবে দিয়েছে। রাজ্যে আমফানের ফলে ক্ষতি হয়েছে অন্তত এক লাখ কোটি টাকা। ফলে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সাহায্যের পরিমাণ যৎসামান্য।

এই সব ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমফান নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিও আগের মতোই চলছে। তবে এই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের বাইরে অন্য ছবিও আছে। সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর আশি বছর বয়সেও মাথায় গামছা বেঁধে স্থানীয় লোক ও পঞ্চেয়েতকে নিয়ে বাঁধ সারাই করা শুরু করে দিয়েছেন। সারি বেঁধে লোকে দাঁড়িয়ে। মাটির চাঙড় কেটে তা দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, আর কান্তিবাবু তদারকি করছেন, এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

 জিএইচ/এসজি(এএনআই, আবাপ)