বিদেশ নীতি এবং নিরাপত্তা নিয়ে জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭জার্মানি যেহেতু আন্তর্জাতিক স্তরে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে, তাই আগামী নির্বাচনে বিদেশ নীতি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা পাচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব৷ উত্তর কোরিয়া থেকে ন্যাটো অবধি নানা বৈশ্বিক ইস্যুতে ছয়টি দলের অবস্থান থাকছে এ লেখায়৷
সামাজিক গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)/খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিএসইউ)
ন্যাটো: সিডিইউ/সিএসইউ এই সামরিক জোটকে সমর্থন করে এমনকি এই জোটে জার্মানির অন্তর্ভূক্তির কৃতিত্বও দাবি করে৷ ১৯৫৫ সালে কনরাড আডেনাওয়ার চ্যান্সেলর থাকাকালে ন্যাটোতে যোগ দেয় জার্মানি৷
ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক: সিডিইউ/সিএসইউ ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ককে ইতিবাচক চোখে দেখে৷ তাদের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ‘কেন্দ্রীয় সঙ্গী'৷ তবে মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর দু'পারের মধ্যে সম্পর্ক কঠিন হয়ে গেছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর পরিষ্কারভাবেই বলেছেন, ইউরোপ আর আগের মতো ওয়াশিংটনের উপর আস্থা রাখতে পারছে না৷
তুরস্ক: সিডিইউ/সিএসইউ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর করার পক্ষে হলেও সেদেশের ইইউতে অন্তর্ভূক্তিকে কখনো সমর্থন করেনি৷ আর বর্তমানে তুরস্কের প্রসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানতাঁর দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যা করছেন এবং জার্মান নাগরিকদের গ্রেপ্তার নিয়ে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটেছে৷ ম্যার্কেল সম্প্রতি তুরস্ককে ইইউতে অন্তর্ভূক্তির সকল আলোচনা সমাপ্তের আহ্বান জানিয়েছেন৷
উত্তর কোরিয়া: সিডিইউ/সিএসইউ মনে করে, নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে একসময় বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে উত্তর কোরিয়া এবং কোরীয় পেনিনসুলায় শান্তি ফিরে আসবে৷ দলটি উত্তর কোরিয়ার তেল শিল্পের এবং অতিথি শ্রমিকদের উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে৷
সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)
ন্যাটো: শান্তিরক্ষা মিশনে, সংকট প্রতিরোধে এবং সংঘাত ব্যবস্থাপনায় সেনা মোতায়েনের পক্ষে এসপিডি৷ তবে তা ন্যাটো এবং জাতিসংঘের কাঠামোর মধ্যে করতে চায় দলটি৷
ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক: এসপিডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী মনে করলেও শ্রমিকদের অধিকার এবং জলবায়ু সুরক্ষার মতো ইস্যুতে মার্কিন নীতির বিরোধী৷
তুরস্ক: এসপিডি নীতিগতভাবে সবসময় ইইউতে তুরস্কের অন্তর্ভূক্তির চেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছে৷ তবে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির পর এই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন দলটির চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস৷
উত্তর কোরিয়া: চলতি বছরের নির্বাচনি প্রচারণায় উত্তর কোরিয়াকে গুরুত্ব দেয়নি এসপিডি৷ তবে সেদেশের উপর সামরিক হামলা হলে তাতে জার্মান সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণের পক্ষে নয় দলটি৷
বাম দল
ন্যাটো: এই জোটকে নেতিবাচকভাবে দেখে বাম দল৷ এটি জার্মানির একমাত্র দল যারা ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক জোট গড়ার পক্ষে৷
ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক: বাম দল জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের সমালোচক এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের সমর্থক৷
তুরস্ক: অভিবাসন ইস্যুতে কোন স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে বাম দল৷ ফলে ইইউ-র সঙ্গে তুরস্কের বর্তমান যে অভিবাসন চুক্তি রয়েছে, তা বাতিলের পক্ষে আন্দোলন করছে দলটি৷
উত্তর কোরিয়া: বাম দল কিম জন উন-এর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলেও সেখানে সংকটের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে৷
সবুজ দল
ন্যাটো: একসময় ন্যাটোর বিরোধী হলেও সবুজ দল বর্তমানে যৌথ প্রতিরক্ষা পদ্ধতি হিসেবে এই জোটকে সমর্থন করে৷ তবে ট্রাম্প যাতে এই জোটকে এটি গড়ার মূল উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে সেব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি দেয়ার পক্ষে তারা৷
ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক: প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে সবুজ দল৷
তুরস্ক: সবুজ দল সামগ্রিকভাবে তুরস্ককে ইইউতে অন্তর্ভূক্তির পক্ষে হলেও সদস্যপদ পাওয়ার যে নীতিমালা তা দলটি মানছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷
উত্তর কোরিয়া: উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে সবুজ দলের কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নেই৷ তবে বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার পক্ষে রয়েছে দলটি৷
মুক্তগণতন্ত্রী দল (এফডিপি)
ন্যাটো: সামরিক জোট ন্যাটোকে পুরোপুরি সমর্থন করে এফডিপি৷
ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক: মার্কিনিদের সঙ্গে সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে দেখে এফডিপি এবং মুক্ত বাণিজ্য ইস্যুতে সেদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো উন্নয়নের পক্ষ জোটটি৷
তুরস্ক: যতদিন এর্দোয়ান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট থাকবেন, ততদিন সেদেশকে ইইউতে অন্তর্ভূক্তির সব ধরনের আলোচনার বিপক্ষে এফডিপি৷
উত্তর কোরিয়া: এফডিপির এক্ষেত্রে কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নেই৷
ন্যাটো: ন্যাটোর বর্তমান কাঠামোকে নেতিবাচকভাবে দেখে এএফডি৷ দলটির কিছু সদস্য সামরিক জোটটিতে জার্মানির সদস্যপদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে৷
ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক: এএফডি হচ্ছে একমাত্র জার্মান রাজনৈতিক দল যারা ব্রেক্সিটকে সমর্থন জানিয়েছে৷ দলটি মুক্ত বাণিজ্যেরও বিপক্ষে৷
তুরস্ক: ইইউতে তুরস্কের অন্তর্ভূক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে এএফডি৷ সেদেশের সঙ্গে ইইউ-র থাকা অভিবাসন চুক্তিও বাতিলের পক্ষে দলটি৷
উত্তর কোরিয়া: এএফডি মনে করে দেশটির উপর চাপানো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় কাজ হচ্ছে৷ তবে এই নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়ানোর পক্ষে দলটি৷
লুইস স্যান্ডার্স ফোর/ডেভিড মার্টিন