বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' শব্দটিই একটি সমস্যা৷ এটি বলতে কী বোঝায়? এটি আসলে সরকারি বাহিনীর হত্যা কার্যক্রমকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি উপায়৷ নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এগুলো এমন ধরনের হত্যাকাণ্ড, মন্ত্রীরা যেগুলো অস্বীকার করতে পারে৷ আসলে সরকারের জন্য এই ধরনের অভিযান, তাদের বিরুদ্ধবাদীদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সুবিধাজনক উপায়৷ কারণ অনেক সময় এই ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো অভিযোগ আনা যায় না৷
বিশ্বের অনেক দেশেই, বিশেষ করে যেসব দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে এবং যেসব দেশে ব্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় ও যেখানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংঘাতের সমাধান করা যায়না৷ ইরাক, মধ্য অ্যামেরিকা, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, ফিলিপাইন্স এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এই ধরনের অবস্থা বিরাজ করে৷
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য ব়্যাবকে বেশি দায়ী করা হয়৷ ইসলামি জঙ্গি দমনে দশ বছরেরও বেশি কিছু সময় আগে এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন সম্প্রতি ব়্যাবকে বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছে৷ ২০১১ সালে প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদন বলছে ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০০ লোকের মৃত্যুর জন্য ব়্যাব দায়ী৷ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৪ সালে ব়্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তিনিও এখন ব়্যাবের বিলুপ্তি চাইছেন৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়, যেটি বিএনপি বয়কট করেছিল, সেসময় ব়্যাবের হাতে ১১ জন বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছিল৷
কিন্তু এ ধরনের আহ্বানের প্রতি সাড়া না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ইসলামি জঙ্গি দমনে ব়্যাবের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে৷ তবে নাগরিকদের শান্ত করতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘‘ব়্যাব কর্মকর্তারা আইন ভঙ্গ করলে তাঁদের শাস্তি দেয়া হবে৷ কিন্তু অতীতে ব়্যাব যেভাবে কাজ করেছে তা থেকে আমরা ধারণা করতে পারি যে, ব়্যাবের কোনো কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করার মতো কোনো প্রমাণ উপস্থিত করা যাবে না এবং কোনো সাক্ষীও পাওয়া যাবে না৷''
তাহলে কীভাবে এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যায়? সেটি করতে সরকারের উপর সব ধরনের চাপ দিয়ে যেতে হবে৷ জাতিসংঘ নিয়মিতভাবে এই বিষয়ে চাপ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না৷ অতীতেও দেখা গেছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলা দেশগুলোর সরকার আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোও এখন শক্তভাবে কোনো দেশকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানাতে পারবেনা, কেননা তারা এখন নিজেরাই বিদেশের মাটিতে ইসলামি জঙ্গিদের দমনে একই পন্থা অবলম্বন করছে৷
প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে নীচে মন্তব্যের ঘরে জানান৷